You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.05.04 | ইন্দিরা-মুজিব-ভুট্টো শীর্ষ বৈঠক বাঞ্চণীয় | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

ইন্দিরা-মুজিব-ভুট্টো শীর্ষ বৈঠক বাঞ্চণীয়

পশ্চিম বাংলা কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও সফররত ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের নেতা জনাব আবদুস সাত্তার বলেছেন, ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাঝে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ইন্দিরা-মুজিব-ভুট্টো শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠান বাঞ্ছনীয়। আর এই বৈঠকের পূর্ব শর্ত হিসেবে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর অবশ্যই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে। নিতে হবে। দৈনিক বাংলার প্রতিনিধির সাথে এক বিশেষ সাক্ষাতকারে কংগ্রেস নেতা জনাব আবদুস সাত্তার অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, উপমহাদেশে অবাঞ্ছিত উত্তেজনা উপশমের জন্য ইন্দিরা- মুজিব-ভুট্টো শীর্ষ বৈঠকের গুরুত্ব অপরীসিম। এই তিন দেশে শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হলে প্রতিরক্ষা খাতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়, তা জনগণের সার্বিক কল্যাণে ব্যয় করা সম্ভব হবে। তাছাড়া উপমহাদেশের জনগণের মুক্তির লক্ষ্য হিসেবে সমাজতন্ত্র কায়েমের পথও প্রশস্ততর হবে। উল্লেখ্য যে, গত সোমবার তিন সদস্য বিশিষ্ট ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিনিধ দল বাংলাদেশ সফরে আসেন। এই প্রতিনিধি দলের অপর দুইজন সদস্য হচ্ছেন নিখিল ভারত জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকদ্বয় ড, শংকর দয়াল শর্মা ও শ্রী রনজিং যাদব। দলের নেতা জনাব আবদুস সাত্তার ১৯৭১ সালের জুনে পশ্চিম বাংলা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে ২০ মার্চ তিনি প্রাদেশিক কৃষিমন্ত্রী পদে শপথ নেন এবং ৩০-এ মার্চ সে কারণে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি পদে ইস্তেফা দেন। তিনি পশ্চিম বাংলা কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি সহকারী নেতা নির্বাচিত হন। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিদ্ধার্ত রায় এখনো বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হননি, সেহেতু জনাব আবদুস সাত্তার বিধান সভার নেতার পদেও অধিষ্ঠিত রয়েছেন। আসছে ৪ জুন মালদহ নির্বাচনী এলাকায় যে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্ত শংকর রায় উক্ত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। সাক্ষাৎকারে জনাব আবদুস সাত্তার বলেন, প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর এখন কঠিন পরীক্ষা। মুরব্বিদের পরামর্শে এখনো যদি তিনি বাস্তবতা ও শান্তির পথ থেকে বিমুখ থাকেন তাহলে তার পতন অবধারিত। বাংলাদেশর মুক্তির আন্দোলন পাকিস্তানের নির্যাতিত জনগণের মাঝেও গভীর প্রভাব বিস্তার করবে। এক প্রশ্নের জবাবে জনাব সাত্তার বলেন, ভারতেও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এজেন্টরা ভারত- বাংলাদেশ-সোভিয়েত বন্ধুত্বকে বিনষ্ট করার কাজে তৎপর রয়েছে। তবে কৌশলটি ভিন্নতর ও আধুনিক। মার্কিন দালালরা প্রকাশ্যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী। জনগণকে বিভ্রান্ত করার এটি একটি নতুন ধারা। সুযোগ পেলেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী বিরোধী প্রচারণা জুড়ে দেয়া হয়। প্রশ্ন: বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী চুক্তির বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচার হয় না? আব্দুস সাত্তার : এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো সহজ নয়। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বের প্রতি সর্বভারতের জনগণের গভীর আস্থা রয়েছে। আর বাংলাদেশের প্রতি রয়েছে গভীর ভ্রাতৃত্ববোধ। এটা কোনো ফাকাবুলি নয়। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রচারণা ঠাই পাচ্ছে না তেমন। ভারত বাংলাদেশ বন্ধুত্ব অক্ষুন্ন থাকবে এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত।

রেফারেন্স: ৪ মে ১৯৭২, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ