You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.05.10 | স্বীকৃতির আগে পাকিস্তানের সাথে কোনো আলোচনা নয়- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

স্বীকৃতির আগে পাকিস্তানের সাথে কোনো আলোচনা নয়- বঙ্গবন্ধু

পাবনা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে সাথে কোনো আলোচনা হবে না। আজ বিকেলে এখানকার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু জানান যে, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে কিনা, তাই নিয়েই নাকি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জনাব ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সাথে আলাপ করার প্রস্তাব রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু । বঙ্গবন্ধু বলেন, , বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে না নেওয়া পর্যন্ত ভুট্টো সাহেবের সাথে কোনো কথা নয়। বিশ্বের দেশে দেশে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় কেতন আজ উড়ছে। অপরদিকে বিশ্বের দরবারে পাকিস্তান কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। যে প্রভুর কথায় ভুট্টো সাহেব নাচছেন সেই প্রভুই বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েছেন। । কাজেই আলোচনা হোক না হোক, , পাকিস্তান এখন বাধ্য হয়েই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। প্রধানমন্ত্রী আরো ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিচার হবেই। বাংলাদেশে মানবতার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে যারা ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ করেছে, বাংলার মাটিতে তাদের বিচার বিচার অবশ্যই হবে। আমার উপর যতই চাপ সৃষ্টি হোক না কেন, এ বিচার হবেই। বিশ্বের সভ্য দেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আপনারা ন্যূরেমবার্গের বিচার করেছিলেন। ন্যূরেমবার্গে যে নাৎসীদের বিচার করা হয়েছিল তার চেয়েও হাজার গুণ অপরাধে অপরাধী এই পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীরা। কাজেই এই পশুদের সম্পর্কে বাংলাদেশ যে ভূমিকা নিয়েছে তার প্রতি আপনারা সমর্থন দেন। বিচার অপরিহার্য। তবে বিনা বিচারে কাউকে শাস্তি দেয়া হবে না। বঙ্গবন্ধু বলেন, পাকিস্তানে আটক বাঙালিদেরকেও অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে। ভুট্টো সাহেবের জেনে রাখা উচিত শেখ মুজিব কখনো বাজে কথা বলে না। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য সক্রিয় রয়েছে। আপনারা সতর্ক থাকুন। সাম্রাজ্যবাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য আমি হয়তো আপনাদের ডাক দিতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কতিপয় দুস্কৃতকারী এখানে সেখানে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে চলেছে। এই সশস্ত্র দুষ্কৃতকারীরা ডাকাতি আর লুটতরাজে লিপ্ত রয়েছে। এদের ধরে আপনারা পুলিশের হাতে সোপর্দ করুন। প্রয়োজন হলে পুলিশ অস্ত্র দিয়েই এদের মোকাবেলা করবে। কিন্তু তবুও সাধারণ মানুষকে আর দুর্ভোগ পোহাতে দেয়া হবে না। যুদ্ধোত্তর সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করে এই সংকট এড়ানো সম্ভব। মিল-কারখানা গুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কঠোর পরিশ্রম করার জন্যেও তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় যোগাযোগ মন্ত্রী মনসুর আলীও ভাষণ দেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু আজ এখানে এসে পৌঁছালে তাকে বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। আগামীকাল সকাল সাড়ে নয়টায় তিনি রংপুর যাচ্ছেন। সেখানেও তাঁকে বিপুল সংবর্ধনা জানানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটায় তিনি রংপুর কালেক্টরেট ময়দানে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। ৩৪ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংকের মনোভাব বদলেছে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংকের পূর্বতন মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রাবার্ট ন্যাকনামারা বাংলাদেশ সফরে এসে এরকম একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের বিশ্বব্যাংকের যে অর্থ বিনিময় করা হয়েছে তা পরিশোধের আগে নতুন অর্থ সাহায্যের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে না। কিন্তু তার এই ইঙ্গিত সত্ত্বেও বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। এবারের বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার সময় মি. কারগিল উক্ত অর্থ পরিশোধের প্রশ্ন তোলেন নি। বরং অর্থের অভাবে যেসব প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে সেগুলোর কাজ আবার চালু করার উদ্দেশ্যে নতুন করে বিশ্বব্যাংকের সাহায্য দানের বিষয়ে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ যেহেতু এখনো বিশ্বব্যাংকের সদস্যপদ লাভ করেনি সেই কারণে বিশ্বব্যাংক এই মুহুর্তে বাংলাদেশকে অর্থ সাহায্য দানে সক্ষম নয়। কিন্তু বাংলাদেশের আশু প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে সুইডিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে একটি বিশেষ ব্যাবস্থার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী কালে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক পরে এই অর্থ সুইডিশ উন্নয়ন সংস্থাকে পরিশোধ করবে।৩৫

রেফারেন্স: ১০ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ