You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.03.26 | বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েম হবে- বঙ্গবন্ধু | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েম হবে- বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক, অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার পর্যায়ক্রমিক পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গতকাল প্রথম স্বাধীনতা বার্ষিকীতে সকল ব্যাংক, বীমা, চটকল, বয়নশিল্প, চিনিশিল্প প্রভৃতি রাষ্ট্রয়ত্ব করার কথা ঘোষণা করেছেন। রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এ ঐতিহাসিক নীতি নির্ধারণী ভাষণে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। বিদেশি ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলো অবশ্য এ সিদ্ধান্ত থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে যুগপৎ তার ভাষণ প্রচার করা হয়। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনার জন্য শোষণ ও অবিচার মুক্ত একটি সমাজ আমরা কায়েম করতে চায়। এই লক্ষ সামনে রেখে সরকার নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রয়ত্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ব্যাংক (বিদেশি ব্যাংক ছাড়া) বীমা- জীবন ও সাধারণ উভয়ই (বিদেশি কোম্পানি ছাড়া) চটকল, সুতা ও বয়নশীল্প, চিনিকল, অভ্যন্তরীণ উপকূলীয় পরিবহনের অধিকাংশ, ১৫ লক্ষ টাকার বেশি স্থায়ী সম্পত্তি সম্পন্ন সকল পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন। শেষোক্ত দুইটি সংস্থা সরকারি উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যকে রাষ্ট্রায়াত্ত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বঙ্গবন্ধু আপাততঃ গুরুত্বপূর্ণ আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য ট্রেডিং কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নীতি নির্ধারণী ভাষণে বলেন যে, সরকার শীঘ্রই সরকারি প্রশাসন ঢেলেই সাজাবেন। এই জন্যে তিনি দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত সকল পেশাগত প্রতিভাধর ব্যক্তিদের এসব প্রতিষ্ঠার পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, স্বাধীনতার ফল অবশ্যই সকলকে ভোগ করতে হবে সমানভাবে। শিল্প ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের অংশীদারিত্বের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন যে, সরকার এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারণ করছেন। এ নীতি শ্রমিকদের শ্রমের ফসল ও পরিচালনায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, এই বলিষ্ট পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার সুসম্পূর্ণ রূপে মেহনতি শ্রেণির দায়িত্ববোধের ওপর নির্ভর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন যে, শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে যে চিরন্তন বিরোধ ছিল এই নীতির ফলে তার অবসান ঘটবে। বঙ্গবন্ধু জানান যে, সরকারি নীতি আলোচনা এবং সরাসরি তার শিল্প এলাকায় প্রসারণ ও শ্রমিকদের তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য শীঘ্রই তিনি শ্রমিক প্রতিনিধিদের সম্মেলন ডাকবেন।

রেফারেন্স: ২৬ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ