You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.07.01 | সাংবাদিক সম্মেলনে বাজেট ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সাংবাদিক সম্মেলনে বাজেট ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশ বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্য নিচ্ছে। কিন্তু এই দিক থেকে কোনো বিশেষ দেশ বা দেশ সমষ্টির ওপর পুরাপুরি নির্ভরশীল হবে না। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন গতকাল ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেট সম্পর্কে এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই বছর আমরা বিদেশ থেকে ৩৭৫ কোটি টাকা পাব। তন্মধ্যে সাহায্য হিসাবে আসবে ২ শত কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বিকালে পরিষদ ভবনে সাংবাদিকদের কাছে বাজেটের বিশ্লেষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “দাতা দেশগুলিকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে শর্ত যুক্ত কোনো যাহায্য বা মুজুরি আমরা নিব না। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এ দেশের মানুষ এখন সচেতনতাদের আত্মমর্যাদাবোধ আছে। কাজেই বৈদেশিক সাহায্য যত মোটা অঙ্কের হোক না কেন তাদের কিনতে পারবে না।
গ্রাম ভিত্তিক উন্নয়ন : ১৯৭২-৭৩ এর উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্প স্থির করার ক্ষেত্রে এক মৌল বিবেচনা ছিল গণতান্ত্রিক পরিচালনা। যেহেতু জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গ্রামাঞ্চলে বাস করছেন সেহেতু গ্রাম ভিত্তিক প্রকল্পের ওপর যথারীতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। উন্নয়ন খাতে সার্বিক ব্যয়ের পরিমাণ ৩১৮ কোটি টাকার ভিতর ২০০ কোটি টাকা অথাৎ শতকরা ৬৩ ভাগ গ্রামীণ অর্থব্যবস্থার উন্নয়নে আসবে। এছাড়া আগামি অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মারফত ৩০ কোটি টাকার গ্রামীণ ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কৃষি উন্নয়ন : কৃষিখাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১ শত ৩ কোটি টাকা। কৃষি খাতে বরাদ্দের এই মাত্র আমাদের দেশে সর্বকালের খতিয়ানে সব চাইতে বেশি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করার পূর্বঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী এই বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকার তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো এই বছরের ১৫ লক্ষ একর থেকে ৩৬ লক্ষ একরকে উচ্চ উৎপাদনশীল খাদ্য উৎপাদকের আওতায় আনা। ৪ লক্ষ ২৫ হাজার টন রাসায়নিক সার সরবরাহ, ১২ হাজার টন কীটনাশক ঔষধ সরবরাহ, ৩৫ হাজার পাম্প স্থাপন, ২৪০০ গভীর নলকূপ ও ৪ হাজার অগভীর নলকূপ খনন। এই বৎসরের লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত কৃষকরা যাতে রাসায়নিক সার লাভ করতে পারেন, সে জন্য এর মণ প্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। এই দাম সরকারের ক্রয় মূল্যের অর্ধেক।
যোগাযোগ ও পরিবহন ও যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বরাদ্দ হতে সংকুলান হবে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর, বাংলাদেশ রেল পথ, সড়ক ও জলপথ সমূহ, তার ও দূরালাপনী এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মেরামত ও পুনঃনির্মাণ। গ্রাম উন্নয়ন ও সমবায়ের খাতে বরাদ্দ হযেছে ৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে পূর্ত-কর্মসূচিতে।
কর হার পুনঃর্বিন্যাস : এখন আমি করহার পুনঃর্বিন্যাস সস্পর্কে কিছু বলবো। বিধ্বস্ত অর্থ ব্যবস্থা, টাকার নির্ধারিত বিনিময় হার এবং নিম্ন ও উচ্চ আয়ের বৈষম্য দূরীকরণের সরকারি নীতি বিবেচনায় কর সমূহ পুনঃর্বিন্যাস করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আগে নগদ, নগদ ও বোনাস এবং পুরো বোনাস ভিত্তিতে যে আমদানি হতো, তার ওপর বাংলাদেশে মুদ্রার নতুন বিনিময় হারের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি শুল্ক তফসিলের বিন্যাস ও পুনর্বাসন সাধিত হয়েছে। নগদ ও বোনাস ও পুরো বোনাসের ভিত্তিতে আমদানিকৃত সামগ্রীর মূল্য নতুন বিনিময় হারে আমদানির চাইতে বেশি ছিল। এই সব ক্ষেত্রে শুল্কহারে যথাযথ বিন্যাস সাধন করে মূল্য মাত্রার পার্থক্য সরকারি আয় হিসাবে সংগ্রহ করা হয়েছে। নগদ বা ক্যাশ ভিত্তিতে আমদানি মূল্য বর্তমানে বিনিময় হারের ভিত্তিতে আমদানির চেয়ে কম ছিল। এই ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কহারে হ্রাস করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাতীয় শুল্কহার অপরিবর্তীত রয়েছে। এই বিন্যাস সাধনে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রেখেছি। উপরোক্ত নীতি অনুযায়ী ৬০ কাউন্ট পর্যন্ত তার এবং ৬০ ও তার চেয়ে বেশি কাউন্টে কার্পাস সুতোর ওপর শুল্কহারে শতকরা ৬৫ ভাগ থেকে কমিয়ে যথাক্রমে শতকরা ৩০ হতে ৪০ ভাগ করা হয়েছে, এই ভাবে আমদানিকৃত সুতী কাপড়ের ওপর শুল্ক হার শতকরা ১২৫ থেকে কমিয়ে শতকরা ১০০ ভাগ করা হয়েছে। তেমনি ঢেউ টিনের মূল্য ভিত্তিক শুল্কহার শতকরা ১২ ভাগ থেকে শতকরা ১০ ভাগে নেমেছে; রং-এর ওপর ধার্যকৃতহার শত করা ৫০ ভাগ হতে শতকরা ৩৫ ভাগ স্থিরকৃত হয়েছে। নারিকেল তেলের ওপর আরোপিত হার ৬২% থেকে ৬০% নামানো হয়েছে। কষি পাম্পের ওপর পূর্বতন শুল্ক হার বিক্রয় করসহ ছিল শতকরা ৬৮ ভাগ, এবার তা ধার্য করা হয়েছে শতকরা ১৫ ভাগে। জন পরিবহন ক্ষেত্রে বিশেষ কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বোনাসের ভিত্তিতে আমদানিকৃত মটর গাড়ি বাস, ট্রাকের টায়ার ও টিউবের ওপর বিন্যস্ত কর শতকরা ১২৯ ভাগ। এখন তা ধার্য হয়েছে ১২৫ ভাগ। বোনাসের আমদানিকৃত ট্রাক, বাস ও লরীর বিন্যাস্ত শতকরা ১১৪ ভাগ শুল্ক হার এখন কমিয়ে শতকরা ৭৫ ভাগ করা হয়েছে, তেমনি মটর সাইকেল ও মটর স্কুটারের ওপর আগেকার বিন্যাস্ত শতকরা ১৪ ভাগ শুল্ক হার এ বছরে স্থিরকৃত হয়েছে শতকরা ১০০ ভাগে। রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধাদি, তৈলবীজ, শিশুদের খাদ্য, মালেরিয়া ও যক্ষা নিরোধক ওষুধপত্র সমূহ বিনা শুল্কেই আমদানি হতে থাকবে। এছাড়া সাধারণ মানুষের পরিবহণ সমস্যা সমাধানকল্পে আমরা সাইকেল ও অটোরিক্সা আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব সামগ্রীর ওপর অবশ্য সমাজ বিক্রয় কর আরোপিত থাকবে। সাইকেল বাংলাদেশ বাণিজ্য কর্পোরেশন কর্তৃক আমদানি হবে এবং অনুমোদিত বিক্রেতাদের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে জনসাধারণের মাঝে বিক্রয় করা হবে। আমদানিকৃত কয়লার ওপর টন প্রতি ১০ টাকা হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগে চীন ও পোল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত কয়লা ঢাকায় টন প্রতি ১৫১ ও উত্তরবঙ্গে ১৭০ টাকায় বিক্রি হত। যেহেতু এখন ভারত হতে আমদানিকৃত কয়লার দাম এই তুলনায় কম সেহেতু এ কর আরোপ করার সত্ত্বেও আগের দামের চেয়ে কয়লার দাম কম থাকবে। চায়ের ওপর উৎপাদন কর পাউন্ড প্রতি ১৩ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আগের বছরে মূল্যমাত্রার চাইতে এই বছরে চায়ের নীলাম দাম প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ কমে গেছে। চায়ের ওপর এই সামান্য উৎপাদন কর তাই চাপানকারীদের ওপর বোঝাস্বরূপ হবে না। সিগারেট তৈরির জন্য ব্যবহৃত তামাকের ওপর ধার্যকৃত উৎপাদন করের হার পাউন্ড প্রতি ১ টাকা থেকে কমিয়ে ৬০ পয়সা ধরা হয়েছে। আয়কর ও কপোরেশন করের ক্ষেত্রে উচ্চ আয়সম্পন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যেসব দক্ষিণা প্রচলিত ছিল। প্রত্যাহার করে স্বল্প আয় ও নিদিষ্ট আয় সম্পন্ন ব্যক্তিদের উপকারার্থে অতিরিক্ত সুবিধার প্রচলন করা হয়েছে। সিমিতো আয় বিশিষ্ট কোনো প্রাইভেট ও পাবলিক কোম্পানি সমূহ হতে লব্ধ ডিভিডেন্ট আয় যথাক্রমে ৩,০০০ ও ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্তি ছিল। তেমনি ৩০,০০০ ও ৫০,০০০ টাকার বেশি ডিভিডেন্ট আয়ের উপরে দেয় করের ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ অব্যাহতির ব্যবস্থা ছিল। এসব এই বছরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বেতনভুক্ত কর্মচারীদের আয়ের ক্ষেত্রে শতকরা ১০ হারে যে আপ্যায়ন ভাতার প্রচলন ছিল তা এবছরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কর ধার্যের উদ্দেশ্যে আয় হিসাব করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভাতা হিসাবে ১০০০ টাকার অব্যাহতি, নির্দিষ্ট আয় বিশিষ্ট লোকদের সুবিধার্থে ২০০০ টাকায় পরিবর্তিত করা হয়েছে। যাতায়াত ব্যয় হিসাবে বেতনভুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কর ধার্যের আয় নির্ধারণের পর্যায়ে প্রদত্ত সুবিধাদি নিম্মরূপঃ- (১) মোটর গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো শক্তি চালিত যানবাহনের মালিকানা ও সংরক্ষণের জন্য প্রচলিত ভাতা ৩৬০ থেকে ৬০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। (২) যাদের এরূপ কোনো যানবাহন নেই তাদের জন্য প্রচলিত ভাতার ২৪০ থেকে ৩৬০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে বাৎসরিক ৩৬০০০ টাকার উর্ধ্বে আয়ের ওপর প্রান্তিক সমস্যার সাপেক্ষে শতকরা ১০ হারে অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। অধিকাংশ শিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত হওয়ায় প্রচলিত করঅবকাশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। মূলধন-মুনাফার ওপর ধার্য করের হার খুব কম ছিল। এই করের হার এ বছর বাড়ানো হয়েছে। নগর এলাকার স্থাবর সম্পত্তির ওপর কর হার সামান্য বাড়ানো হয়েছে। ২৫০০ বর্গফুটের চেয়ে বেশি আয়তনের আবাসিক ভবনের ওপর প্রচলিত বর্গফুট প্রতি ১০ টাকা হারে আরোপিত কর প্রত্যাহার করা হয়েছে। মিল বেলিংয়ের পর্যায়ে পাটের উপরে মণ প্রতি ৫০ পয়সা হিসাবে কর আদায় করা হত, তা বাড়িয়ে ২ টাকা করা হয়েছে। এতে পাট চাষির ওপরে সরাসরি কোনো ভার এসে পড়বে না। অপর পক্ষে পাট বোর্ড কর্তৃক সংগৃহীত মণপ্রতি ৫০ পয়সা পাট শেষ প্রত্যাহার করা হলো। সড়ক দিয়ে দ্রব্য সামগ্রী পরিবহনের ওপর যে মাশুল ধার্য ছিল তা বিভিন্ন মাপের ট্রাকের জন্য বিভিন্ন হারে প্রতিদিন আদায় করা হতো। এর পরিবর্তে এখন টনের ভিত্তিতে স্থিরকৃত বাৎসরিক পর্যায়ে সামান্য মাশুল গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৯৭১-৭২ সালে অর্থ সংস্থান কর বা finance tex এর ভিত্তি বেশ বাড়ানো হয়েছিল। এতে বিশেষ শ্রেণির লোকের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সাল থেকে ৭২ এর পূর্ববর্তী কালের ভিত্তিতে আবার এখন থেকে এ কর আরোপ করা হয়েছে। ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছরে উল্লেখিত কর হারের পূর্ণ বিন্যাস হেতু অতিরিক্ত ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা আদায় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা সংগ্রহের পরও পুনর্বাসন ও পুনঃনির্মাণ খাতে ঘাটতি থাকে ৬১ কোটি টাকা। দেশের পুনর্বাসন ও পুনঃনির্মাণ প্রকল্পে যথাযথ রূপায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের মাধ্যমে এ বাকি ৬১ কোটি টাকা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। উল্লেখিত কর হার বিন্যাস ও সরকারি আয় এবং ব্যয়ের খতিয়ান বিশ্লেষণ করলে এ কথা প্রতীয়মান হবে যে, ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছরের সরকারি কার্যক্রমের ভিত্তি ছিল পুনর্বাসন, পূর্ণনির্মাণ ও উন্নয়ন অর্থাৎ জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে সীমিতো সম্পদের সুষ্ঠু প্রয়োগ। ১৯৭২-৭৩ সালে আমাদের কার্যক্রম ও পরিকল্পনা পরিধি ১৯৭১- ৭২ সালের চেয়ে অনেক বেশি। বলা বাহুল্য, এই বিরাট কার্যক্রম ও পরিল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের প্রশাসনিক যন্ত্রের সামার্থ ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা সজাগ। এজন্য প্রশাসন যন্ত্রের উন্নতিকরণ, সরকারি কর্মচারী ও জনসাধারণের মনোবৃত্তি দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের যথাযথ পরিবর্তন হওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য নেতৃত্বে সরকার ও জনসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এই বিরাট কার্যক্রম ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবসময় সচেষ্ট থাকব। এই উদ্দেশ্য সাধনে সরকারি যন্ত্র পূর্ণাঙ্গভাবে নিয়োজিত থাকবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অর্থ ব্যবস্থার পুনর্গঠনের কালে আমাদের দেশবাসী যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করেছেন। ভবিষ্যতে স্বপ্ন ও আদর্শবোধে তারা উদ্বুদ্ধ হতে পেরেছেন বলেই এটা বাস্তব হয়েছে। আমাদের কষ্টের কাল, কৃচ্ছতা সাধনের সময় তাই বলে পার হয়ে যাই নি। বঙ্গবন্ধু আপনাদেরকে বলেছিলেন যে, তিন বছরের মধ্যে সরকার আপনাদের কিছু দিতে পারবে না। আমি সেই কথা আবার আপনাদের স্মরণ করে দিতে চাই। আমরা যেই সুখী ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গঠনের চেষ্টা করছি, তার জন্য আজ আমাদেরকে কষ্ট স্বীকার করতে হবে। যাতে আগামি কাল আমাদের সন্তানদের কষ্ট আমরা লাঘব করতে পারি। স্বাধীন জাতি হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতে হলে আমাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। অর্থব্যবস্থার দিক হতে স্বাবলম্বী হতে হবে। আজ আমাদের সীমাবদ্ধ ব্যবহার আমরা করছি প্রধানত পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে। ভবিষ্যতে উন্নত পরিকল্পনার ব্যয়ভার অভ্যন্তরীণ সম্পদের ভিত্তিতে নিজেদেরকেই বহন করতে হবে। দেশবাসীকে তার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। পরিকল্পনার আকার ও প্রকার যাই হোক না কেন বাস্তবায়নের ওপরে তার সাফল্য নির্ভর করে। আর সেই সাফল্য সুনিশ্চিত হতে পারে শুধু সুশৃঙ্খল জাতির সমবেত প্রয়াসে। তাই আসুন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকলে মিলে দেশ গড়ার স্থির লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হই।২

রেফারেন্স: ১ জুলাই ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ