দিকে দিকে মুক্তিবাহিনীর বিজয় অভিযান
নবাবগঞ্জ : আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, গত ২৪শে নভেম্বর হানাদার বাহিনীর একটি শক্তিশালী উদ্ধারকারী দল নবাবগঞ্জ অভিমুখে যাত্রা করলে পথিমধ্যে জল্লাইলে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী এক অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৯ জন হানাদার সৈন্য নিহত করেন। সংবাদে প্রকাশ, একই দিনে হানাদার বাহিনীর অপর একটি দল নবাবগঞ্জ হতে বাগমারা পৌছুলে মুক্তিবাহিনী তাদের উপর প্রবল আক্রমণ চালিয়ে ৫ জনকে খতম করে। পরের দিন নবাবগঞ্জ ছাউনি থেকে হানাদার বাহিনীর সম্মিলিত দলটি ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করলে পতিমধ্যে কুমারগঞ্জ ও খারশুলে আমাদের বীর মুক্তিসেনারা। দু’বার প্রবল আক্রমণ চালিয়ে যথাক্রমে ৭ ও ৩ জন খান সেনাকে খতম এবং কয়েকজনকে আহত করে। একই দিনে আগলা গ্রামে আমাদের অতন্দ্র গেরিলাদের হাতে ২টা চাইনীজ রাইফেল ও ৪ শত রাউন্ড গুলিসহ একজন রাজাকার ধরা পড়ে। এ রিপাের্ট লিখা পর্যন্ত সংঘর্ষের বিস্তারিত সংবাদ আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি।
সিরাজদিখান
আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, গত ২১ নভেম্বর সিরাজদিখান থানায় এক দুর্বার আক্রমণে আমাদের বীর মুক্তিসেনাদের হাতে ৩ জন খান সেনা নিহত এবং ৬০ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। এ সংঘর্ষে একটি ওয়্যারলেস সেট, ১টি তিন ইঞ্চি মর্টার, ২টি হালকা মেশিনগান এবং ৬০টি রাইফেলসহ ২ হাজার রাউন্ড গুলী মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। সংবাদে আরাে প্রকাশ, এ এলাকার কুখ্যাত দালাল মজিদ মুন্সি আমাদের গেরিলাদের হাতে ধরা পড়লে দেশদ্রোহিতার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
যশাের : গত ২২শে নভেম্বর আমাদের দুর্ধর্ষ মুক্তিবাহিনী যশাের রণাঙ্গনে এক সম্মুখ যুদ্ধে হানাদার পাকবাহিনীকে পর্যদস্ত করে। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে ১৫০ জন পাকসেনা নিহত এবং অসংখ্য আহত হয়। হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের সম্মুখে টিকতে না পেরে তাদের ঘাটি ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্তিবাহিনী বিপুল এলাকা মুক্ত করে যশাের ক্যান্টনমেন্টের দিকে এগিয়ে যায়। এ রিপাের্ট লিখা পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্টের কাছে যুদ্ধ চলছিল। মুক্তিবাহিনী যশাের বিমান বন্দরে আক্রমণ চালিয়ে সেখানকার কন্ট্রোল টাওয়ার বিধ্বস্ত করে হানাদারদের যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
চাঁদপুর :
আমাদের অতন্দ্র নৌ-কমান্ডােরা গত ১০ নভেম্বর চাঁদপুরে হানাদার দস্যুদের একটি গানবােট ডুবিয়ে দেয়। গানবােটের আরােহী দস্যুরা জলে নিমজ্জিত হয়ে প্রাণ হারায়।
চাপাইনবাবগঞ্জ :
রণাঙ্গন থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি ইসলামপুরে হানাদার পাকবাহিনীর একটি ঘাঁটির উপর প্রবল আক্রমণ চালিয়ে আমাদের মুক্তিসেনারা ৫০ জন খানসেনা এবং ২০০ জন রাজাকারকে খতম করে। এ সংঘর্ষে আমাদের ৫ জন বীর মুক্তিযােদ্ধা শহীদ হন।
সিরাজগঞ্জ :
গত ১৩ই নভেম্বর আমাদের দুর্ধর্ষ গেরিলারা এক অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে সেলিম রেজা নামক একজন ক্যাপ্টেনসহ ৪০ জন পাকসেনাকে খতম করে। এ সংঘর্ষে ২টি মর্টার, ৩টি হালকা মেশিনগান এবং ৩৮টি রাইফেলসহ বেশকিছু গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়।
সিলেট :
গত ২৩শে নভেম্বর আমাদের বীর মুক্তিযােদ্ধারা রহীমপুর ও কানাইঘাট এলাকায় পাকবাহিনীর দুটি শক্ত ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালিয়ে ৭০ জন পাকসেনাকে খতম করে। উক্ত ঘাটি দুটি এখন সম্পূর্ণ মুক্তিবাহিনীর অধিকারে রয়েছে।
রংপুর :
গত সপ্তাহে আমাদের গেরিলারা রংপুরে এক সফল অভিযান চালিয়ে ১ জন মেজরসহ ১২৪ জন খানসেনাকে খতম করে। সংঘর্ষে ৬টি মর্টার ও ৩টি হালকা মেশিনগানসহ বেশ কিছু গােলাবারুদ গেরিলাদের হস্তগত হয়। পাক বিমান বিধ্বস্ত : গত ২২শে নভেম্বর পাক বিমান বাহিনীর ৪টি সেভর জেট বিমান ভারতের আকাশসীমা লংঘন করলে ভারতের বিমান বাহিনী ৩টিকে গুলি করে ভূপাতিত করে। বিমানের ১ জন পাইলট নিহত এবং পারভেজ মেহেদি ও খলিল আহমেদ নামক অপর দুজন বন্দী হয়।
বাংলাদেশ (৪) ১: ৫ ৪
২৬ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯