চোরাচালান বন্ধের জন্য বঙ্গবন্ধুর পথ নির্দেশ
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চোরাচালানকারী ও মজুতদারসহ দেশের সকল সমাজবিরোধী লোককে প্রতিরোধ করার ঐকান্তিক আবেদন জানান। কারণ এই সমস্ত লোকের ঘৃণ্য তৎপরতার দরুন দেশের জনসাধারণের দুঃখ কষ্ট বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিকন্তু তারা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে। গতকাল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু দেশের জনসাধারণকে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর শুল্ক কর্মচারী ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহিত সারা দেশব্যাপী চোরাচালান ও মজুতদারী বন্ধের প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি দেশে চোরাচালান ও মজুতদারী বন্ধকরণ এবং অপরাধিগণকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সমস্ত সীমান্ত এলাকায় গণকমিটি গঠনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, এইসব অপরাধীকে শাস্তি দেয়া হবে। তিনি বলেন যে, ‘গণ কমিটিগুলো এই ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করবে। তিনি বলেন যে, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সহযোগিতা ছাড়া শুধু সরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষে চোরাচালান ও মজুতদারী দমন করা সম্ভব নয়। সমাজ বিরোধী ও দেশপ্রেম বর্জিত লোকদের দ্বারা চোরাচালান ও মজুতদারীর দরুণ অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দাম দ্রুত বেড়ে যাওয়ার জন্যও বঙ্গবন্ধু বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলো: সমাজ বিরোধী ও দেশপ্রেম বিবর্জিত লোকদের দ্বারা চোরাচালান ও মজুতদারীর দরুন অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দাম দ্রুত বেড়ে চলছে। একদিকে চোরাচালানের দ্বারা দেশের সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি মজুতদারীর ফলে জিনিসপত্রের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি হচ্ছে এবং তার দরুন সকল শ্রেণির লোকের খুবই কষ্ট হচ্ছে। চোরাচালান ও মজুতদারী এমন একটি ঘৃণ্য অপরাধ যা সাধারণ মানুষের খুবই ক্ষতি করে এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে। এরূপ চলতে দেওয়া যেতে পারে না। সুতরাং আমি আমার দেশবাসীকে যে দেশবাসীই হলো আমার শক্তির উৎস- তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের দুশমন সমাজ বিরোধীদের দমন করার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি। চোরাচালানের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং অপরাধীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য সমস্ত সীমান্ত এলাকায় ‘গণকমিটি’ গঠন করা উচিত। এইসব কমিটি সীমান্ত রক্ষীবাহিনী ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের সাথে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে। আপনাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, জনগণের সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া একমাত্র সরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষে চোরাচালান ও মজুতদারী দমন করা সম্ভব নয়। আমি জনগণের নিকট এই আবেদন জানাচ্ছি কারণ আমি জানি, তারা আমার সাথে আছে এবং তারা এতে ত্বরিৎ সাড়া দেবে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিরূপ তা আপনারা সবাই জানেন। এটা মোটেই সন্তোষজনক নয়। দখলদার বর্বর পাকিস্তানিবাহিনী আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। শূন্য হাতে আমাদের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। এটা একটা বিরাট দায়িত্ব এবং দেশের সকল নাগরিককে এতে অংশগ্রহণ করতে হবে। মুষ্টিমেয় সমাজ বিরোধী লোকের দ্বারা আমাদের জনগণকে দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে দিতে পারি না। আমরা অপরাধীদের অবশ্যই ধরবো এবং তাদের শাস্তি দেব। জয় বাংলা।
রেফারেন্স: ১২ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ