You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.07.23 | সম্মেলনের শেষদিনে ছাত্রলীগের দু’দলের কয়েকদফা সংঘর্ষ | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সম্মেলনের শেষদিনে ছাত্রলীগের দু’দলের কয়েকদফা সংঘর্ষ

ছাত্রলীগ উভয় গ্রুপের সম্মেলনে শেষ দিনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে রব সমর্থিত ছাত্রলীগ, সিদ্দিকী সমর্থিত ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। ফলে জনাব আবদুর রাজ্জাক এম, সি, এ, ছাত্র নেতা আ, স, ম আবদুর রব, এবং তিন জন কার্যরত সাংবাদিক সহ প্রায় দু’শ জন ছাত্রছাত্রী ও পথচারী আহত হয়েছে। দুপুরের দিকে বঙ্গবন্ধু এভিন ও বিকেলের দিকে ঢাকা হলের সম্মুখে প্রধান দুটি সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। ছাত্রলীগ উভয় গ্রুপের মধ্যে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু এভিন্যুর সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান জনাব আবদুর রাজ্জাক এম,সি,এ আহত হয়েছেন। রব সমর্থিত ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ঢাকা হল গেট ও চানখার পুলের সংঘর্ষে ছাত্র নেতা আ,স,ম আবদুর রব ও ছাত্রী নেতা মমতাজ বেগম আহত হয়েছেন। এসব সংঘর্ষে বাঁশের লাঠি, ছোড়া, ইট, লোহার রড, ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী, রিক্সাওয়ালা, পুলিশ অফিসার, সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, চাকুরিজীবী ও শ্রমিক রয়েছেন। হাসপাতালে আহতদের মধ্যে সর্বমোট ১২ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায় নি।
বঙ্গবন্ধু এভিন্যুর সংঘর্ষ : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান ও গণপরিষদ সদস্য জনাব আবদুর রাজ্জাক এবং তিনজন সাংবাদিক সহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন আহমদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে। রোববার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উভয় গ্রুপের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিবসের মিছিলে এ সংঘর্ষ ঘটে। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে দুপুরে ছাত্রলীগ সিদ্দিকী মাখন গ্রুপ এক মিছিল বের করে। উক্ত মিছিল ছাত্রলীগ রব সিরাজ গ্রুপের সম্মেলন প্যান্ডেল (পল্টন ময়দানে) সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু এভিন্যু অতিক্রম কালে পল্টন ময়দান থেকে মিছিলের ওপর ইট ছোড়া হলে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। অপর একজনের কাছ থেকে জানা গেছে যে, মিছিলকারীদের মধ্যে থেকে প্রথমে পল্টন ময়দানে রব-সিরাজ গ্রুপের সম্মেলনের ওপর ঢিল ছোড়া হয়। উল্লেখ্য যে, দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান জনাব আবদুর রাজ্জাক ঘটনাস্থলে দেখা যায়। এসময়ে জনাব আবদুর রাজ্জাক এই সংঘর্ষের স্বীকারে পরিণত হলে। তৎক্ষণাৎ ছাত্রলীগ নেতা আ, স, ম আবদুর রব সংঘর্ষের মধ্যে থেকে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনাব রাজ্জাকের আহত হওয়া সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। কারণ জনাব রাজ্জাক হাসপাতালে ভর্তি হন নি। তিনজন কার্যরত সাংবাদিক সামান্য আহত হয়েছেন। জনৈক মিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরাটিও সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।
বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদ সভা : বিকেলে আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সভা হয়। বায়তুল মোকাররমের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান জনাব আবদুর রাজ্জাক ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচবি জনাব তোফায়েল আহমেদ বক্তৃতা করেন। জনাব রাজ্জাক বহু কষ্টার্জিত স্বাধীনতার বিরুদ্ধে উগ্রপন্থী ও কায়েমী স্বার্থের উষ্কানীর মুখে সংঘর্ষে লিপ্ত না হওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। জনাব তোফায়েল আহমেদ বলেন যে, আমেরিকা ও চীনের স্বার্থপুষ্ট কিছু সংখ্যক উগ্রপন্থী বাংলার স্বাধীনতাকে বানচাল করার জন্যে চেষ্টা করছে। এসব ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু এবং তার রাজনীতির বিরুদ্ধে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে জনগণের হৃদয় জয় করার আহ্বান জানান।
গণ মিছিল ও সমাবেশ শেষে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর একটি বিরাট মিছিল ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পরিক্রম করে।
ঢাকা হল গেট ও চানখারপুলে সংঘর্ষ : রোববার সন্ধ্যার দিকে রব সমর্থিত ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর এ সংঘর্ষে ছাত্রনেতা আ,স,ম আবদুর রব, ছাত্রলীগ নেত্রী মমতাজ বেগমসহ প্রায় ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী পথচারী ও পুলিশ অফিসার ও ১ জন কনস্টেবল আহত হয়। ছাত্রনেতা রবসহ আহতদের সকলকে তৎক্ষণাৎ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর বলে হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম, নবাবপুর, ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী নাজিমুদ্দিন রোড হয়ে ফেরার পথে ঢাকা হলের সম্মুখে রব সমর্থিত ছাত্রলীগ কৰ্মাদের একটি মিছিলের সম্মুখীন হলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। ঢাকা হল গেট, চানখারপুল, টি বি হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দান, ঢাকা যাদুঘর প্রভৃতি এলাকার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই সংঘর্ষ প্রায় আধঘণ্টাকাল স্থায়ী থাকে। এই দুটি প্রধান সংঘর্ষ ছাড়াও শহরের অন্যান্য স্থানে আরও ছোট ছোট সংঘর্ষে কিছু লোক আহত হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় যে, আহতদের ওপর বাঁশের লাঠি ছোড়া ও ক্রাকার ব্যবহার করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে হাসপাতাল সূত্রে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের নাম পাওয়া গেছে। আ.স.ম আবদুর রব, মমতাজ বেগম (ছাত্রী), জামিল (ছাত্র), নুরুল আমিন (পৌরসভার কর্মচারী), আজগর আলী পুলিশ, সেকেন্দার আলী (পুলিশ ইন্সপেক্টর), মোয়াজ্জেম হোসেন (ছাত্র) আবদুল করিম (কুমিল্লা হাসানপুর কলেজের ছাত্র), আবদুল ওহাব খান (বিজি প্রেস কর্মচারী), বাবুল (জগন্নাথ কলেজের ছাত্র), শাহ আলম (পথচারী), শামিম (ছাত্র) মোয়াজ্জেম হোসেন (ছাত্র) আবদুর রউফ (পথচারী)।৮৬

রেফারেন্স: ২৩ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ