বাংলাদেশে ধনতন্ত্রের সমাধী হবে- তাজউদ্দিন আহমদ অর্থমন্ত্রী
জনাব তাজউদ্দিন আহমদ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জগন্নাথ কলেজের এস আর হলে ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে এক বক্তৃতায় বলেন যে, আমরা দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে বদ্ধপরিকর। ধনতান্ত্রিক দেশ এবং সমাজতান্ত্রিক দেশের বন্ধুত্বের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণকে অবশ্যই পার্থক্য নির্দেশ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তা না হলে সাহায্যের ছদ্মবেশে সাম্রাজ্যবাদের বিষ আমাদের দেশে প্রবেশ করবে। মন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য শর্ত যে কোনো দেশের পক্ষেই ক্ষতিকর। অর্থমন্ত্রী বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইউরোপের জনগণকে শোষণ করার জন্যে তথাকথিত মার্শাল পরিকল্পনা প্রণয়ন ন্যাটো ও অন্যান্য নিরাপত্তা চুক্তি চালু করে। তিনি বলেন যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ২ কোটি ৪০ লাখ লোক নিহত হয়েছিল কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী সাহায্য ছাড়াই এই সব দেশ পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে প্রভূত উন্নতি করেছে। তিনি যুব সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে স্বাবলম্বী হওয়ার অভিযান চালাতে আহ্বান জানান। মন্ত্রী আরো বলেন যে, তাদের রাস্তায় নেমে আসতে হবে এবং দরিদ্র মানুষের নিকট ত্রাণসামগ্রী পৌছে দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশের চিরদিনের ধনতন্ত্রের সমাধী হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতেও ধনতন্ত্র এবং সাম্রাজ্যবাদের বিকাশের কোনো সুযোগ এখানে থাকবে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, ধনতন্ত্র সাম্রাজ্যবাদে দালালরা সরকারের সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচিকে নসাৎ করার চেষ্টা করছে। এই সব চক্রান্তের মুলোচ্ছেদ করার জন্যে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ এ চারটি আদর্শকে দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ফরমুলা হিসেবে চালু করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে কোনো আদর্শই কোনো দেশে অপরিবর্তীতভাবে প্রয়োগ করা যায়। একটি দেশের পরিবেশ অনুযায়ী এর পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন যে, শুধু সমাজতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে কোনো ফল হবে না। যবুকদের মানুষিক গঠনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন দরকার বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। কৃষক শ্রমিকরাজ ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে তিনি আত্মোৎসর্গ করতে আহ্বান জানান
রেফারেন্স: ৫ জুন ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ