You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.08.06 | বিভেদ ও হানাহানি নয় আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ দূর করুন- তাজউদ্দিন আহমদ | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

বিভেদ ও হানাহানি নয় আলোচনার মাধ্যমে মতবিরোধ দূর করুন- তাজউদ্দিন আহমদ

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেয়ার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রবিবার ঢাকা হতে চার মাইল দূরে মাতুয়াইলে ছাত্রলীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দানকালে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে সমর্থন না করে চীনের পক্ষে ভুল ও অন্যায় হয়েছে। কিন্তু তদসত্ত্বেও আমরা চীনের নিন্দা করছি না। জনাব তাজউদ্দিন আরও বলেন যে, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি জোটনিরপেক্ষ।
পুঁজিবাদী শিবির হতে সাহায্য গ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই সাহায্য যতই কম নেয়া যায় ততই মঙ্গল। আমরা কেবল সেই পরিমাণ সাহায্য গ্রহণ করবো যা আমরা হজম করতে পারব। জনাব আহমদ ন্যূনতম ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়ন রাতারাতি ঘটে যাবে, এমন চিন্তা করা ঠিক নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটকে একটি উন্নয়ন বাজেট বলে গণ্য করা হয় নাই। বরং এটা হলো ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনমুখী বাজেট।
অর্থমন্ত্রী দৈনন্দিন জীবনে ব্যয় সংকোচনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতীয় সমস্যাকে বিচার করবার সময় অধিকার ও দায়িত্ববোধ একই সঙ্গে প্রদর্শন করতে হবে। সত্যিকার অর্থে একটি আধুনিক সভ্যসমাজ গড়ে তুলতে হলে ধৈর্যের প্রয়োজন।
অর্থমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয়া জনসাধারণের উচিত নয়। পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, সকল অপরাধীকেই আইন রক্ষাকারী সংস্থার হাতে তুলে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের সোনার সন্তানদের মধ্যে স্পষ্ট বিভেদ প্রসঙ্গে জনাব আহমদ বলেন, তাদের এই দ্বিধাবিভক্ত আমার নিকট বেদনাদায়ক। মন্ত্রী বলেন, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন, আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার মতোবিরোধ দূর করুন। এক অগণতান্ত্রিক উপায়ে পরস্পরের সাথে হানাহানি করার কোনো অর্থ নেই। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে প্রত্যেককেই আত্মবিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।”
জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তি সংগ্রামে আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়েছিলাম। আমরা কেবল তার নির্দেশকেই কার্যে পরিণত করেছি।’ তিনি বলেন অস্থায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার। আমরা বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হয়ে সরকারের দায়িত্ব পালন করেছি। বঙ্গবন্ধুর পায়ের খড়মকে চেয়ারে রেখে আমরা সেই সরকার চালিয়েছি।১৯

রেফারেন্স: ৬ আগস্ট ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ