You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.04.24 | যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির প্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলার প্রথম আমদানি নীতি ঘোষণা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির প্রেক্ষিতে স্বাধীন বাংলার প্রথম আমদানি নীতি ঘোষণা

স্বাধীন বাংলাদেশের আমদানি নীতি সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭২ সালে জানুয়ারি জুন মৌসুমের জন্য এই আমদানি নীতিতে আমদানিযোগ্য পণ্যের একটি মাত্র তালিকা দেওয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী সময়ে আমদানিযোগ্য পণ্যের চারটি তালিকা দেওয়া হত। এই চারটি তালিকা হলো যথাক্রমে লাইসেন্স যোগ্য তালিকা, অবাধ তালিকা, ক্যাশ- কাম বোনাস এবং বোনাস তালিকা। বর্তমান আমদানি নীতিতে উক্ত চারটি তালিকার স্থলে আমদানিযোগ্য পণ্যের একটি মাত্র তালিকা সন্নিবেশিত হয়েছে। অবাধ তালিকা বাতিল করা হয়েছে এবং একমাত্র আমদানি লাইসেন্সের ভিত্তিতেই পণ্য আমদানি করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম, আর সিদ্দিকী অপরাহ্নে এক টেলিভিশন ভাষণে নয়া আমদানি নীতির বৈশিষ্ট্যসমূহের প্রতি আলোকপাত করেন। আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকা হতে সকল প্রকার বিলাস দ্রব্য বাদ দেওয়া হয়েছে, মোটর গাড়ি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক, রেফ্রিজারেটর, ইলেকট্রিক কুকার, দামী ঘড়ি, দামী কলম, বাইনোকুলার, চীনা মাটির বাসন পত্র প্রভৃতি আমদানি করা চলবে না। উল্লেখযোগ্য যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির উপযোগী করেই আমদানি নীতি প্রণয়ন করা হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এম, আর, সিদ্দিকী তার টেলিভিশন ভাষণে উল্লেখ করেন যে, কতিপয় পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে নবাগতদের সুযোগ দেয়া হবে। এই ক্ষেত্রে মুক্তি সংগ্রামকালে নির্যাতিতদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। জনাব সিদ্দিকী বলেন যে, অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে। কোনো ব্যক্তিকেই একাধিক পণ্যের জন্য লাইসেন্স দেয়া হবে না এবং কাউকেই এক আমদানি মওসুমে ২০ হাজার টাকার অধিক লাইসেন্স দেয়া হবে না। মন্ত্রী জনাব সিদ্দিকী বলেন যে, যত দূর সম্ভব সরকারি খাতেই পণ্য আমদানি করা সরকারের লক্ষ্য। তবে সরকারি কাঠামোতে সবকিছু আমদানির ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় বলে বেসরকারি খাতেও আমদানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন যে, কতিপয় অপরিহার্য কারণে ইতোপূর্বে আমদানি নীতি ঘোষণা করা সম্ভব হয় নাই। তবে ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। বর্তমান আমদানি নীতিতে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি হতে ৬ মাসের জন্য কার্যকরি বলে ধরা হবে। বশাই তার ৩ মাস ইতোমধ্যেই অতিক্রান্ত হয়েছে। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশ ধারে ক্রয়ের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বই পত্র এবং বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠাসমূহকে সরাসরি লাইসেন্স দেয়া হবে। আমদানি বাণিজ্য হতে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের স্ক্রীনিং করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জনসাধারণের সুবিধার্থে সরকার সিলেট ও রংপুরে দুইটি নতুন আমদানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামি ১ জুলাই হতে এই অফিস দুইটি চালু করা হবে।

রেফারেন্স: ২৪ এপ্রিল ১৯৭২, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ