দৈনিক পয়গাম
২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
একটি ভুয়া খবর মাত্র
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
গতকল্য (বৃহস্পতিবার) অপরাহ্নে শেখ মুজিবের মুক্তি সংবাদ রাজধানীতে ছড়াইয়া পড়িলে শত শত লোক ফুলের তোড়া ও মালা লইয়া কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের দিকে ধাবিত হয়। ইহাছাড়া সমাজের সকল শ্রেণীর বহুসংখ্যক লোক শেখ মুজিবকে অভ্যর্থনা জানাইবার জন্য তাঁহার ধানমণ্ডীস্থ বাসভবনে জমায়েত হয়।
অপরদিকে অপরাহ্ন সাড়ে ৫টা হইতে রাত্র ৮টা পর্যন্ত ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ট্রাইব্যুনালের ভবনে উপস্থিত কিছুসংখ্যক আইনজীবী (তাঁহারা ষড়যন্ত্র মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষের কৌসুলী) ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারিগণ অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটান। ঐ সময় ট্রাইব্যুনালে বিচারপতিদের চেম্বারে বিচারপতি জনাব এম, রহমান ও বিচারপতি জনাব মুকসুমুল হাকিম উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, দেশরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র উজির ভাইস এডমিরাল এ, আর, খান কোনরূপ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকল্য ঢাকা আগমন করেন। ইহা ছাড়া ট্রাইব্যুনাল ভবনে পূর্ব পাকিস্তানের জি ও সি মেজর জেনারেল মোজাফফর উদ্দিন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তদের সামরিক কাষ্টডিয়ান মেজর হাসান, বাদীপক্ষের অন্যতম কৌসুলী জনাব টি, এইচ, খান ও কতিপয় পদস্থ সামরিক অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
এই রিপোর্টার অপরাহ্ন ৫টা ৪০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্টে ট্রাইব্যুনাল ভবনে পৌঁছিয়া উল্লিখিত ব্যক্তিদের অত্যন্ত ব্যস্ত দেখিতে পায় এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের নিকট হইতে জানিতে পারে যে, শেখ মুজিবকে জামিনে মুক্তিদানের জন্য আবেদন করা হইতেছে। ঠিক ৬টায় বিবাদীপক্ষের অন্যতম কৌসুলী ডঃ কামাল হোসেন ও জনাব আমিরুল ইসলাম জামিনের দরখাস্ত সম্পর্কে আলোচনার জন্য সামরিক কাষ্টোডিয়ান মেজর হাসানসহ শেখ মুজিবের সহিত দেখা করিতে যান। কিন্তু ১৫/২০ মিনিট পরেই তাঁহারা ফিরিয়া আসেন এবং জানান যে, শেখ মুজিব জামিনে বাহির হইতে রাজী নহেন।
এই সংবাদ জি ও সি কে জানান হইলে তিনি (জি ও সি) নিজেই শেখ মুজিবের সহিত সাক্ষাত করেন।
কিয়ৎক্ষণ পর জি, ও, সি ট্রাইব্যুনালে প্রত্যাবর্তন করেন এবং উপস্থিত আইনজীবীদের সহিত আলোচনা করেন। ডাক-এর নেতা লাহোরের মওলানা আকরামের বরাত দিয়া রেডিও পাকিস্তান সন্ধ্যা ৬টার বুলেটিনে শেখ মুজিবের প্যারোলে মুক্তি সম্পর্কে যে সংবাদ পরিবেশন করিয়াছে উহা শুনিয়া শেখ মুজিব অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হইয়াছেন বলিয়া আইনজীবীগণ জানান।
রেডিও পাকিস্তানের উক্ত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিব নাকি আইনজীবীদের বলিয়াছেন যে, প্যারোলে বা জামিনে মুক্তির কোন প্রশ্নই উঠে না। এই সংবাদ তাঁহাকে (শেখ মুজিবকে) জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে প্রচার করা হইয়াছে বলিয়া শেখ মুজিব নাকি মন্তব্য করেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জি, ও, সি পুনরায় বিবাদী পক্ষের কৌসুলী ডঃ কামাল হোসেনসহ শেখ মুজিবের সহিত সাক্ষাৎ করিতে যান এবং পৌনে ৮টায় ট্রাইব্যুনালে প্রত্যাবর্তন করেন। এই সময় আইনজীবিগণ ট্রাইব্যুনাল ভবন ত্যাগ করিয়া চলিয়া যান।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯