৬ দফা আদায়
বৃষ্টি বৃষ্টি আর বৃষ্টি। গতকাল সারাদিন ও সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। দেশের অবস্থাও খুবই ভয়াবহ। বৎসরে দুইবার বন্যা, তারপর আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শুনলাম, ঢাকা শহরের অধিকাংশ জায়গা বন্যার পানিতে ডুবে গিয়াছে। আমি যে ঘরটাতে থাকি এটা বােধহয় দুইশত বৎসরের পুরানা। সমস্ত জায়গা দিয়েই বােধহয় পানি। পড়ে। গত রাতটা কোনােমতে কাটাইয়াছি। সামান্য একটু জায়গা প্রায়ই ফাঁক আছে, যেখান দিয়ে পানি পড়ে না। ঘরটার ভিতরে পানির ঢেউ খেলেছে সারাদিন। তিনজন লােক আমার জিনিসপত্র রক্ষা করতে ব্যস্ত রয়েছে। বিছানা থেকে নামার উপায় নাই। খবর পেয়ে জেলার সাহেব, ডেপুটি জেলার সাহেব ও জমাদার সাহেবরা এসেছিলেন। বললেন, ‘কি করে এখানে থাকবেন? পাশেই নতুন ২০ সেলের একটা চার সেলের ব্লক আছে, সেখানে থাকুন।’ বললাম, ‘সেলের ভিতর, তার উপর পায়খানা-প্রস্রাবখানা নাই, কেমন করে থাকব? একটা টিন দিয়ে দিবেন ওতে আমার চলবে না। আমাকে ভাল জায়গা দিতে হলে সরকারের অনুমতি লাগবে, কি বলেন? রাতে ঘুমাব না, তাতে কি হবে? জীবনে। অনেক দিন না ঘুমাইয়া কাটাইছি। যদি স্বায়ত্তশাসন ও ৬ দফা আদায় করে নিতে পারি নিব। তবে আমরা রাজবন্দিরা তাে খুনী, ডাকাত, একরারীর থেকেও আজকাল খারাপ! দেখুন পুরানা ২০ সেলে রণদা সাহেব বার-এ্যাট-ল’, বাবু চিত্ত সুতার ভূতপূর্ব এমপিএ, আবদুল জলিল এডভােকেট, দুইজন ছাত্র-একজন এমএ পরীক্ষা দিবে নূরে আলম সিদ্দিকী, আর একজন বিএ পরীক্ষা দিয়েছে কামরুজ্জামান। আরও আছে শংকর বাবু, পুরানা রাজনৈতিক কর্মী বাড়ি রংপুর, আরও কয়েকজনকে রেখেছেন। তাদের অবস্থা কি? উপর দিয়ে পানি পড়ে। দরজা দিয়ে পানি ঢােকে, একটা করে টিনের পায়খানা। ৭ সেল অনেক ভাল। সেখানে রেখেছেন একরারীদের, আরও অনেক জায়গা ভাল আছে সেখানেও রাখতে পারেন, কিন্তু রাখবেন না। কষ্ট দিতে হবে। আপনারা আমাদের বাধ্য করেছেন মােকাবেলা করে দাবি আদায় করতে।
কারাগারের রােজনামচা, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬