You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.08.26 | বাংলাদেশের সদস্যপদ দীর্ঘদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না- রাষ্ট্রপ্রধান | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের সদস্যপদ দীর্ঘদিন ঠেকিয়ে রাখা যাবে না- রাষ্ট্রপ্রধান

দিনাজপুর। রাষ্ট্রপ্রধান বিচার প্রতি আবু সাঈদ চৌধুরী আজ এখানে বলেন যে, বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে এবং কেউ আমাদেরকে দীর্ঘ কাল ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। একদিনের সফরে আজ এখানে আগমনের পরপরই রাষ্ট্রপ্রধান বড় ময়দানে এক সম্বর্ধনা সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, এই বার একটি মাত্র দেশে বিরোধীতার জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হতে পারে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যেমন জাতিসংঘে চীনের অন্তর্ভুক্তিকে দীর্ঘকাল ঠেকিয়ে রাখতে পারে নাই, চীনও ঠিক তেমনি বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিকে দীর্ঘকাল ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। রাষ্ট্রপ্রধান জনগণকে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। নিজেদেরকে একটা সজীব জাতি হিসাবে প্রমাণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা যদি নিজেদেরকে সজীব জাতির উপযোগী প্রমাণিত করতে পারি, তা হলে আমাদের জাতিসংঘ তুক্তির কোনো বাধাই টিকতে পারবে না।
খাদ্য সমস্যা : দেশের খাদ্য সমস্যার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন যে, এ ব্যাপারে সরকার সচেতন। আছেন এবং তার সমাধান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, খাদ্য সমস্যাই যে দেশের জনগণের প্রধান সমস্যা এ ব্যাপারে কারও দ্বিমত নাই। চোরাচালান বন্ধ করার ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতার করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের চোরাচালান চলতে দিলেই জাতির জীবনী শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে।
বার এসোসিয়েশনে : রাষ্ট্রপ্রধান বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আজ স্থানীয় আইনজীবীদের আশ্বাস দেন যে, ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রের সমাজতন্ত্রের সঙ্গে সকল মৌলিক ও গৃহীত মানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে। স্থানীয় বার এসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণদানকালে তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন যে, আল্লাহর ইচ্ছায় শাসনতন্ত্র জনগণকে আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।”
চীন শত্রুর ভূমিকা পালন করছে
বাংলদেশের জাতিসংঘভুক্তির প্রশ্নে নবরব্ধ ভেটো ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে চীন আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি শত্রুর ভূমিকাই পালন করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। জনাব সামাদ বলেন, সরকার বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনা নীতি পর্যবেক্ষণ করে আসছিলেন। কাজেই, তার সর্বশেষ ভূমিকায় বিস্মিত হন নাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বাংলাদেশের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যায় বিস্মিত হয়নি। তার এই ভূমিকার পরিণামে এখনও পর্যন্ত এদেশের মানুষের ভূগতে হচ্ছে। এই উপমহাদেশের শান্তি ও স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে ঘৃণা ও যুদ্ধংদেহী মনোভাবের সৃষ্টি করে নিপীড়িত জনগণের মুক্তিদাতার চীন তার আসল দাবিদার চীন তার আসল স্বরূপ বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন যে, ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে চীন জাতিসংঘ সনদের নীতি ও উদ্দেশ্যের মূলে কুঠারাঘাত করেছে এবং তার বিশ্ব জনীন বৈশিষ্ট্যকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ চীনের জাতিসংঘভুক্তিকে সাধর অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। অথচ ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে সেই বাংলাদেশকে চীনা ভেটোর প্রথম শিকার হতে হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য না, ঘৃণা ও যুদ্ধবাজ মনোভাবের প্রবক্তা হিসাবে বিশ্ব দৃশ্যপটে চীনের আবির্ভাব ঘটেছে। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বন্ধুত্বের আদর্শে বিশ্বাসী। এতদসত্ত্বেও আমরা চীনের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের আগ্রহী। এবং এই বন্ধুত্বের প্রস্তাবটি আমরা প্রত্যাহার করতে চাই না। নিরাপত্তা পরিষদে অন্যান্য সদস্যদের ভূমিকা সন্তোষ প্রকাশ করে জনাব সামাদ বলেন, তার ফলে বাংলাদেশের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমতের মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

রেফারেন্স: ২৬ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ