৬ দফা বিশ্লেষণ
লাকসাম, ১৫ই এপ্রিল।—গত বৃহস্পতিবার লাকসাম পাবলিক হল প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা আমেনা বেগম, শ্রম সম্পাদক জহুর হােসেন চৌধুরী, জনাব আবদুর রব এডভােকেট, নুরুল হক এম, পি, এ, প্রাদেশিক পরিষদের বিরােধী দলের নেতা জনাব আবদুল মালেক, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিকউদ্দিন ভুইয়া, কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব আমীর হােসেন সভায় বক্তৃতা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আমীর হােসেন।
সভায় জনাব নুরুল হক এম, পি, এ, পূংখানুপূংখরূপে ৬ দফা বিশ্লেষণ করেন। জনাব হক সমবেত জনতার উদ্দেশে ৬ দফা সমর্থন করেন কিনা জানিতে চাহিলে হাজার হাজার ক্রীড়া লেখক সমিতির কার্যকরী কমিটির নির্বাচন জনতা হাত তুলিয়া সমর্থন করেন।
আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জনাব জহুর হােসেন বর্তমান চটকল শ্রমিকদের ৩ দফা দাবী মানিয়া নেওয়ার জন্য সরকার ও মালিকপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি শ্রমিকদের পাইকারী হারে গ্রেফতার ও হত্যার তীব্র নিন্দা করেন। জনাব রফিক উদ্দিন ভুইয়া রাজবন্দীদের মুক্তি প্রদানের দাবী জানান।
সভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা জনতার মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে বলেন, ছয় দফা আমার প্রাণ, ছয় দফার জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত। ছয় দফার জন্য যে কাফেলা হইবে তাহাতে শরিক হওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি দেশের বর্তমান খাদ্য সমস্যার জন্য সরকারের ভ্রান্ত খাদ্যনীতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বিভেদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করিয়া বলেন, যদি জনতা আমাদের সঙ্গে থাকে তবে পৃথিবীর কোন শক্তি আমাদের আন্দোলনকে দাবীয়ে রাখতে পারিবে না। তিনি বলেন, আমরা বাঙ্গালী, আমরা ভাত খাই, আমরা ভুট্টা খাই না, খাইতে পারি না। তিনি দেশের সৰ্ব্বত্র দুর্নীতি, স্বজন পােষণ নীতি ও পুঁজিপতি গােষ্ঠী সৃষ্টির জন্য বর্তমান শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করেন। আওয়ামী লীগ নেত্রী দুর্নীতিপূর্ণ শাসনব্যবস্থা সমাজদেহকে কলুষিত করিয়াছে বলিয়া অভিযােগ করেন। সভায় গৃহীত বিভিন্ন প্রস্তাবে ৬ দফা বাস্তবায়ন, শেখ মুজিবরসহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির দাবী, ২০ টাকা মণদরে চাউল ও ১০ টাকা মণদরে আটা, চটকল শ্রমিকদের দাবী পূরণের জন্য সরকারী হস্তক্ষেপ, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, ইত্তেফাক পুনঃপ্রকাশ ও বাজেয়াপ্ত প্রত্যাহার করার দাবী জানান হয়। অপর প্রস্তাবে পাবনায় পুলিশের গুলীবর্ষণের নিন্দা ও চটকল শ্রমিকদের গ্রেফতার, হয়রানী ও হত্যার নিন্দা করা হয়।-সংবাদদাতা।
আজাদ, ১৭ এপ্রিল ১৯৬৭