স্বাগতম ভারতরত্ন ইন্দিরা
বাংলার শিকল ভাঙার দুর্বার অভিযানের মহান সারথী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আজ শুক্রবার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী তথা বিশ্বশান্তির ইতিহাসে আজ সংযোজিত হচ্ছে এক নতুন অধ্যায়। আর ভারতরত্ন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীই এ অধ্যায়ের কেন্দ্রীভূত শক্তি। স্বাগতম ভারতরত্ন। স্বাগতম বাংলার তিমির রাতের নির্ভীক সহযাত্রী । বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ বরণডালা সাজিয়ে অধীর আগ্রহে এ দিনটিরই প্রতীক্ষা করছিল। প্রত্যাশার পূর্ণতায় আজ সে প্রতীক্ষার পরিসমাপ্তি। আজ তিনি আসছেন। তিনি আসছেন বনরাজি সাগর মেখলা এর বাংলার এই প্রথম বারের মতো। তিনি আসছেন সদস্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিদেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তিনি আসছেন, বিশ্বকবি, নজরুল আর জীবনানন্দের এ বাংলায়। মধুসূধনের বাংলায়। সূর্যসেন আর শেখ মুজিবের বাংলায়। তিনি আসছেন বরকত, সালাম, জব্বার আর রফিকের বাংলায়। ৭১-এর স্বাধীনতার শহীদদের রক্তস্নাত এ বাংলায়। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা আর ধলেশ্বরী বাংলার আবাল-বৃদ্ধা-বনিতা দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত বাসনার ডালি সাজিয়ে তাকে বরণ করে নিতে প্রহর গুণছে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কাছে ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারতীয় জনগণ অতি প্রিয়। তাঁদের বাঙালি জাতি কোনো দিন ভুলবে না- ভুলতে পারে না। বাংলার শ্যামল প্রান্তর যখন রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল, মানবতা যখন এখানে পদদলিত হচ্ছিল আর গণতন্ত্র যখন ধুকে ধুকে মরছিল, ঠিক তখন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বজ্র কণ্ঠে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন তীব্র প্রতিবাদে। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সাড়ে সাত কোটি বাঙালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সেদিন। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন। ৫৫ কোটি ভারতীয় জনগণের সাথে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সংগ্রামী রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন। বিশ্বের বিভ্রান্ত জনমতকে সংগঠিত করে বাংলার স্বাধীনতা আর বঙ্গবন্ধু মুক্তির পথ প্রশস্ত করেছেন। বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিয়েই সুমেরু থেকে কুমেরু পর্যন্ত উলকার মতো ছুটে গিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা জানাতে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত আর বৃহৎ শক্তিবর্গের ভ্রুকটিকে উপেক্ষা করে তিনি বাংলার স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন। আর তাই আজ বাংলাদেশ এ ভারতের মৈত্রীবন্ধন রক্তের আঁখরে লেখা। শ্রীমতি গান্ধীর সফর এ বন্ধনকে করবে আরও সুদৃঢ়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের এ প্রত্যাশা সফল হোক। বাঙালির আশা বাঙালির ভাষা সত্য হোক। সত্য হোক!
রেফারেন্স: ১৬ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ