খান সেনারা কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে
মুক্তিবাহিনীও বসে নেই ঃ অতর্কিত আক্রমণে হাজার হাজার মন ধান-চাল উদ্ধার।
(জয়বাংলার নিজস্ব প্রতিনিধি) খুলনা, ১৬ই নভেম্বর দেবহাটা থানার আশে পাশের অধিকৃত অঞ্চলে হানাদার পাক সেনারা কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতেছে। তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে ধান-চাউল, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল। ইত্যাদি কেড়ে নিয়ে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী জমা করে রাখছে এবং স্থানীয় জনসাধারণের উপরে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে। খানসেনারা স্থানীয় অঞ্চলের জনসাধারণকে ক্ষেতের পাকা ফসল ঘরে তুলতে নিষেধ করে এক আদেশ জারী করেছে। মাঝে মাঝে তারা দেশী দালাল রাজাকার দিয়ে হাটবাজারও লুঠ করছে। লুঠকরা খাদ্যদ্রব্য তারা অন্যত্র পাচার করছে এবং কিছু কিছু আবার স্থানীয়ভাবেও স্থূপীকৃত করে রাখছে। পাকিস্তানী হানাদারদের ঘনিষ্ট মহল থেকে জানা গেছে যে, তারা কিছু ফসল ক্ষেতেই নষ্ট করে দিতে চায় এবং বাকীটা লুঠ করে নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে জনতার পেটের ক্ষুধাকে নিজেদের কাজে লাগাতে চায়। নরপিশাচেরা বাংলাদেশের মানুষকে ধুকে ধুকে মরার যে হীন চক্রান্ত করেছে তা উপলব্ধি করে স্থানীয় জনসাধারণ উদ্বেগকুল হয়ে পড়েছে। রেশন দেবার নাম করে খানসেনারা একদিকে বিশ্বজনমতকে ধোকা দিচ্ছে অপরদিকে বাংলাদেশের বীর জনতাকে অভুক্ত রেখে বশ করার অপচেষ্টায় মেতেছে। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্বার শক্তিধর মুক্তিসৈনিকেরাও বসে নেই। বাংলাদেশে হানাদার কবলিত মানুষের দুঃখে মােচনের জন্য যাদের সৃষ্টি, তারা জনসাধারণের উপরে আঘাত আসলেই তার পাল্টা আঘাত করার জন্য তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামের পর গ্রাম শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করে ঘৃণ্য পশুর সকল ষড়যন্ত্রকে বানচাল করে দেবার জন্য বাংলাদেশের শক্তিধর সৈনিকেরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই পাকিস্তানী দুস্যদের লুঠ করা মাল গুদামজাত করে রাখার ঘাটিতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে জনগণের মাল জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছে। সম্প্রতি এখানকার দেবী শহরে পাক-বাহিনী প্রায় এক হাজার মন চাল উদ্ধার করে এবং স্থানীয় বুভুক্ষু বাংলার জনসাধারণের মধ্যে বিলি করে দেয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে খান সেনারা পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করে এবং সমগ্র এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। এই অঞ্চলটি এখন একটি সুরক্ষিত মুক্ত এলাকা। খান সেনারা স্থানীয় এলাকা থেকে হাজার হাজার মন চাউল ও ধান সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর সুতীক্ষ দৃষ্টি এদিকেও সজাগ। সম্প্রতি ইছামতি নদীর তীরের কয়েকটি গ্রাম থেকে লুট করা চাউল বােঝাই লঞ্চের উপরে হামলা করে বীর মুক্তিসেনারা কয়েক হাজার মন চাউল উদ্ধার করে। আজ সকালে শকবল হতে উদ্ধারকৃত বারােশত মন চাউল বােঝাই একটি লঞ্চ মুক্ত এলাকায় এসে পেীছেছে। ২৫শে মার্চের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে পিষে মারার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বীর জনসাধারণ যেমন করে বানচাল করে দিয়েছে, আজকের কৃত্রিম দুর্ভিক্ষে লােক মারার ষড়যন্ত্রের জালও বাংলাদেশের বীর জনতা তেমনি ছিড়ে ফেলবে এতে সন্দেহ নেই। সকল ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙ্গে বাংলাদেশে এখন নতুন সূর্য উঠেছে—এ সূর্যকে কেউ রুখতে পারবে না।
জয়বাংলা (১) ॥ ১; ২৮
১৯ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯