কোনো চাপই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে পারবে না- বঙ্গবন্ধু
কুমিল্লা। “পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেড, এ ভূট্টো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেন বা না দিলেন তাতে আমাদের কিছু আসে যায়না। বাংলাদেশ সাড়ে সাত কোটি মানুষের বাসভূমি, বাংলাদেশ জানে কি করে জাতিসমূহের মধ্যে স্থান করে নিতে হয়। বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখানে সাম্প্রতিক কালের বৃহত্তম জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এতে তিনি বলেন, ভূট্টো সাহেবের ভাবা উচিত পাকিস্তানের আমাদের স্বীকৃতির দরকার আছে। এই সঙ্গে চিত্তচঞ্চলা পরিত্যাগ করে উপমহাদেশের বাস্তবতাকে মেনে নেবার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতায় আজ আবার যুদ্ধাপরাধীদের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দুনিয়ার কোনো শক্তিই তাদের বিচার করা থেকে আমাদের বিরত রাখতে পারে না। এ প্রশ্নে কোনো হুমকি বা চাপে মাথা নত করতে আমরা রাজি নই। আমাদের লোকজনকে তারা হত্যা করেছে, তাদের কিভাবে আমরা ক্ষমা করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, এখন আমাদের দেশ গড়তে হবে। এ জন্য জনগণকে কঠোর পরিশ্রম করে যাবার জন্য তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতির ভাগ্য গড়া আমাদের মূলমন্ত্র শহীদের রক্ত। শহীদের রক্তই আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে।
চোরাচালান রোধে গণকমিটি চাই : বঙ্গবন্ধু চোরাচালানীদের উল্লেখ করে বলেন, সীমান্ত এলাকার লোকদের গণ-কমিটি করে এদের ধরতে হবে এবং পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে। তিনি মজুতদার ও সমাজ বিরোধীদেরে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ার করে দেন। তিনি বলেন যে, তিনি যেই হোন ক্ষমা করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী সরকারি অফিসারদেরও সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, ইয়াহিয়ার দখলদার আমলে যারা চাকুরি করেছেন, সরকার তাদেরকে বরখাস্ত করতে পারত। কিন্তু পরিবর্তে সরকার তাদের প্রতি সিথিল মনোভাব দেখিয়েছে। এখন তাদের উচিত কঠোর পরিশ্রম করা, সততার সাথে জনগণের সেবা করা।
বীর মুক্তিযোদ্ধদের দেখার দায়িত্ব জাতির : বঙ্গবন্ধু বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের বীর সন্তান, তারা ইয়াহিয়া বর্বরদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। আজ জাতির কর্তব্য তাদের দেখাশোনা করা। তিনি বলেন যে, সরকার একটা ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশন করতে চান। এখান থেকে তারা বাকি জীবনের জন্য পেনশনের সুবিধা পাবে। সভায় বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন, পাকিস্তানিদের গণহত্যার সময় শ্রীমতি গান্ধী বহুভাবে আমাদের সাহায্য দিয়েছেন। তিনি আমাদের এক কোটি লোককে আশ্রয় দিয়েছেন। আজকের সভায় গত স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু এতে নেতৃত্ব দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন, কুমিল্লা জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব খোরশেদ আলম এম, সি, এ। এর আগে শেখ সাহেব এখানে এক বিরাট জনতা সম্বর্ধনা জানায়। পুলিশ গ্রাউন্ডে তাকে স্বাগত জানানো জন্য তথ্যমন্ত্রী জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী ও সেচমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ উপস্থিত ছিলেন।১৪
রেফারেন্স: ৪ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ