You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.05.26 | শ্রমিক লীগের তিন নেতার বিবৃতি | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

শ্রমিক লীগের তিন নেতার বিবৃতি

জাতীয় শ্রমিক লীগের তিনজন নেতা এক যুক্ত বিবৃতিতে গণপরিষদ ও মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিপ্লবী সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন। শ্রমিক লীগের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ শাজাহান, সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল মান্নান ও যুগ্ম সম্পাদক জনাব রুহুল আমিন ভূইয়া যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, চীন ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অনুচরদের তৎপরতা, বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা হতে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশ আজ বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। গত কিছুদিন যাবৎ সারাদেশে এক বিরাট গণ-অসন্তোষ ও অব্যক্ত বিক্ষোভ বিরাজ করছে। অস্বাভাবিক খাদ্যাভাব, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, রিলিফ বণ্টনে চরম অব্যবস্থা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, পাকিস্তানি দালালদের অবাধ বিচরণ, প্রকাশ্য লুণ্ঠন, ডাকাতি, সশস্ত্র, দুষ্কৃতকারীদের নির্যাতন, প্রকাশ্য হত্যা, রাজনীতিকদের দুর্নীতি ও অরাজনৈতিক কার্যকলাপে দেশব্যাপী এক হতাশা ও নৈরাজ্য জনক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মূলে রয়েছে আমলাতন্ত্রের অসহযোগিতা মূলক মনোভাব, দুর্নীতি পরায়ণ আচরণ, বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত জাতীয়করণ কর্মসূচির প্রতি পুঁজিপতি ও শিল্পপ্রশাসকদের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ, অসৎ রাজনৈতিক ও কর্মীদের লাইসেন্স পারমিট, চাকুরিসহ সকল রকম সুযোগ সুবিধা আদায়ের বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন, সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের নিষ্ক্রিয়তা, অসাধু ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী ও মজুতদার কর্তৃক কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টি। শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, গত সাধারণ নির্বাচনে দেশবাসী ব্যক্তিগতভাবে কোনো প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। ভোটের মাধ্যমে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ওপর দেশবাসী আস্থা স্থাপন করেছে। বিবৃতিতে বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি করা হয়েছে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রয়োজন বোধে দেশপ্রেমিক দল সমূহ হতে পছন্দমতো লোক বাছাই করে বিপ্লবী সরকার গঠনের ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ওপর অর্পণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পূর্ণ সমাজতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা সম্বলিত খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও জনগণের আস্থা ভোট নিয়ে প্রস্তাবিত খসড়া শাসনতন্ত্র কার্যকরী করার ক্ষমতাও বঙ্গবন্ধুকে দিতে হবে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দুষ্কৃতকারী, দালাল, রাজাকার, আল-বদর ও শান্তি কমিটির লোকদের প্রকাশ্য বিচারের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তিদানের ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর হাতে প্রদান করতে হবে। অসৎ রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি পরায়ন আমলা ও কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের প্রকাশ্য বিচার ও শাস্তিদানে পূর্ণ ক্ষমতা প্রস্তাবিত বিপ্লবী সরকারের নিকট ন্যস্ত করতে হবে। পরিশেষে শ্রমিক লীগ নেতৃত্ববৃন্দ তাদের বিবৃতিতে বলেন, সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অপব্যবহার করে কিছু সংখ্যক চীন ও মার্কিনী ষড়যন্ত্রকারী এই অবস্থা সৃষ্টির প্রয়াস পায়। দেশবাসী এদেরকে মোকাবেলা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে আছে। এ দেশের শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, মধ্যবিত্ত শ্রেণি তথা সাত কোটি মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা সদা প্রস্তুত এই জন্যই জনগণ। জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করবেন না।৮৯

রেফারেন্স: ২৬ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ