You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.03.17 | মুজিব-ইন্দিরা ও সামাদ-শরণ বৈঠক | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

মুজিব-ইন্দিরা ও সামাদ-শরণ বৈঠক

শুক্রবার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চার পর্যায়ে বাস্তবধর্মী আলাপ-আলোচনা হয়। আলোচনায় বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, উভয় দেশের মধ্যে গমনাগমন বিধি, যুদ্ধাপরাধ এবং উপমহাদেশের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। বৈঠকে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই পূর্ণাঙ্গ ৩৫ মিনিট কাল স্থায়ী হয়। পার্শ্বচরহীন উভয় প্রধানমন্ত্রী দু’দফায় ১ ঘন্টা ৫০ মিনিটকাল আলাপ আলোচনা করেন। অপর দিকে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় পৃথকভাবে দুদফায় ৫০ মিনিট ব্যাপী আলোচনাকালে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে এশিয়ার নিরাপত্তার প্রশ্ন নিয়ে মতামত বিনিময় করেন বলে জানা গেছে। জনৈক সরকারি মুখপাত্র বিভিন্ন পর্যায়ের এই আলাপ আলোচনাকে উভয় দেশের মধ্যে প্রাথমিক মতামত বিনিময় বলে অভিহিত করেন। আজ আই মহতি নেতা। আলোচনা আগামিকালও (শনিবার) চলবে এবং পরের দিন একটা যুক্ত ইশতেহার কিংবা ঘোষণা প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আলাপ আলোচনায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পদ্ধতি, একটা সাধারণ বাণিজ্য চুক্তি, উভয় দেশের মধ্যে সীমান্ত বাণিজ্য চুক্তি, চোরাচালান রোধের ব্যবস্থা এবং সাংস্কৃতিক, কারিগরি ও বিজ্ঞানের উন্নয়নের সহযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সহযোগিতার প্রশ্নটিও আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে ভারতের পক্ষে জনৈক মুখপাত্র বলেন যে, প্রয়োজনীয় তদন্তের পর অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্যে দায়ী ব্যক্তিদেরকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে সোপর্দ করা হবে। বাংলাদেশের জনৈক সরকারি মুখপাত্র বলেন যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা তৈরি করা হচ্ছে। তবে, কবে পর্যন্ত এদের বিচার শুরু হবে তা তিনি বলতে পারেন না। এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের মুখপাত্র জানান যে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে আটক বেসামরিক লোকদের স্ব স্ব দেশে ফেরৎ পাঠানোর প্রশ্নটি আলোচনা হবে, তবে বিষয়টি জটিল বলে সবকিছু ঠিক করার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিচারে কোনো আন্তর্জাতিক আইনবিদ জড়িত থাকবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো কোনো আন্তর্জাতিক আইনবিদ আর অপর আরো কিছু লোক এর মধ্যে জড়িত থাকতে পারেন। জনৈক ভারতীয় সরকারি কর্মচারী বলেন যে, বাংলাদেশের মাটিতেই এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকারই বিচার করার অধিকারী এবং কীভাবে বিচার হবে সেটা তাঁরাই ঠিক করবেন। তিনি আরও বলেন যে, সৌজন্য ও শুভেচ্ছামূলক ছাড়াও উভয় প্রধানমন্ত্রীই বাংলাদেশে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন। পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় উভয় প্রধানমন্ত্রীই তাঁদের স্ব স্ব দেশের সিনিয়র সরকারি কর্মচারীদের সাহায্যলাভ করেন। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনায় দুটি উপদল উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। এই উপদলের একটা হচ্ছে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এবং আর একটা হচ্ছে অর্থনৈতিক,কারিগরি ও বিজ্ঞান সম্পর্কিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দলে অন্যান্যের মধ্যে ড. মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক রেহমান সোবহান, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য; অর্থদফতরের সেক্রেটারি জনাব মতিউল ইসলাম; পরিকল্পনা বিভাগের সেক্রেটারি জনাব গোলাম রব্বানী এবং কৃষি দফতরের সেক্রেটারি জনাব নুরুদ্দীন আহমদ রয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলে অন্যদের মধ্যে রয়েছেন, পররাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) জনাব এস এ করিম, পররাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারি (প্রশাসন) জনাব এস এ এম এস কিবরিয়া, প্রধানমন্ত্রী প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি জনাব রুহুল কুদ্দুস ও আইন দফতরের সেক্রেটারি বিচারপতি জনাব এ এম মুনিম। ভারতের পক্ষে অর্থনৈতিক দলে প্রতিনিধিত্বকারীদের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশন সদস্য ড. এস চক্রবর্তী প্রধানমন্ত্রী সেক্রেটারি শ্রী পি, এন ধর অন্যতম। রাজনৈতিক দল গঠিত হয় পররাষ্ট্র দফতরের শ্রী টি এন কাউল; প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি শ্রী পি এন হাকসার এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় মিশন প্রধান শ্রী সুবিমল দত্তকে নিয়ে।

রেফারেন্স: ১৭ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ