৭২-৭৩ সালের উদ্বৃত্ত বাজেট পেশ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গতরাতে ১৯৭২-৭৩ সালের করমুক্ত উদ্বৃত্ত রাজস্ব বাজেট ঘোষণা করেন। দেশের এই প্রথম বাজেট ২৮৫৩৮ কোটি টাকার রাজস্ব আয় দেখান হয়েছে। রাজস্ব ব্যয় হবে ২১৮৪৩ কোটি টাকা। এতে ৬৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত থাকছে। অবশ্য উন্নয়ন বহির্ভূত মুলধন খাতে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার পুনবিন্যাস এতে ধরা হয়নি। এটা ধরলে নীট উত্তর পরিমাণ ৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকায় দাঁড়াবে। ১৯৭২-৭৩ সালে এই বাজেট মোট উন্নয়ন পুনর্বাসন ও পুনঃনির্মাণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০১ কোটি টাকা। তার মধ্যে শুধু উন্নয়ন খাতে ৩১৮ কোটি ৩২ লাখ খরচ হবে। অর্থমন্ত্রী বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গে বলেন, মুলতঃ পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের প্রয়োজনে এই বাজেট খুব একটা উন্নয়ন ধর্মী হবে না। তবে এতে ভবিষ্যত সমাজতান্ত্রিক উন্নয়নের ভিত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে।
গণমূখী উন্নয়ন : তিনি বলেন, এবার উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণ প্রচার স্থির করার ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য ছিল গণ-ভিত্তিক পরিকল্পনার। জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গ্রামে বাস করেন। এ জন্যে গ্রামীণ প্রকল্প সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, এসব বিবেচনা করে উন্নয়ন খাতে সার্বিক ব্যয়ের শতকরা ৬৩ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ২ শত কোটি টাকা হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া আসছে বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মারফত ৩০ কোটি টাকার গ্রামীণ ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কৃষি খাতে বরাদ্দ : এবারের বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে, ১০৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, এর আগে কৃষি খাতে এতো বেশি টাকা আর কখন ও দেওয়া হয়নি। এই অধিক বরাদ্দের লক্ষ্য মতো শীঘ্র সম্ভব খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনা। তিনি আরও বলেন, এই বছর উচ্চ ফসলশীল জমির পরিমাণ ১৫ লাখ থেকে ৩৬ একরে আনা হবে। সোয়া ৪ লখ টন রাসায়নিক স্যার, ১২ হাজার টন কীটনাশক ঔষধ ও ৩৫ হাজার পাম্প সরবারহ এই লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত। মন্ত্রী বলেন, কৃষকরা যাতে সহজে সার পায় সেজন্য মন প্রতি ২০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এই দাম সরকারের ক্রয় মূল্যের অর্ধেক।
যোগাযোগ ও পরিবহন : অর্থমন্ত্রী বলেন, গত স্বধীনতা সংগ্রামের সময় হানাদার পাকিস্ত নিবাহিনী দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল। এর পুনর্বাসনের জন্য বাজেটে ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেটে পানি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ খাতে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, বিজলী খাতে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, শিল্প খাতে ৩০ কোটি ২ লাখ টাকা এবং শিক্ষা খাতে ২০ কোটি ১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
আমাদের কষ্টের কাল পার হয়ে যায়নি : অর্থমন্ত্রী এসব প্রকল্পের বিশ্লেষণ দিয়ে বক্তৃতার শেষের দিকে বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে অর্থ ব্যবস্থার পুনর্গঠনেকালে দেশবাসী যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করেছেন। তা বলে আমাদের কষ্টের কাল কৃচ্ছতাসাধনের সময় পার হয়ে যায়নি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আপনাদের কাছে ৩ বছর সময় চেয়েছেন। তিন বছরের মধ্যে তিনি কিছু দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। আমি সেই কথাই আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যে সুখী ও সমুদ্ধ ভবিষ্যত গঠনের চেষ্টা করছি, তার জন্য আজ আমাদের কষ্ট স্বীকার করতে হবে, যাতে আগামিকাল আমাদের সন্তানদের কষ্ট আমরা লাঘব করতে পারি।৯৪
রেফারেন্স: ৩০ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ