৬ দফার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন
শরীরটা খারাপই হয়ে চলেছে। বসে থাকার জন্যই বােধহয় খুবই দুর্বল লাগে। আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালাতে জনগণকে অনুরােধ করেছে—যে পর্যন্ত ৬ দফার দাবি আদায় না হয়। যদিও শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে চলছে আওয়ামী লীগ, তথাপি সরকার অত্যাচার করে চলেছে। গুলি হলাে, গ্যাস মারল, শত শত কর্মীকে জেলে দিল, বিচারের নামে প্রহসন করল, কত লােক গুলি খেয়ে মারা গেছে কে তা বলতে পারে? সরকার নিজেই স্বীকার করেছে ১১ জন। মারা গেছে ৭ই জুনের গুলিতে। আমরা পাকিস্তানকে দুইভাগ করতে চাই বলে যারা চিৎকার করছে তারাই পাকিস্তানের ক্ষতি করছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া উচিত। তারা আলাদা হতে চায় না। পাকিস্তান একই থাকবে, যদি স্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নেওয়া হয়। ইংরেজ কত লােককে হত্যা করেছিল কিন্তু দাবাইয়া রাখতে পারে নাই। এই দেশে কত ছেলেকে ফাঁসি দিয়েছিল। অনেকেরই সে কথা মনে আছে—গােপীনাথ সাহা, নির্মল, জীবন ঘােষ, রামকৃষ্ণ রায়, ব্রজকিশাের চক্রবর্তী, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন, তারকেশ্বর আরও কত লােককে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছিল। তবু আন্দোলন দাবাতে পারে নাই। আন্দোলন আরও জোরে চলেছিল। আমরা যদিও সন্ত্রাসবাদী রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, তথাপি ইংরেজের অত্যাচারের বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছিল ঐ পথ। এমন দিন এসেছিল ইংরেজ সাহেবরা ঘর থেকে বের হতেও ভয় পেত।
আমি জানি আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে, তাদের উপর অত্যাচার করা কোনাে মতেই উচিত হতেছে না। সরকার বলে দিলেই তাে পারে, তােমরা রাজনীতি করতে পারবা না। আমরা চিন্তা করে দেখতাম রাজনীতি করব, কি করব না? মার্শাল ল’-এর সময় তাে আমরা রাজনীতি করি নাই। চুপচাপ ছিলাম, কারণ রাজনীতি তখন বেআইনী ছিল। আজ দিন যে কিভাবে কেটে গেল আমি জানি না।
কারাগারের রােজনামচা, ২৫ জুলাই ১৯৬৬