বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীদের নির্মূল করা হবে
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সভাপতি জনাব কোরবান আলী ঘোষণা করেন যে, যেসব অশুভ শক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জনগণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে আওয়ামী লীগ তাদের নির্মূল করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জনাব কোরবান আলী শনিবার বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে এই ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান জনাব আবদুর রাজ্জাকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব গাজী গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আবদুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য জনাব তোফায়েল আহমেদ, ও মিসেস ফরিদা রহমান প্রমুখ। জনাব কোরবান আলী তার সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন যে, নুরুল আমিনের আমল থেকে শুরু করে ইয়াহিয়া খানের আমল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কর্মীরা সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেছে। গত ২৪ বছর ধরে উপনিবেশবাদী শোষণ শাসনের বিরুদ্ধে সগ্রাম করে তারা স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তারা আশা করেছিল যে, স্বাধীনতার পর দেশে নির্যাতন নিপীড়ন থাকবে না। তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে, কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বিদেশি এজেন্টদের টাকা খেয়ে শান্তিকামী আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন যে, এসব শক্তি বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলার স্বাধীনতাকে বানচাল করার চেষ্টা করছে। জনাব কোরবান আলী বলেন যে, বিগত স্বাধীনতা আন্দোলনে ১৭ হাজার আওয়ামী লীগ কর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। এরপর স্বাধীনতা উত্তর বাংলায় এযাবৎ মোট ৮৪ জন আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কর্মীদের রক্তে ঢাকার রাজপথ লাল হচ্ছে। জনাব কোরবান আলী আওয়ামী লীগ কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, অতীতে যেমন করে আপনারা সব রকম ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছিলেন, অদূর ভবিষ্যতে মুজিববাদ বিরোধী চক্র এবং বাংলার স্বাধীনতা বানচালকারী অশুভ ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার জন্য আপনারা সর্বদাই প্রস্তুত থাকবেন। জনাব আলী বলেন যে, বাংলার যেখানেই বঙ্গবন্ধু ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে স্লোগান উচ্চারিত হবে আমরা সেইখান জ্বালিয়ে দেবো পুড়িয়ে দেবো। পরিশেষে জনাব কোরবান আলী হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, বাংলার মানুষ বঙ্গবন্ধু ও মুজিববাদের বিরুদ্ধে কোনো আলোচনা ও সমালোচনা বরদাস্ত করবে না।
জিল্লুর রহমান : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান বলেন যে, জনগণের একটি অংশ যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতা করেছিল, তারাই জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলছে। তিনি বলেন যে, তাদের এই অন্যায় কান্ড তারা ছাত্র সমাজের একটি অংশকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। জনাব রহমান বলেন যে, এইসব অশুভ শক্তিকে যে কোনো মুহূর্তেই অতি সহজেই নির্মূল করা যায়। কিন্তু শুধু মাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যই এসব শক্তির বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরেই তারা নিজেদের সংশোধন করবে। জনাব রহমান ছাত্রদের একটি গ্রুপ কর্তৃক জনাব রাজ্জাকের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা করে যে কোনো উস্কানীর মুখে শান্তি রক্ষা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
আবদুর রাজ্জাক : আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক জনাব আবদুর রাজ্জাক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, যারা বঙ্গবন্ধু মুজিববাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে বাংলার মাটিতে তাদের স্থান হবে না। তিনি বলেন যে, এসব শক্তিকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করা হবে।
তোফায়েল আহমেদ : আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সদস্য প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সেক্রেটারি জনাব তোফায়েল আহমেদ যেসব শক্তি স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতা করেছিল তারাই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। তিনি ঘোষণা করেন যে, এসব অশুভ শক্তিকে আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক রাজ কায়েম করা হবে। সভা শেষে বঙ্গবন্ধুর রোগ মুক্তি ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে বিশেষ মোনাজত করা হয়। মোনাজাত অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মওলানা খায়রুল ইসলাম যশোরী।
স্বেচ্ছাসেবকদের বিক্ষোভ মিছিল : বায়তুল মোকাররমের প্রতিবাদ সভা শেষে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, ছাত্রলীগ কর্মী, আওয়ামী লীগ কর্মী ও বাস্তুহারাদের এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নবাবপুর, ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী, চক বাজার, লালবাগ, পলাশী রেলগেট হয়ে শহীদ মিনারে এসে সমবেত হয়। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান জনাব আবদুর রাজ্জাক এই মিছিলটির নেতৃত্ব করেন।১১০
রেফারেন্স: ২৯ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ