গণদুশমনদের তৎপরতা দমনে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে- সৈয়দ নজরুল ইসলাম
চট্টগ্রাম। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম আজ এখানে বলেন চোরাকারবারীদের সমস্ত তৎপরতা বন্ধ করার জন্য রক্ষীবাহিনী এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে যদি তারা কোনো বাধার সম্মুখীন হোন তবে চোরাচালানকারীদের গুলি করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, জনগণের দুঃখ-দুর্দশাকে বেসাতি করে যারা চোরাচালানী, মজুতদারী এবং কালোবাজারী করছে তাদের সমস্ত তৎপরতা বন্ধ করে দেয়ার জন্য সরকার সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম আজ এখানে লাল দিঘীর ময়দানে অনুষ্টিত এক বিরাট জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সমাজ বিরোধীদের তৎপরতা বন্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু তাকে প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, সমাজ বিরোধীদের দমনে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন করবেন না। জনগণকে বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার জনগণকে এইসব সমাজ বিরোধীদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে এবং তাদের দমনে সরকার জানিয়েছেন। তিনি বলেন বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করতে সরকার সম্পূর্ণ সজাগ। এসব সমস্যা বর্তমান সরকারের সৃষ্ট নয়। তা সত্ত্বেও এসব সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দাবিদাওয়া পেশ বা সমস্যা সমাধান হবে না। কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদন বাড়িয়েই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, চোরাচালানী বন্ধ করার জন্য সীমান্ত এলাকায় কড়া প্রহরীর ব্যবস্থা ছাড়াও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করছেন। ভারত সরকার বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে চোরাচালানী বন্ধের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার ভাষণে বলেন, জনগণের সক্রিয় সমর্থন ছাড়া সরকারের কোনো কর্মসূচিই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন দেশের নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়েও বর্তমান সরকার যা কিছু করেছে তা খুবই উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন গত ৭ মাসের মধ্যে সরকার ৩ কোটি মানুষের পুনর্বাসন, খাদ্যঘাটতি এবং আহার যোগানের যে সিদ্ধান্ত দেখিয়েছেন তার নজির ইতিহাসে নেই। দেশে খাদ্য ঘাটতি পুরুণের জন্য সরকার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আনার ব্যবস্থা করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ যাবৎ আমরা ৩ লাখ টন চাল এবং ১০ লাখ টন। গম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। এগুলো খুব শীগগিরই বাংলাদেশে এসে পৌছবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিল্প জাতীয়করণের পর শ্রমিকদের উপরে এসেছে এক বিরাট দায়িত্ব। উৎপাদন না বাড়ালে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তাই তিনি তাদের প্রথমে কঠোর শ্রম করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে এবং পরে তাদের দাবি দাওয়া পেশ করতে বলেছেন।
এম আর সিদ্দিকী : এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, খাদ্যের চাহিদা মেটানোর সাথে সাথে পণ্যদ্রব্যের চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টির চীফ হুইপ জনাব শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনও জনসভায় ভাষণ দেন।১
রেফারেন্স: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ