১৫ দিন সময়, তারপর কাফু-গুলি- বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজবিরোধী তৎপরতা, চোরাচালান, কালোবাজারী, মুনাফাখোরী, মজুতদারী বন্ধ করার এবং পরিত্যাক্ত গাড়ী, বাড়ি ও সম্পত্তি সরকারের কাছে ফেরত দেবার জন্যে ১৫ দিনের সময় দিয়েছেন। বলেছেন, প্রয়োজন হলে সমাজদ্রোহীদের গুলি করে হত্যা করার জন্যে আইন পাশ করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসমুদ্রে মুহুর্মুহু করোতালির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, ১৫ দিনের নির্ধারিত সময়সীমা উৰ্ত্তীন হলে সমাজবিরোধী, মজুতদার, কালোবাজারী ও চোরাচালানীদের খুজে বের করা হবে। আরো খুঁজে বের করা হবে সরকারি গাড়ী, বাড়ি, পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ও অন্যের জমি জবর দখলকারীদের। এছাড়া প্রয়োজনবোধে এলাকা ওয়ারী কাফু দিয়ে এদের ধরা হবে। এবং মজুতমাল, চোরাই গাড়ী ও পরিত্যাক্ত সম্পত্তি উদ্ধার করা হবে। ঐতিহাসিক ৭ জুন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় ঢাকা শহর ও শহরতলী এবং মফস্বল এলাকা হতে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হয়। সকাল হতে দলে দলে, খন্ড খন্ড মিছিলে, বাসে ট্রাকে লোক এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হতে থাকে। এছাড়া শহর ও শহরতলীর শিল্প এলাকার লাল বাহিনীর সদস্যরা মিছিল করে ঢোল বাদ্য সানাই বাজিয়ে আসে বঙ্গবন্ধুর জনসভায় যোগদানের জন্য। বিকেল ৩ টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে। জ্যৈষ্ঠর শেষের খর রৌদ্র ও ভ্যাপসা গরম। তবু খোলা আকাশের নিচে লক্ষ লক্ষ লোক উন্মুখ হয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধুর আগমন প্রতিক্ষায়। জনসভায় এলে বিশাল জনসমুদ্র করোতালি ও জিন্দাবাদ ধ্বনির মাধ্যমে তাদের জাতীয় নেতাকে অভিবাদন জানান। বঙ্গবন্ধু মঞ্চের সামনে এসে দু’হাত তুলে জনসমুদ্রের অভিবাদন গ্রহণ করেন। অতঃপর শ্রমিক লীগের লাল বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানান। লাল বাহিনীর প্রধান জনাব আব্দুল মান্নান বাহিনীর সদস্যদের শপথ গ্রহণ করান। সমাজবিরোধীদের হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, কালোবাজারী, মজুতদার, মুনাফাখোর ও চোরাকারবারীরা সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জনজীবনে দুদর্শার সৃষ্টি করছে। অনেকে আবার পরিত্যক্ত বাড়ি ঘর, দোকান পাট, গাড়ী, সরকারি ও অন্যের জমি দখল করে রেখেছে। ১৫ দিনের মধ্যে মজুতমাল বাজারে ছাড়তে হবে। গাড়ী, বাড়ি, দোকান পাট সরকারের নিকট ফেরত দিতে হবে। সরকারি ও অন্যের জবরদখল করা সম্পত্তি ছেড়ে দিতে হবে। নইলে প্রয়োজন হলে সমাজ বিরোধীদের হত্যা করার জন্যে আইন পাশ করা হবে। এলাকাওয়ারী কাফু দিয়ে মজুতমাল বের করে আনা হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, সমাজবিরোধীদের গত পাঁচ মাস ধরে সতর্ক করে দিয়েছি। তাদেরকে অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি এসব কাজ করো না। আমার বিশ্বাস ছিল এরা কথা শুনবে। কিন্তু চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। তিনি বলেন, আমি দুনিয়ার কাছ থেকে ভিক্ষে করে আনছি দুঃখী মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য। আর সমাজবিরোধী ব্যক্তিরা আমাদের সকল প্রচেষ্টা নসাৎ করে দিচ্ছে।
সরকারি কর্মচারী : সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ঘুষ খাবেন না। আপনাদের সম্পর্কে আমার কাছে কিছু কিছু খবর আসছে। কোনো কর্মচারী ঘুষ খেলে তার চাকুরি যাবে এবং তাকে জেলে দেয়া হবে। চোর ও গুন্ডা-বদমায়েশদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্যে তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেন।১৯
রেফারেন্স: ৫ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ