দেশের শত্রুদের নির্মূল করতে তৈরী হোন, প্রয়োজন হলে আবার অস্ত্র দেবো- বঙ্গবন্ধু
রাজশাহী। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ এখানে বলেন, জনগণ ত্যাগ স্বীকার না করলে এবং নিষ্ঠার সাথে কঠোর পরিশ্রম না করলে দেশকে গড়ে তোলা যাবে না। সোনার বাংলা গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু বলেন, সোনার বাংলা হবে শোষণমুক্ত বাংলা। এখানে মাঠে মাঠে ফলবে আবার সোনার ফসল, মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে হাসির ছটা। এখানকার মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। শ্রোতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন আপনারা কাজ করুন, কঠোর পরিশ্রম করুন, আমার সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্নকে আপনারা সফল করুন। বৈদেশিক সাহায্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শর্তযুক্ত কোনো ঋণ আমরা নেবো না। ভবিষ্যত বংশধরদের দাসে পরিণত করার জন্য আমরা শর্তযুক্ত ঋণ নিতে পারি না। বিশাল জনসমুদ্রকে জনসমুদ্রকে জনসমুদ্রকে লক্ষ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, আপনাদের ঐক্য আছে, আপনাদের প্রজ্ঞা আছে। তিনটি বছর আপনারা কঠোর পরিশ্রম করুন, করুন, করুন, আমি নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করি, করি, করি, তাহলে দেশ আবার সোনার বাংলা বাংলা বাংলা হয়ে উঠবে। জনগনকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, অনেক মূল্যের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। হয়েছে। হয়েছে। কিন্তু দেশের শত্রুরা শত্রুরা শত্রুরা এটাকে মেনে নিতে পারছে না। এই স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে তারা সক্রিয়। এর জন্যে তারা বিপুল পরিমাণ টাকাও পরিমাণ টাকাও পরিমাণ টাকাও পাচ্ছে। এধরনের কিছু সংখ্যক দালালকে এরমধ্যেই আটক করা হয়েছে। আরো কিছু রয়ে গেছে এখনো বাহিরে। এরা অস্ত্র সমর্পণ করেনি। এরা মুক্তিবাহিনীর ভেক ধরেছে। কিন্তু আসলে তারা তা নয়। এরা ডাকাতি করে বেরাচ্ছে, নিয়োজিত রয়েছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কাজে। এই গনবিরোধী ব্যাক্তিদের শায়েস্তা করার জন্য দরকার হলে পুলিশকে অস্ত্র ব্যাবহারের নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে জনগন পুলিশের সাথে সহযোগিতা করবে আমি এটা চাই। বঙ্গবন্ধু সমবেত জনগনকে বলেন, আপনারা লাঠি নিয়ে তৈরি হ’ন দেশের শত্রুদের নির্মূল করার জন্যে, প্রয়োজন হলে আমি আবার আপনাদের অস্ত্র দিবো। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা বৃথা যেতে দিবো না। কারো নাম উল্লেখ না করে না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সাময়িক দুঃখ কষ্টে কতিপয় ব্যাক্তি আজ কুম্ভীরাশ্রু বর্ষন করছে। বক্তৃতা বাজি ছাড়া এরা জীবনে কোনোদিন জনগণের কল্যাণ করেনি। জনগণের কাজে এদের কেউ বাধা দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা লুকিয়ে ছিল। আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে। এই ধরনের লোকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা একটা গ্রাম বেছে নিচ্ছেন না কেন? কেন সেই গ্রামে নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন না? অন্তত এটুকু করেও আপনারা জনগণের কিছুটা কল্যাণ করতে পারেন। এদের সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের একটি লোককেও না খেয়ে মরতে দেয়া হবে না। বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য শষ্য এসে পৌঁছেছে। এবং আরও খাদ্য শষ্য আসছে। চোরাকারবারী ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন যে, এরা যদি সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ না করে তাহলে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।২৭
রেফারেন্স: ৯ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ