ছয়-দফা কর্মসূচীর প্রশ্নে আপত্তি
ছয়-দফা কর্মসূচীর প্রশ্নে যে সকল আপত্তি তােলা হইয়াছে, ধীরস্থিরবাবে পরীক্ষা করিলে দেখা যায় যে, এই সকল আপত্তি বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করার সুপরিকল্পিত পন্থা বিশেষ। বাংলাদেশের ৭ কোটি অধিবাসীর উপর ঔপনিবেশিক শােষণ এবং দেশের অপর অংশের কায়েমী স্বার্থের সুবিধার জন্য বাংলাদেশের সম্পদ হস্তান্তর প্রধানত কেন্দ্র কর্তৃক বৈদিশিক বাণিজ্য, বৈদিশিক সাহায্য এবং বৈদিশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের মারফতেই করা হইয়াছে। এইভাবেই বিদেশ হইতে প্রাপ্ত সাহায্যের শতকার ৮০ ভাগের অধিক পশ্চিম পাকিস্তানে কায়েমী স্বার্থবাদীদের কল্যাণেই ব্যবহার করা হইয়াছে। গত ২৩ বৎসরে মােট আমদানির দুই-তৃতীয়াংশেরও অধিক পশ্চিম পাকিস্তানেই করা হইয়াছে। পাঁচ কোটি টাকার উপর বাংলাদেশের অর্জিত বৈদিশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যবহৃত হইয়াছে। পশ্চিম পাকিস্তানের কতিপয় শিল্পপতির কল্যাণে ৭ কোটি অধিবাসী অধ্যুষিত বাংলাদেশকে একটি সংরক্ষিত বাজার হিসাবে ব্যবহার করা হইয়াছে। এই শিল্পপতিরা বাংলাদেশকে শােষণ করিয়া মুনাফার পাহাড় গড়িয়া তুলিয়াছেন। এই নির্মম শােষণের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আসন্ন ধ্বংসের মুখে আসিয়া উপনীত হইয়াছে। দুর্ভিক্ষ প্রপীড়িত এবং জীবনের নূন্যতম প্রয়ােজন হইতে বঞ্চিত বাংলাদেশের মানুষ আজ চরম নিঃস্ব অবস্থায় আসিয়া পৌছিয়াছে। কোনমতেই আমরা এই অবস্থা চলিতে দিতে পারি না।
কেন্দ্রর হাতে বৈদেশিক বাণিজ্য ও সাহায্য না থাকিলে অনুরূপ শােষণ চালাইয়া যাওয়া সম্ভব হইত না।
আজাদ, ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১