You dont have javascript enabled! Please enable it! 1980.12.19 | গণতান্ত্রিক পার্টি গোটা জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে - নূরুল হুদা মির্জা | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮০ - সংগ্রামের নোটবুক

গণতান্ত্রিক পার্টি গোটা জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে
– নূরুল হুদা মির্জা | সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮০

নূরুল হুদা মির্জা (৫১) নবগঠিত গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯২৯, দিনাজপুর। রাজনীতি শুরু করেন ১৯ বছর বয়সে। সে বছরই কারাবরণ করেন। ১৯৪৯ সালে রেল ধর্মঘটের সমর্থনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করেন এবং কারারুদ্ধ হন। ৯ মাস বিচারাধীন থাকার পর ৪ মাস শাস্তি হয়েছিল।

১৯৪৯ সালে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন পান কিন্তু বয়স কম থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন নি। যুক্তফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ এফিডেফিট করিয়ে বয়স বাড়াতে বলেন – কিন্তু তিনি তাতে রাজী হন নি।

জনাব মির্জা ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত, বিখ্যাত বামপন্থী সাপ্তাহিক জনতার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ৮-৯ টি বই লিখেছেন।

নূরুল হুদা মির্জা দিনাজপুর জেলার প্রথম মুসলিম আইনজীবী কাদের বকশ – এর পুত্র। কাদের বকশ অবিভক্ত বাংলার ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন। প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা হাজী দানেশ ছিলেন জনাব মির্জার গৃহ শিক্ষক।

নূরুল হুদা মির্জা অবিবাহিত।

—–

প্রশ্নঃ এতগুলো রাজনৈতিক দল থাকা সত্ত্বেও আপনারা নতুন দল কেন গঠন করলেন এবং আপনাদের একতার পেছনে কি কি যুক্তি বা পছন্দ – অপছন্দ কাজ করছে?

উত্তর – আমরা মনে করি বর্তমান যে আর্থ সামাজিক ব্যবস্থা রয়েছে, সেই আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে যারা টিকিয়ে রাখছে, তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব খতম করে একটি দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক সরকার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র – ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ঐক্য একটা অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এই উপলব্ধির উপর দাড়িয়ে আমরা মূলত তিনটি রাজনৈতিক সংগঠন (ভাসানী ন্যাপ, জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন, গণফ্রন্ট) এই ধরণের একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করি।

কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন ইউপিপি’ র সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয় একটি পর্যায়ে এবং আমরা মোহাম্মদ তোয়াহার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দলের সঙ্গে আলোচনা করি। এক পর্যায়ে ইউপিপি’ র সাবেক সদস্যদের একটি অংশ আমাদের এই প্রচেষ্টায় নিজেদের যুক্ত করেন। এই আলাপ- আলোচনার ফলে ভাসানী ন্যাপ, জাগমুই, গণফ্রন্ট এবং সাবেক ইউপিপি সদস্যদের ঐক্যকামী অংশ এই ধরণের একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেন। আমরা একটি ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচীও তৈরী করি। এই ঘোষণাপত্র এবং কর্মসূচীও জাতীয় গণতান্ত্রিক কনভেনশনে গৃহীত হয়েছে। আমরা মনে করি এই মুহূর্তে যারা এই কেন্দ্রে যোগ দিতে পারছেন না বা দিচ্ছেন না, সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ এবং আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির বিরোধিতার ভিত্তিতে এবং দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের সঙ্গেও ভবিষ্যতে সহযোগিতা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

প্রশ্নঃ আপনার রাজনৈতিক দল কিভাবে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে?

উত্তর – আমরা বলেছি, দেশে সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে একটি সার্বভৌম পার্লামেন্ট চাই। যে পার্লামেন্টের মাধ্যমে জনগণ তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাই আমরা গড়ে তুলতে চাই।

প্রশ্নঃ আপনারা কি মনে করেন নির্বাচন ও পার্লামেন্টের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আসতে পারে?

উত্তর – যে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মসূচী আমরা উপস্থাপন করেছি তা বাস্তবায়িত করার জন্য পার্লামেন্টের ভেতরে এবং পার্লামেন্টের বাইরে সংগ্রাম করবো। এই সংগ্রামে যদি ব্যাপক জনগণ ঐক্যবদ্ধ হন, অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে, পরিবর্তন আসা সম্ভব।

প্রশ্নঃ দেশের বর্তমান প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আপনারা কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

উত্তর – বিরাজমান মূল রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে শাসক দলের কথা। রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত বিভিন্ন শ্রেণীর আশা আকাঙ্ক্ষার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। বিএনপি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। এ দল উপর থেকে মূলতঃ ক্ষমতার আসন থেকে হুকুম দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে৷ যার ফলে দলগতভাবে এর কোন ভিত্তি নেই। এ দল শাসন ক্ষমতায় থেকে আমাদের দেশে সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থরক্ষক আমলা মুৎসুদ্দি এবং আধা সামন্তবাদী শোষকদের পাহারাদার হিসেবে কাজ করছে। দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে এদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে দশ দলীয় জোট তৈরী হয়েছে আমরা মনে করি নামে ভিন্ন হলেও এরা মূলত রূশ – ভারতের সেবা করছে। সেজন্যে এ কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ‘আমরা জিয় সরকারকে অপসারণ করে যেমন একদিকে একটি দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সংগ্রাম করবো, তেমনি আমাদের লক্ষ্য হবে বাকশালের ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রচেষ্টাকে জনঘণের সাথে মিলে প্রতিহত করা।

প্রশ্নঃ বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা মূল কোন সমস্যাগুলো নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার চিন্তা – ভাবনা করছেন?

উত্তর – আমরা তিনটি বিষয়কে গোটা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। প্রথমতঃ জাতীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা, দ্বিতীয়তঃ স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিহত করা এবং তৃতীয়তঃ জনগণের শোচনীয় অর্থনৈতিক দূর্দশা মোচনের জন্য স্বাধীন অর্থনীতি গড়ে তোলার পথে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সংগ্রাম করা। আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ওপর আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির একচেটিয়া কর্তৃত্ব চূর্ণ করে জাতীয় পুঁজির বিকাশের পথ উন্মুক্ত করা।

প্রশ্নঃ এই বিষয়গুলো আদায়ের জন্য আপনারা কি শুধু নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবেন না অনিয়মতান্ত্রিক পথেও আন্দোলন করবেন?

উত্তর – আমরা পার্লামেন্টের ভেতরে এবং পার্লামেন্টের বাইরে সংগ্রাম করবো।

প্রশ্নঃ আপনাদের সঙ্গে অনেকেই আছেন যারা আগে পার্লামেন্টারী রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন না। আমরা কি ধরে নেবো তারা বর্তমানে সে অবস্থান বদলেছেন?

উত্তর – আমরা যে রাজনৈতিক কর্মসূচী, অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করেছি, সে কর্মসূচী গ্রহণ করে যারা এসেছেন, তারাই আমাদের দলের মধ্যে আছেন।

প্রশ্নঃ অনেকের ধারণা গণতান্ত্রিক পার্টিতে এ দেশের বহুধা বিভক্ত বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি আপনারা কি মনে করেন কমিউনিস্ট দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজ বা আপনাদের একতা কি তাদের ঐক্যবদ্ধ ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে?

উত্তর – আমরা মনে করি যারা আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থা – বিদেশী আধিপত্য এবং বিদেশী আধিপত্যের সামাজিক ভিত্তি আমলা মুৎসুদ্দি শ্রেণী এবং আধা সামন্তবাদী শোষকদের উৎখাতের জন্য লড়াই করছে বা করতে চায় তারা দেশপ্রেমিক শক্তি। তাঁরা কমিউনিস্ট হোন বা অকমিউনিস্ট হোন তাদের সকলের ঐক্যই আমরা কামনা করি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিগুলির যে ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্র আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি তা কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে কিনা আমি বলতে পারি না। তবে সাধারণভাবে দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের এই প্রাথমিক সাফল্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে গভীরভাবে আশা করি।

প্রশ্নঃ আপনাদের দল কোন শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে?

উত্তর – আমরা এমন একটি রাজনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ করেছি যা আমাদের সমাজ বিকাশের এই নির্দিষ্ট স্তরে জাতীয় ধনিক থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত ব্যাপক জনসাধারণের মৌলিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছে। সে অর্থে গণতান্ত্রিক দল গোটা জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করছে।

প্রশ্নঃ দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো কোন না কোন বহিঃশক্তিকে মিত্র বলে মনে করে। আপনারা কাকে মিত্র বলে মনে করেন?

উত্তর – আমরা মনে করি কোন দেশের জনগণের ভাগ্য কেবল সেদেশের জনগণই নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারেন। আজ সারা দুনিয়া জুড়ে বিভিন্ন দেশের জনগণ এভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করার লড়াই করে চলেছেন। বিভিন্ন দেশের এই সংগ্রামী জনতা এবং বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের ও ইসলামী দেশ গুলির সংগ্রামী জনতাই আমাদের মিত্র।

প্রশ্নঃ যে তিনটি রাষ্ট্র আজকের বিশ্ব রাজনীতিতে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ, সে তিনটি রাষ্ট্র সম্পর্কে আপনাদের মূল্যায়ন কি?

উত্তর – আমাদের মূল্যায়ন খুবই স্পষ্ট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশ। বিশ্বের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের আকাঙ্ক্ষা তার রয়েছে। সোভিয়েট ইউনিয়ন একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশ। এ কারণে বিশ্বের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েমের প্রচেষ্টায় সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। দুই আধিপত্যবাদী শক্তির মধ্যে দ্বন্দ্বই বর্তমান দুনিয়ার সকল অশান্তির মূল কারণ। অপর দিকে গণচীন একটি উন্নয়নশীল সমাজতান্ত্রিক দেশ। চীন আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের দেশের সঙ্গে চীনের অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে চীন অকুন্ঠ নীতিনিস্ট সমর্থন দিয়েছে। আমরা চীনের সঙ্গে আমাদের এই সুসম্পর্ক ও সহযোগিতা রক্ষা করতে চাই এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

প্রশ্নঃ আপনারা এখন যারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন, তারা অতীতে একই দলে ছিলেন। কিন্তু আপনারা বিভক্ত হয়ে যান। অতীতের বিভক্তিকে আপনারা কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

উত্তর – ঘটনাগতভাবে এটা নিতান্তই ঠিক যে আমরা একই ছিলাম। এটাও ঠিক আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছিলাম। এই বিভক্তি আমাদের দূর্বল করেছে। আমাদের জনগণ থেকে বহুল পরিমাণে বিচ্ছিন্নও করে ফেলেছিল। অনেক মূল্য দিয়ে এটা আমাদের বুঝতে হয়েছে। এটা ভুল হয়েছিল বা ভুল হয়নি এভাবে বিবেচনা না করে বরং বলা উচিৎ এটা ছিল নেতিবাচক কতগুলো অভিজ্ঞতা লাভের পর্যায়। যেহেতু আমাদের মধ্যে এই উপলব্ধি আরও গভীর হয়েছে, জনগণকে বাদ দিয়ে কিছু অগ্রণী লোকেরাই নিজেদের বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা দিয়ে সমাজকে পরিবর্তন করতে পারেন না সেহেতু বলা যায় আমাদের ঐক্যের ভিত্তি আজ অনেক বেশী জোরদার। নেতিবাচক অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও এটা বাস্তব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে পাওয়া। অভিজ্ঞতার একটা মূল্য বা নেতিবাচক তাকে আমরা কাজে লাগাতে পেরেছি। এটা আমাদের এক বড় সম্পদ।

প্রশ্নঃ পৃথিবীর সব দেশেই দেখা গেছে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাজনীতিবিদ দের মধ্যে সততার অভাব ঘটে। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের একজন রাজনীতিক যখন ক্ষমতায় আসীন হবেন তখন তার সততার রক্ষাকবচ কি হতে পারে?

উত্তর – আমরা মনে করি ক্ষমতায় গেলে প্রশাসকদের জনগণের সঙ্গে গভীর ভাবে যুক্ত করা এবং প্রশাসনের ওপর জনগণের তদারকি ব্যবস্থা কায়েম করার ওপরই প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এবং জনগণের পক্ষ হয়ে যারা শাসন কার্য পরিচালনা করেন তাদের মধ্য থেকে দূর্নীতি ও জনস্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপ দূর করা সম্ভব।

প্রশ্নঃ আপনারা যে তিনটি বিষয় বর্তমান জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তা কিভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব?

উত্তর – এ লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে হলে আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হবে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে আমাদের দেশে জাতীয় ধনিক শ্রেণী থেকে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত ব্যাপক জনগণকে ৩ টি লক্ষ্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে যেমন এই ঐক্য গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাব ঠিক তেমনি পার্টির বাইরে যে সমস্ত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তি আছে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তুলবো। এভাবেই যে জাতীয় আন্দোলন গড়ে উঠবে, সে আন্দোলনই সরকার পরিবর্তন ঘটাবে এবং দেশপ্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

প্রশ্নঃ এই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে কি আওয়ামী লীগ এবং জাসদ অন্তর্ভুক্ত?

উত্তর – আমাদের পার্টি আওয়ামী বাকশালকে দেশপ্রেমিক শক্তি মনে করে না। আর, জাসদ যদি দেশপ্রেমিক শক্তি হয় তাহলে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কেন?

প্রশ্নঃ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে নির্বাচনই কি একমাত্র পন্থা বলে আপনারা মনে করেন?

উত্তর – আমরা মনে করি আমাদের পার্টি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পার্লামেন্টের ভেতরে এবং পার্লামেন্টের বাইরে সংগ্রাম পরিচালনা করবে।

প্রশ্নঃ নির্বাচিত হলে পার্লামেন্টের ভেতরে সংগ্রাম করার সুযোগ পাবেন, এ নিশ্চয়তা আছে কি?

উত্তর – জনগণ এবং একমাত্র জনগণই চূড়ান্ত বিচারে সিদ্ধান্ত নেয় কারা ক্ষমতায় থাকবে, কারা ক্ষমতায় থাকবে না। জনগণ যদি চান আমরা ক্ষমতায় যাই, তাহলে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া রোধ করার শক্তি কারো নেই।

প্রশ্নঃ আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আপনারা বক্তৃতা, বিবৃতি, জনসভায় যে শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করেন, জনগণ সে শব্দ ও ভাষা বুঝতে পারেন না। এ অভিযোগ সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

উত্তর – এ অভিযোগ কতকাংশে ঠিক। সাধারণ মানুষের কথা বলার সময় সাধারণ মানুষের ভাষায় হাজির করা আমাদের আরও ভালভাবে শিখতে হবে। কিন্তু শুধু ঘরে বসেই শেখা যায় না। কাজ করতে করতেই জনগণের কাছ থেকে এটা আমরা শিখবো। অতীতে যেমন জনগণের কাছ থেকে অনেক শিক্ষা নিয়েছি।

প্রশ্নঃ দল হিসেবে গণতান্ত্রিক পার্টির এবং তার চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার জনপ্রিয়তা কিভাবে যাচাই করবেন?

উত্তর – আমরা মনে করি আমাদের দল নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যৌথ নেতৃত্বের নীতি অনুসরণ করবে। ইতিমধ্যে দলের যে স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হয়েছে তা একটি শক্তিশালী যৌথ নেতৃত্ব। এই নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই গত কয়েক যুগ যাবৎ জনগণের সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ বিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে থেকেছেন। দেশে এদের ব্যাপক পরিচিতিও রয়েছে। এবং চারটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। এরা ব্যাপক সংখ্যক ক্যাডার ও জনগণের আস্থাভাজন। নিজের সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, আমি এই যৌথ নেতৃত্বেরই একজন এবং এই নেতৃত্বের অন্যান্যদের মতই গত তিন দশক সাম্রাজ্যবাদ – সামন্তবাদ বিরোধী আন্দোলনের কাতারে থেকেছি এবং সাফল্য ও ব্যর্থতার অংশীদার হয়েছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের নতুন দল দেশকে এমন একটি নেতৃত্ব উপহার দিতে সক্ষম হবে যা যৌথ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এদিক থেকে আমার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার প্রশ্নটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।

প্রশ্ন – আপনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত থেকেও রাজনীতিকে মূল পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন কেন?

উত্তর – আমি এক সময় সাংবাদিকতা করতাম। তখনও আমি নিজের পরিচয় দিতে গেলে বলতাম, প্রথমে আমি একজন রাজনীতিক, পরে একজন সাংবাদিক। আমি মনে করি সমাজে কারও পক্ষেই রাজনীতি নিরপেক্ষ হয়ে বাঁচা সম্ভব নয়। সমাজ পরিবর্তনের যে সংগ্রাম একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য সকল মানুষের যে সাধনা, আমার কাছে রাজনীতি হলো তারই ঘনীভূত রূপ। তা থেকে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখার কথা আমি ভাবতেই পারি না। যারা মানুষের জন্য রাজনীতি করেন,আমার ধারণা তারা সকলে এজন্যই রাজনীতি করেন।

প্রশ্নঃ আপনার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কি?

উত্তর – সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতি।

সাক্ষাৎকার ও ছবিঃ মাহফুজউল্লাহ / কাজী জাওয়াদ।

***