নিয়াজী সব দোষ টিক্কা আর ইয়াহিয়ার ঘাড়ে চাপিয়েছেন
নয়াদিল্লির মাসিক ‘বিক্রান্ত পত্রিকায় সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে দখলদার বাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল নিয়াজী সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে বলা হয় : গত বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর ৮০ হাজার সৈন্যের সাথে জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পন দলিলে স্বাক্ষর করেন। ভারতীয় দফতরের তথা এক প্রেস নোটে প্রকাশ, ভারতে যুদ্ধবন্দি অবস্থায় জেনারেল নিয়াজী ৩শ পৃষ্ঠার একটি বই লেখেন। এই বইতে অন্যান্য তথ্যের মধ্যে গতবছর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে দখলদারবাহিনীর আমলে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। জেনারেল নিয়াজী সমস্ত ঘটনার জন্য সাবেক পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পুরোপুরি দায়ী করেছেন। বাংলাদেশের নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের ওপর জেনারেল টিক্কা খানের নৃশংসতার কথাও তিনি স্বীকার করেন। এছাড়া পাকিস্তানি দখলদারবাহিনী ব্যাপকভাবে যে ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ করেছে, জেনারেল নিয়াজী তাও স্বীকার করেন। নিয়াজীর বইতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, গতবছর নভেম্বর মাসে চীন পাকিস্তানকে এই মর্মে আশ্বাস দিয়েছিল যে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হলে চীন ভারতের বিরুদ্ধে কয়েকটি রনাঙ্গণ খুলবে। জেনারেল নিয়াজী আরো জানান যে ৩ ডিসেম্বরই চীন সরকার ইয়াহিয়া খানকে জানিয়ে দেন যে হিমালয় অঞ্চলে ব্যাপক তুষারপাতের দরুন চীনা সৈন্যদের পক্ষে রনাঙ্গণে যাওয়া সম্ভব হবে না। জানা গেছে যে, পাকিস্তানি সৈন্যদের মনোবল বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রনাঙ্গণে চীনা সৈন্য প্রেরণের জন্য বিশেষভাবে পীড়াপীড়ি করে। কিন্তু চীনারা তার এই অনুরোধ রক্ষা করেনি। পক্ষান্তরে চীনারা খুবই ঘাবড়ে যায় যে, ভারতের বিরুদ্ধে কোনো নয়া রনাঙ্গণ খোলা হলে ভারত-সোভিয়েত শান্তি ও মৈত্রী চুক্তি প্রয়োগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়তো তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া চীন সরকার পাকিস্তানকে চীন-সোভিয়েত সীমান্ত বরাবর সোভিয়েত সৈন্য সমাবেশেরও কথাও জানিয়ে দেয়।৫৭
রেফারেন্স: ১৫ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ