চাষিদের স্বার্থে পাটের ন্যায্যমূল্য বেধে দেওয়া হবে
বাংলাদেশ সরকার পাটের রপ্তানি বাণিজ্য জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসছে ১ জুলাই তা কার্যকরী হবে। মঙ্গলবার বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম আর সিদ্দিকী নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ পাট সমিতির এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দানকালে এই সরকারি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে সমিতির সদস্যভুক্ত পাট রপ্তানিকারকরা উপস্থিত ছিলেন। জনাব এম আর সিদ্দিকী বলেন, সরকার শীগগিরই পাট রপ্তানি কর্পোরেশন গঠন করবে। এই কর্পোরেশনই বিদেশে পাট রপ্তানি করবে। কর্পোরেশনে থাকবেন একজন সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যান এবং তিনজন ডিরেক্টর। পাঠ রপ্তানি কর্পোরেশনের কার্যাবলী ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পাটের রপ্তানি বাণিজ্যের যাবতীয় লেনদেন করবে রপ্তানি কর্পোরেশন। বেসরকারি পাট রপ্তানিকারক বা সরকারের মোট ব্যবসা সংক্রান্ত অন্য কোনো সংস্থা আরো বিদেশি ক্রেতাদের সাথে কোনো যোগাযোগ বা পাট সংক্রান্ত ব্যবসায়ী লেনদেন করতে পারবে না। তবে পাটের বর্তমান রপ্তানিকারকরা কর্পোরেশনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। কর্পোরেশন বিদেশি ক্রেতাদের সাথে রপ্তানি ও কথাবার্তা চূড়ান্ত করে রপ্তানিকারকদের কোটা নির্ধারিত করে দেবে এবং সে কোটা অনুযায়ী তারা কর্পোরেশনের মাধ্যমে পাট রপ্তানি করবেন। তিনি বলেন, পাট রপ্তানি কর্পোরেশনের নামেই এজেন্টরা বিদেশে পাট রপ্তানি করবেন। রপ্তানির পাটে কর্পোরেশনের মার্কা থাকবে এবং রপ্তানি সংক্রান্ত ব্যাপারে বিদেশি ক্রেতাদের ন্যায়সংগত দায়িত্ব বর্তাবে, কর্পোরেশনের ওপর। পরে অবশ্য কর্পোরেশনের নিকট সংশ্লিষ্ট এজেন্টকেই তার জন্য দায়ী হতে হবে। পাট নীতি ঘোষণা করে বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, পাটের রপ্তানি বাণিজ্য জাতীয়করণের সাথে সাথে সরকার পাট চাষিদের স্বার্থের দিকেই লক্ষ্য রাখবে। পাটের ন্যায্যমূল্য বেঁধে দেওয়া হবে এবং পাট চাষিরা যাতে সে মূল্য পেতে পারেন তার কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন জায়গায় পাটের ক্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। সরকারি সংস্থাগুলো ছাড়াও কর্পোরেশনের এজেন্টরা ক্রয় কেন্দ্র থেকে পাট কিনবেন। এতে চাষিরা সরাসরি এদের কাছে পাট বিক্রয় করে ন্যায্য মূল্য পেতে পারবেন। এছাড়া একর প্রতি পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করে সরকার চাষিদের খরচ কমানোর সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জাতীয়করণের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী। বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে পাট ব্যবসা জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পাট ব্যবসাকে সার্বিকভাবে জাতীয়করণের পথে এটাই প্রথম পদক্ষেপ। ধাপে ধাপে আমরা অভ্যন্তরীণ পাটের ব্যবসাকেও জাতীয়করণ করবো। বর্তমান পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ পাট ব্যবসাকে পুরোপুরিভাবে রাষ্ট্রায়ত্ব করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল কাঠামো পাট। আমাদের আমদানি নীতিও মূলতঃ নিশীল পাটের ওপর। পাট ব্যবসায়ের সাথেই দেশের ৭৫ হাজার লোক জড়িত এবং ৫০ লাখ পরিবার পাট ব্যবসায়ের ওপর নির্ভরশীল। রাতারাতি পাট ব্যবসাকে সার্বিকভাবে জাতীয়করণ করা হলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, রপ্তানি বাণিজ্য জাতীয়করণের ফলে পাট রপ্তানিতে দুর্নীতি বন্ধ হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা পাচারও আর হতে পারবে না। এর ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৰ্হিবিশ্বে পাটের মূল্য স্থিতিশীল হলে বিদেশি ক্রেতাদের পক্ষেও অনেক সুবিধা হবে। পাটের বিশ্ব বাজারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নানা কারণে বহির্বিশ্বে আমরা পাটের বাজার হারিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে আমরা বিশ্ব বাজারে মোট পাটের শতকরা মাত্র ২৮ ভাগ সরবরাহ করি। আমাদের সেই হারানো বাজার ফিরে পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে এবং বিশ্ব বাজারে পাট সরবরাহের শতকরা ৩০ ভাগ লাভে সচেষ্ট হতে হবে। তিনি বলেন, একর প্রতি পাটের উৎপাদন বাড়লে বিশ্ব বাজারে পাটের দাম কমানো যাবে। আমরা আবার বাজার ফিরে পাবো এবং পাটের আয় দিয়েই আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারবো। ইতোপূর্বে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সমিতির সভাপতি সৈয়দ আবুল খায়ের বলেন, পাটের ব্যবসা পুরোপুরি জাতীয়করণ করা সম্ভব। তবে তার জন্যে অনেক বাধা বিঘ্ন ডিঙ্গিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। পাট ব্যবসা পুরোপুরি জাতীয়করণ করা হলেও ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে। কাজেই পাটের নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে সমিতির পরামর্শ নেয়ার জন্যে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। এছাড়া দেশ গড়ার কাজে যে কোনো সরকারি প্রচেষ্টার সাথে সহযোগিতা করা হবে বলে সমিতির পক্ষ থেকে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।১০০
রেফারেন্স: ২৯ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ