গণমানুষের মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্র কায়েমে ঐক্যবদ্ধ হন- মওলানা ভাসানী
শিবপুর। মওলানা ভাসানী সামন্তবাদ সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ উৎখাত করে বাংলাদেশ সমাজতন্ত্র কায়েম করার জন্য কৃষক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সমাজতন্ত্র দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক শ্রমিকের মুক্তির একমাত্র পথ। শোষক শ্রেণিকে নির্মূল করে সমাজতন্ত্র কায়েম করা না গেলে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে না। তিনি সমাজতন্ত্র কায়েমের সংগ্রামে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ এখানে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির দুদিন ব্যাপি পূর্বাঞ্চলীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দানকালে মওলানা ভাসানী এই আহ্বান জানান। এই সম্মেলনে প্রায় ৭ হাজার কৃষক প্রতিনিধি যোগদান করেন। সম্মেলনে নিখিল ভারত কিযাণ সমিতি ও মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির দুজন প্রতিনিধি শ্রী শান্তিময় ঘোষ ও স্ত্রী বগলা প্রসন্ন গুহ যোগদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনে সভাপতি জনাব আবুল বাসার, বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কাজী জাফর আহমদ, বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মাহবুবউল্লাহ ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জনাব আতিকুর রহমান সালু ও প্রবীণ কৃষক নেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ভিয়েতনামের প্রতিনিধিরা আসতে পারেননি বিলম্বে আমন্ত্রণ লিপি পাঠানোর জন্য। তবে সম্মেলনের সাফল্য কামণা করে তারা চিঠি ও টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন। মওলানা ভাসানী বলেন, সমাজতন্ত্রের নামে কোনো ভাওতাবাজী আমরা বরদাশত করবো না। যত বাধাই আসুক আমরা খাটি সমাজতন্ত্র কায়েম করবই। তিনি বলেন, তিনি বলেন আমরা মন্ত্রীত্ব বা ক্ষমতা লাভের জন্য রাজনীতি করি না। আমরা মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করি, কাজেই কোনো মোহই আমাদের সংকল্প থেকে নিবৃত করতে পারবে না। সমাজতন্ত্রে কৃষক- শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বের অন্তর্ভুক্তি দাবি করে মওলানা ভাসানী বলেন, শাসনতন্ত্রে সংখ্যানুপাতে কৃষক- শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। তিনি বলেন, কৃষক-শ্রমিকের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তা হলে আমরা নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলব। বিনা বিচারে আটকের তীব্র প্রতিবাদ করে মওলানা ভাসানী বলেন, বিনা বিচারে কাউকে আটক রাখা চলবে না। কারাগারে আটক সকলের বিচার করে শাস্তি দিতে হবে। না হয় অবিলম্বে তাদের মুক্তি দান করতে হবে। মওলানা ভাসানী বলেন, স্বাধীনতার পর ‘লুটপাট সমিতি’ জনগণের ওপর নির্যাতন করছে। রাতারাতি তারা গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে। লুটপাট বন্ধ ও জনজীবনে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্যে তিনি সরকারের নিকট আহ্বান জানান। মওলানা ভাসানী বলেন, সকল মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না। ইতোপূর্বে ঢাকা থেকে শিবপুর পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৯ মাইল পথের পাঁচরুখি, পুবিন্দা, পাঁচদোনা, নরসিংদি, পুটিয়া বাজার, আইয়ুবপুর ও পালপাড়াতে মওলানা ভাসানীকে সম্বর্ধনা দেয়া হয়। মওলানা ভাসানী এসব সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন।
রেফারেন্স: ২৯ এপ্রিল ১৯৭২, ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ