যানবাহনের অভাবে ত্রাণকার্য ব্যাহত
সাহায্য সামগ্রী বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে পৌছে দেয়ার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে গুদামের রিলিফ মজুদ থাকা সত্বেও অনেক মানুষ সীমাহীন দুঃখ কষ্টের মধ্যে নিপতীত হবে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বস্তুতঃ দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইতোমধ্যেই এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যথাযথ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে দেশের গ্রামাঞ্চলে খাদ্যসহ সকল প্রকার জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষত চাউলের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ মজুদ স্টকে কোথাও গুরুতর ঘাটতি আছে বলে মনে হয় না। জানা গেছে যে নিউজিল্যান্ডের একটি ডিসি-৬ বিমান ও আন্তর্জাতিক গীর্জা পরিষদের দেয়া তিনটি ক্ষুদ্রাকায় আকাশ যান জরুরি রিলিফ পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া আই সি আর সি দুটি হেলিকপ্টার ও দুটি বিমান সাহায্য অভিযানে তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহার করেছে। বন্ধুরাষ্ট্র ভারত ও আই সি আর, সি থেকে ৬৮০টি ট্রাক ও ১২টি মিনি বাস ও এ বাবদ পাওয়া গিয়াছে। সোভিয়েত ইউনিয়নও চারটি হেলিকপ্টার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রয়োজনের তুলনায় এসব যানবাহন একান্তই নগণ্য। জানা গেছে যে, এ পরিস্থিতিতে মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির জন্য মূল পরিকল্পনাটিকে তিনভাবে ভাগ করা হয়েছে। এ তিন ভাগের মধ্যে সড়ক, আকাশ এবং নদীপথের রিলিফ সামগ্রী পরিবহনের কথা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরো ট্রাক, ফেরী, লঞ্চ, বিমান, স্টিমার প্রভৃতির প্রয়োজন হবে।
আকাশপথে পরিবহন: রিলিফের সাহায্য সামগ্রী পুনর্বাসনের উপকরণ সমূহ পরিবহনের জন্য আটটি হেলিকপ্টার, চারটি সি-১৩০ বিমান, এবং চারটি কেরিবিয় বিমানের প্রয়োজন হবে বলে জানা গেছে।
সড়ক পথে পরিবহন: সড়ক পথে সাহায্য সামগ্রী এবং পুনর্বাসনের মালপত্র পরিবহনের জন্যে আরো পাঁচ হতে সাত টন বিশিষ্ট ১৬৫০টি ট্রাক, ৯৬০টি পিকাপ জীপ, ১২০টি মিনিবাস, ৫ হতে ১০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ১১টি মোবাইল ক্রেন এবং ৫ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২৪টি ফর্ক লিফট ক্রেন-এর প্রয়োজন। এছাড়া নষ্ট যানবাহনগুলো অবিলম্বে মেরামত করে কার্য উপযোগী করতে হবে।
নদীপথে পরিবহনঃ নদীপথে রিলিফ সামগ্রী এবং পুনর্বাসনের উপকরণ সমূহ পরিবহনের জন্য ১২টি গাড়ি ও যাত্রীবাহি ফেরী, ৭৫০ অশ্বশক্তিসম্পন্ন দুটি যন্ত্র চালিত বজরা, ৫০০ অশ্বশক্তিসম্পন্ন দুটি যন্ত্রচালিত বজরা, সাতটি স্বয়ংচালিত তেলবাহী বজরা, ২৫০ টন স্বয়ং চালিত একটি মালবাহী বজরা। ১ হাজার টন ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫টি শুষ্ক মালবাহী কোষ্টার, ১৫টি স্বল্পপানিতে চলার উপযোগী মালবাহী কোষ্টার এবং পানির তলদেশ হতে ১১ হাজার টন মাল উত্তোলনের সমকক্ষ দুই ইউনিট যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। এছাড়া রেলপথের সাহায্য সামগ্রী ও পুনর্বাসনের জিনিসপত্র বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের জন্য চারচাকা বিশিষ্ট চার হাজার ওয়াগণেরও প্রয়োজন হবে বলে পরিকল্পনার প্রস্তাব করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত হার্ডিঞ্জ ব্রীজ এবং ভৈরব ব্রীজও অবিলম্বে মেরামত করতে হবে।
রেফারেন্স: ২১ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ