বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদের জন্য আবেদন করবে
আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার আগামি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ আজাদ মঙ্গলবার স্বীয় বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন যে, এছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য সরকার আগামি মাসে আবেদন জানাবে। তিনি বলেন, আগামি মাসে কোনো এক সময়ে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির প্রশ্নে তিনি গভীর ভাবে আশাবাদী হয়ে বলেন, আগামি অধিবেশনে বাংলাদেশের এই বিশ্বসংস্থার সদস্য হওয়ার প্রশ্নে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের অনুকূল পরিবেশ ব্যাখ্যাকালে বলেন, ইতোমধ্যে ১৫টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১১ টি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সংস্থার ৫টি স্থায়ী রাষ্ট্রের মধ্যে চারটি স্থায়ী রাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশকে স্বীকৃতিই দেয় নাই অধিকন্তু পূর্ণ রাষ্ট্রদূত পর্যায়ে সম্পর্কও গড়ে তুলেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, যে চারটি রাষ্ট্র এখনও বাকি আছে তারা বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেবে।
গণচীন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণচীন সম্পর্কে আলোচনাকালে বলেন, চীনের বিপ্লবের পক্ষে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ও জনসাধারণ সব সময় ছিল। এই প্রসঙ্গে তিনি অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের সাথে অতীতে আমাদের কোনো ঝগড়া ছিল না এবং বর্তমানেও নেই। তিনি আরও বলেন, চীন কী কারণে বাংলাদেশের বাস্তবতাকে এখনও স্বীকার করছে না তা আমরা বুঝতে পারি না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ। চীনের সাথে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।
পাকিস্তান : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব সামাদ সম্প্রতি পাকিস্তান বেতারে “দু’রাষ্ট্র ঘোষণাকে শুভ লক্ষণ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা চিরদিন পাকিস্তানের সাথে শত্রুতামূলক মনোভাব রাখতে চাই না। যদিও তারা ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা বাংলাদেশে চালিয়েছে। তিনি বলেন, মানুষ হয়তো ভুলতে পারে কিন্তু ইতিহাস ক্ষমা করবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি নেতৃত্ব অতীতের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি স্বীকার করে বাঙালিদের প্রতি ভালবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসলে তা বিবেচনা করে দেখা যাবে। তবে প্রথমেই পাকিস্তানের আটক বাঙালিদের বিনা বাধায় এবং বিনাশর্তে অবিলম্বে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, পাকিস্তানে আটক করা বাঙালিরা যুদ্ধবন্দি নয়, তারা সাধারণ ও নিরীহ মানুষ।৬৫
রেফারেন্স: ১৮ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ