পরিষ্কার রাস্তা: ছয়-দফা
ভাইয়েরা ও বােনেরা,
আমরা আমাদের সহকর্মীদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট পথে যাওয়ার স্থির সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর অনেক ভাঙাগড়া হলাে। ১৯৬৬ সালে আমার দেশবাসী জানতে চায়, পরিষ্কার রাস্তা কোথায়? বাঙালি চায় কী? তাদের সামনে কী আছে? তখন ডিফেন্স অব পাকিস্তান রুল নামে একটা পদার্থ ছিল। ফান্ডামেন্টাল রাইটস ছিল না, আইয়ুবী শাসন চলছিল তখন বাংলার মাটিতে। অত্যাচারের স্টিমরােলার চলছিল বাংলার মাটিতে—আমাদের চোখের সামনে। আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে। বসলাম-পরিষ্কার পন্থা দিতে হবে। বাংলার মানুষকে আর আমরা এভাবে শােষিত হতে দিতে পারি না। মানুষের একদিন মরতে হয়। আমরা বহু অত্যাচার সহ্য করেছি। দরকার হলে আরাে অত্যাচার সহ্য করব। কিন্তু পরিষ্কার রাস্তা দেখাতে হবে। ওদের সঙ্গে আমরা থাকতে পারি না। আমার বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে হবে। বাংলার অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। শােষণহীন সমাজ গড়ে তুলতে হবে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে বাংলার মানুষ তা কোনদিন করতে পারবে না। এর উপায় কী?
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বরতে চাই, যারা মনে করেন রাতের অন্ধকারে গুলি করে কিংবা একটা রেললাইন তুলে দিয়ে টেরােরিজম করে বিপ্লব হয়, তাঁরা কোথায় আছেন, তাঁরা জানেন না, এই পন্থা বহু পুরনাে পন্থা। এই পন্থা দুনিয়ায় কোনদিন কোন কাজে লাগে নাই। এ পন্থা দিয়ে দেশের মানুষের কোন মঙ্গল করা যায় না। একটা রাস্তা ভেঙ্গে দিয়েও একজন লােককে অন্ধকারে হত্যা করে শুধু শুধু মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। এই টেরােরিজম দিয়ে দেশের বিপ্লব হয় না, হয় নাই, হতে পারে না। জনগণকে ছাড়া, জনগণকে সংঘবদ্ধ না করে, জনগণকে আন্দোলনমুখী না করে এবং পরিষ্কার আদর্শ সামনে না রেখে কোনরকম গণআন্দালন হতে পারে না এবং সেখানে কোন বিপ্লব হতে পারে না। দুঃখের বিষয়, অনেকে এখনাে টেরােরিজম-এ বিশ্বাস করেন। যাই হােক, ভবিষ্যতে তাদের ভুল। ভাঙ্গবে। সময় থাকতে না ভাঙ্গলে তাদের ক্ষতি বেশি হবে। জনগণের ক্ষতি তাে হবেই , কিন্তু তাদেরও ক্ষতি হবে।
পরিষ্কার রাস্তা হিসাবে ১৯৬৬ সালে ছয়-দফা দেওয়া হলাে। আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করবেন বলে হুমকি দিলেন। আইয়ুব খান বােকা ছিলেন না। আইয়ুব খান বুঝতে পারলেন, ছয়-দফা আওয়ামী লীগ কেন দিয়েছে? এর পিছনে উদ্দেশ্য কী? পাকিস্তানিরা বুঝতে পেরেছে, এর উদ্দেশ্য কী? এবং আমরা জানতাম আমাদের উদ্দেশ্য কী ও কোথায় আমরা যাবার চাই। কী আমরা বােঝাতে চাই।