এক হাজার কোটি টাকার জরুরি কর্মসূচী
দেশে অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা স্বাভাবিকিকরণ এবং সার্বিক উৎপাদন বাড়িয়ে তোলার উদ্দেশ্যে সরকার বর্তমানে একটি স্বল্পমেয়াদী পুনর্গঠন ও উন্নয়ন কর্মসূচি তৈরি করছেন। আগামি অর্থ বছরের অর্থাৎ ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেটের সঙ্গে দু’বছর মেয়াদী এক হাজার কোটি টাকার এই জরুরি কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। দেশের আগামি উন্নয়ন বাজেটের পরিমাণ ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা হতে পারে। এর অর্থ হবে এক হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন কর্মসূচির অতিরিক্ত। এই স্বল্পমেয়াদী পুনর্গঠন কর্মসূচি প্রথম পাচঁশালা পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজেট ও পুনর্গঠন কর্মসূচি ঘোষণার পরেই পাঁচশালা পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। আগামি ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় সারাদেশে কৃষি শিল্প ও খাদ্য ঘাটতি বাবদ মোট চাহিদার পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। প্রাথমিক হিসাবে বলা হয়েছে এই চাহিদা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জাতিসংঘ সংস্থাসমূহ ১৯৭২ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৭৩ সালের মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের প্রয়োজনের জন্যে ৯৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি কর্মসূচি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। তবে জাতিসংঘের সংস্থাসমূহের এই হিসেবের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার হিসেব এক নয়। বিশেষকরে বাংলাদেশে পুনর্বাসন, যোগাযোগ ও খাদ্যের খাতে প্রয়োজনের যে হিসাব ধরা হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। বাসস পরিবেশিত এই খবরে উল্লেখ করা হয় যে স্বল্পমেয়াদী পুনর্গঠন কর্মসূচির লক্ষ্য হবে আগামি দু’বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে যাতে পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের পূর্বাস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, সে জন্য শিল্প ও অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা। ওয়াকিফহাল মহল মনে করেন যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলে এবং সময়মতো সবকিছু পাওয়া গেলে এ লক্ষ্যে অবশ্যই পৌছানো যাবে। এছাড়া পুনর্গঠন কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষ যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সর্বোচ্চ সুফল লাভে সমর্থ হন তার নিশ্চয়তা বিধান করা। আর ঠিক এই কারণেই সরকার দু’বছর মেয়াদী পুনর্গঠন কর্মসূচি বাস্ত বায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কর্মতৎপরতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।৫৬
রেফারেন্স: ১৬ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ