পুরোনো মনোবৃত্তি ছেড়ে জনগণের খাদেমরূপে কাজ করুন- বঙ্গবন্ধু
বিদেশি শক্তির যোগসাজশে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্র নির্মূল করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বিদেশের যোগসাজসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বানচালের চেষ্টা করা হলে সেই ষড়যন্ত্রের বীজ সমূলে উৎপাটিত করা হবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় কারিগরি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সম্বর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে বঙ্গবন্ধু এই কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ডাক দিলে আপনারা আবার হাতিয়ার নিয়ে এগিয়ে আসবেন। প্রয়োজন হলে প্রিয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমাদের সম্মিলিত শক্তি আমরা আবার প্রমাণ দিব। বঙ্গবন্ধু বলেন, যারা আইয়ুবের টাকা খেয়ে বিদেশ গিয়েছে, যারা সারা জীবন শুধু সমালোচনা করে কাটিয়েছে, তারা জানে শুধু গন্ডগোল বাধাতে। গঠনমূলক কাজ তারা কোনো দিন করে নি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামে তাদের দেখি নাই। সংগ্রামকালে সীমান্ত এলাকায় তারা কোনোদিন আসেনি আর আজ তারা হুমকি দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, নতুন স্বাধীনতালব্ধ কোনো দেশ এতো অল্প সময়ে সমালোচনা করার অধিকার দেয় না। কিন্তু তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই এদের কিছু বলছেন না। তিনি বলেন, এটা তার দূর্বলতা নয়। নিছক গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস ও ভালবাসা। কাজেই, গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতার সুযোগের অপব্যবহার করে ষড়যন্ত্রকারীরা যদি অধিক খেলায় মেতে ওঠে, তাহলে তিনি জনগণকে আবার ডাক দিবেন বলে ষড়যন্ত্রকারীদের পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দেন। সেক্রেটারিয়েট কর্মচারী সমিতির সভাপতি জনাব সিরাজুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্বর্ধনা সভায় বঙ্গবন্ধু অস্ত্র গোপনকারী দুষ্কৃতকারীদের পাকড়াও করার আহ্বান জানান। তিনি প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও বেতন বৃদ্ধির জন্যে পে-কমিশন নিয়োগের উল্লেখ করে কর্মচারীদের সততার সাথে কাজ করতে বলেন। চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধেও তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। অগোপনকারীদের ধরতে হবে : বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেন, কতিপয় দুষ্কৃতিকারী অস্ত্র গোপন করে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি ও লুটতরাজ চালাচ্ছে। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এরা রাজাকার ও আলবদরের সদস্য। এদেরকে ধরার দায়িত্ব দেশবাসীর এবং অবশ্যই তাদের ধরতে হবে। সরকারি পর্যায়ে এদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সততার সাথে কাজ করুন : বঙ্গবন্ধু সরকারি কর্মচারীদের সততার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে কিছু কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আজ শেখ মুজিব আছেন। একবার বলে দিলে আর রক্ষা থাকবে না। পুরোনো মনোবৃত্তি ত্যাগ করে তিনি সরকারি অফিসার ও কর্মচারীদের জনগণের সেবকের মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে বলেন। হানাদার পাকিস্তানি বাংলাদেশে যে পরিমাণ ক্ষতি সাধন করেছে, তার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, এই ক্ষতি ১০ বছরে পূরণ করার
নয়। তবে, সরকারি কর্মচারীরা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেলে ৩ বছরের মধ্যেই এই ক্ষতি ক সব হবে বলে তিনি আশী প্রকাশ করেন। কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা দানের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেন না। কাজেই সময় ও সুযোগ মতে তাদের সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা তার সরকার অবশ্যই দিবেন। তাদের ঠকাতে পারি না : পল্লীর জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, এরা এতো দুঃখী যে দু-বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কোনো ক্রমেই ‘অমিরা তাদের ঠকাতে পারি না।
রেফারেন্স: ৪ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ