৬ দফা জনগণের দাবি
আজ এতগুলি লােক গুলি খেয়ে জীবন দিল। শত শত লােক কারাগারে বন্দি অবস্তায় দিন কাটাচ্ছে। শত শত লােকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরােয়ানা ঝুলছে। শত শত মামলা ছাত্র রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সে সম্বন্ধে কোনাে সহানুভূতি যে পার্টির নেতারা দেখান না, তাদের পক্ষে সবই সম্ভবপর। আমি জানি এই সকল কথা বললে এরা পিন্ডি বসে পারমিটের ব্যবসা করার আরও সুযােগ পাবে। কত হাজার টন সিমেন্টের পারমিট করাচী থেকে এনে কার কাছে বিক্রি করেছেন—একথাও আমার জানা আছে। আমি বন্দি, আমার সহকর্মীরা বন্দি, তা না হলে তাকে ও তাদের নেতাদের কি উত্তর দিতে হয় তা আমি জানি। জনগণ তাদের পিছনে নাই, এখন উপরতলার রাজনীতি করেন। শুধু ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বলে চিৎকার করে আর সাম্রাজ্যবাদের দালালদের তলে তলে সমর্থন করে সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করা যাবে না। গণআন্দোলনে বিশ্বাস করেন, জনগণের উপর নির্ভর করেন। ৬ দফা শুনে ঘাবড়াবেন না, এ দাবি জনগণের দাবি। আপনার ‘নেতা মওলানা ভাসানী সাহেবকে ময়দানে নামান। আইয়ুব সাহেবের দলে তাে আপনারা আছেনই এবং সাহায্য নিয়ে থাকেন। অবস্থা কি আপনাদের? এ নেতার সম্বন্ধে আমার এতখানি না লেখলেও চলত, কারণ এদের কথার দাম বাঙালি দেয় না। আন্দোলন কখনও বাইরে থেকে আমদানি হয় না। বাংলাদেশের লােকের প্রাণ আছে। পারমিটের টাকা দিয়া গণআন্দোলন হয় না। আপনার জানা উচিত সিআইয়ের এজেন্টরাই পাকিস্তান শাসন করছে। নূতন এজেন্টের দরকার হয় নাই, আর হবেও না। আর দরকার হলেও আপনাদের মতাে এজেন্ট অনেক পাবে তারা। কারণ তারা বােধ হয় জানে আপনাদের চরিত্র। এজেন্সির রাজনীতি আপনাদের নেতারাই করে থাকেন।
কারাগারের রােজনামচা, ১৭ জুন ১৯৬৬