কৃষিক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত
কৃষিমন্ত্রী শেখ আবদুল আজিজ বুধবার এখানে প্রকাশ করেন যে, দেশে সবুজ বিপ্লবের সূচনার জন্যে সরকার কৃষিব্যবস্থায় তিন পর্যায়বিশিষ্ট কর্মসূচি কার্যকরী করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি অনুযায়ী কৃষিখাতকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এই ব্যবস্থায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে খণ্ড খণ্ড জমিগুলোকে একত্রিত করা, সমবায় কৃষিপদ্ধতি চালু জমির মালিকানা ও এই ধরনের অপরাপর ব্যবস্থা থাকবে। বুধবার অপরাহ্নে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী উপরোক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলার আগে পর্যাপ্ত দেশের কৃষিব্যবস্থা যে অবস্থায় ছিল,আশু পর্যায়ে সরকার সেই অবস্থায় পৌছার পরিকল্পনা করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন যে,জ্বালানির অভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দারুণ অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল, বর্তমানে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে। আনুমানিক ৩৫ লাখ একর জমিতে সেচ ব্যবস্থার জন্যে ২২ হাজার নলকূপ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কৃষিমন্ত্রী চতুর্থ পাঁচসালা পরিকল্পনার জন্যে ১৮০ কোটি টাকার উল্লেখ করেন। এই পরিকল্পনায় দেশে অতিরিক্ত ২৪ লাখ টন খাদ্যশস্য পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান। এই প্রকল্প অনুসারে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায় পাঁচ হাজার নলকূপ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর জন্যে এ পর্যায় তিন ভাগের এক ভাগ মালামাল এসে পৌঁছেছে এবং চট্টগ্রামে আসার পথে আরো কিছু মালামাল যুদ্ধকালে কোলকাতায় ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে সেগুলো আবার দেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী জানান যে, রাজশাহী জেলায় ১ হাজার নলকূপ আর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সীর ২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার ঋণের অর্থে উত্তরবঙ্গের ৫টি জেলায় আরো ৩ হাজার নলকূপ বসানো হবে। তিনি জানান যে, দেশে বর্তমানে মাত্র ৪ হাজার টন কীটনাশক ঔষধ মজুদ রয়েছে এবং সেটা বর্তমান বোরো ফসলের জন্যে যথেষ্ট। যুদ্ধের সময় জাহাজে করে সুইজারল্যান্ড থেকে কীটনাশক ঔষধ আনার পথে সেটা সিঙ্গাপুরে ঘুরিয়ে পাঠান হয়েছিল, সেটা শীগগিরই দেশে এসে পৌছবে। তিনি আরো জানান যে, বাংলাদেশের বনজ সম্পদ রক্ষার জন্যে সরকার গাছকাটা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের বনজ সম্পদ বিনষ্ট করাই ছিল হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লক্ষ্য বলে তিনি মন্তব্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান যে, বর্তমানে বন থেকে কেবলমাত্র মধু, গোলপাতা এবং এই ধরনের অন্যান্য জিনিসই সংগ্রহ করতে দেয়া হবে। বিভিন্ন কাজের জন্যে কাঠ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিকল্প অপর একটা কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে কৃষিমন্ত্রী প্রকাশ করেন।” জেদ্দা সম্মেলনের মিশন সম্পর্কে সরকার যেসব দেশ এখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের নিয়ে গঠিত মুসলিম দেশের কোনো প্রতিনিধি দলকে এখানে আসার অনুমতি বাংলাদেশ সরকার দিবেন না বলে বিএস এস-এর এক খবরে প্রকাশ। পররাষ্ট্র দফতরের জনৈক মুখপাত্র এই সংস্থাকে জানিয়েছেন যে, জেদ্দার ইসলামী সেক্রেটারিয়েট বাংলাদেশ ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এই প্রতিনিধি দলে এমন পাঁচটি দেশের সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যারা আজও বাংলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেননি। পররাষ্ট্র দফতরের উক্ত মুখপাত্র জানান যে, আমরা তাঁদের জানিয়ে দিয়েছি যে, এ ধরনের প্রতিনিধি দলকে গ্রহণ করতে আমাদের আপত্তি নেই,তবে যেসব দেশ বাংলাদেশকে এখনও স্বীকৃতি
দেয়নি সে দেশের সদস্যদের অবশ্যই আমরা গ্রহণ করতে পারি না। তিনি বলেন, একমাত্র মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে কিন্তু প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত অপর ৫ জন সদস্যের দেশগুলো এখনও বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকার করেনি।
রেফারেন্স: ১৫ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ