You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.08 | রণক্ষেত্রে শিবিরে - সংগ্রামের নোটবুক

রণক্ষেত্রে শিবিরে

(অভিযান রণাঙ্গন প্রতিনিধি) মুক্তিবাহিনীর বিজয় অভিযান দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। সবগুলাে রণাঙ্গনেই মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা অভিযান আরাে তীব্রতর আকার নিয়েছে। গত পনেরাে দিনে মুক্তিসংগ্রামীরা মােট ৫১৫ জন পাকসৈন্য ১৫জন রাজাকার খতম করেছেন। তাছাড়া ৫০ জনের মতাে শত্রুসেনা জখম হয়েছে। বেশ কতকগুলাে রেলসেতু উড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ওই ১৫ দিনের অভিযানে মুন্সীগঞ্জ থানা, বিলােনিয়া রেল স্টেশন এবং বাজিতপুর থানাটি সম্পূর্ণ মুক্ত করেছেন। এই তিনটি এলাকার মধ্যে সংযােগরক্ষাকারী সবগুলাে যােগাযােগ ব্যবস্থাই মুক্তিবাহিনী বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। বিভিন্ন গেরিলা তৎপরতায় মুক্তিবাহিনী ১৩৫টি রাইফেল ১১টি বেয়নেটসহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের যে বিস্তৃত খবর পাওয়া গেছে তা হলাে :

১১ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার কমলপুরে পাকিস্তানী বাহিনীর অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালান। উভয় পক্ষই মর্টার সহযােগে পরস্পরকে আক্রমণ করেন। মুক্তিবাহিনীর ক্ষিপ্র আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনীর ৫ জন খতম ও ১২ জন জখম হয়। অপর এক অভিযানে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার চিওড়া অঞ্চলে ২ জন পাকসৈন্যকে খতম ও তিনজনকে জখম করেন। | গত ৫ই ও ৬ই নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার হরিণসােলা অঞ্চলে গেরিলা তৎপরতা চালানাের ফলে ৭জন শত্রুসৈন্য নিহত ও ৮জন আহত হয়। এ জেলাতেই গেরিলাদল এর পূর্বে আরেক আক্রমণ চালিয়ে হুগলী চা বাগানে’ ৫ জন শত্রুসৈন্যকে খতম ও ৫জনকে জখম করেন। ৮ই নভেম্বর, তারিখে কুমিল্লার কোতােয়ালী থানার কাটেশ্বরে পাকসৈন্যরা যখন বিশ্রাম নিচ্ছিল সেসময় তড়িৎ গতিতে আক্রমণ চালিয়ে বীর মুক্তিযােদ্ধারা ২০জন শত্রুসৈন্য খতম করেন। 

বিলােনিয়া থেকে পাক-সৈন্য বিতাড়িত বিলম্বে প্রাপ্ত এক খবরে জানা যায় যে, ৫ই নভেম্বর সদ্যমুক্ত বিলােনিয়া এবং পরশুরাম অঞ্চলে পাকবাহিনী এক জোর আক্রমণ চালায়। মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালালে এক তীব্র সংঘর্ষ বাধে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তাল সামলাতে না পেরে পাকবাহিনী পিছু হটে যায়। এই সংঘর্ষে ক্যাপটেন সহ ৮জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর ২জন সৈনিক শহীদ হন। দু’দিন বাদে শক্রর দুই কোম্পানী সৈন্য ঐ অঞ্চলে আবার হামলা চালায়। অসমসাহসী মুক্তিযােদ্ধারা প্রবল বিক্রমে দখলদার বাহিনীর উপর পাল্টা আঘাত হানে। দুইঘন্টা ব্যাপী মুক্তিযােদ্ধারা কৌশলের সাথে মর্টার ও মেশিনগান নিয়ে। ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে শত্রুদের বিতাড়িত করেন।  এই সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনীর হাতে ৩৫জন পাকিস্তানী সেনা খতম হয় এবং মেসিনগানসহ বহু গােলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। মানিকগঞ্জ থানা শত্রুকবল মুক্ত বাংলাদেশ সমর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ থানা এবং পাবনা জেলার রায়গঞ্জ থানা সম্পূর্ণ শক্রকবল মুক্ত হয়েছে। ময়মনসিংহ ও ঢাকার মধ্যবর্তী সমস্ত ব্রীজ ও কালভার্ট উড়িয়ে দেবার ফলে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ জেলা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে শত্ৰু-বাহিনীর চলাচলে এক দারুণ বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বীর মুক্তিযােদ্ধারা প্রবল এক আক্রমণ চালিয়ে ঢাকা জেলার মুন্সিগঞ্জ থানাটিও মুক্ত করেছেন।

কুমিল্লা জেলায় মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত এক খবরে প্রকাশ অসমসাহসী বীর যােদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে বিলােনীয়া রেলস্টেশনটি মুক্ত করেছেন এবং সে অঞ্চলে এখন স্বাধীন বাঙলার পতাকা উড্ডীন রয়েছে। 

মনােহরদী-হাতীরদিয়ায় মুক্তিবাহিনীর চাপ

সম্প্রতি ঢাকার সন্নিকটস্থ মনােহরদীতে পাক সামরিক অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী জি সি ও সহ ২৫ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করেছেন। মুক্তিবাহিনী এই সংঘর্ষে ২টি মেশিনগান ও একটি দুরবীন সহ ৫৫টি রাইফেল হস্তগত করেছেন। এর কিছুদিন আগে মনােহরদী সংলগ্ন হাতীরদিয়া, এলাকায় মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে ৮ জন পাকসৈন্যকে খতম করেন। নােয়াখালী জেলার হাজত খােলাতে মুক্তিবাহিনীর এক অভিযানে ৩৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। এই সংঘর্ষে অসমসাহসী একজন মুক্তিযােদ্ধা আত্মােৎসর্গ করেন। কিছুদিন আগে মুক্তিবাহিনী পাবনা-বগুড়া সংলগ্ন শহরটায় এক আক্রমণ চালিয়ে লেঃ কর্ণেল রহমত খান ও সুবাদার নওয়াব আলি সহ বহু পাকসৈন্য খতম করেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য যে মুক্তিবাহিনী গত ২১শে অক্টোবর সবগুলাে রাজাকার খতম করে সমগ্র বাজিতপুর থানা এলাকাকে শক্রকবল মুক্ত করেছেন। এই অভিযানে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ১৭টি রাইফেল। সহ প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গােলাবারুদ উদ্ধার করেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে যে কিশােরগঞ্জ মহকুমার ১২টি থানার মধ্যে ৮টি থানা অনেক দিন ধরেই মুক্তিবাহিনীর আয়ত্বাধীন। এই মহকুমা শহরের সাথে চারদিকের রেল ও সড়ক যােগাযােগ অনেকদিন ধরেই অচল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্তও মহকুমা শহর সহ বাকী তিনটি থানা দখল করার জন্যে মুক্তিবাহিনী শত্রুর বিরুদ্ধে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন  বলে জানা যায়। প্রচুর সংখ্যক রাজাকারও ঐ এলাকায় মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছে। মুক্তিকামী যযাদ্ধারা এক সফল কমাণ্ডে আক্রমণ চালিয়ে জগন্নাথঘাট ও সরিষাবাড়ীর মাঝামাঝি জায়গায় সৈন্যবাহী একটি বিশেষ রেলগাড়ী লাইনচ্যুত করেন। এই আক্রমণে ৪০ জন পাকসেনা নিহত হয়।

৮ই নভেম্বর ভায়াডাঙ্গা ও শ্রীবদর মধ্যবর্তী একটি সড়ক সেতু উড়িয়ে দিয়ে সড়ক যােগাযােগ একেবারে বিকল করে দেয়া হয়। পরদিন বালা ও গােটাগ্রাম অঞ্চলে মুক্তিকামী তরুণরা ৭টি রাইফেলসহ ৬ জন রাজাকারকে ধরে আনেন। ৫ই নভেম্বর মােহনগঞ্জের কাছাকাছি আলুদা অঞ্চলে তিনজন শত্রু খতম হয়। লেংগুরা এলাকায় পাকবাহিনী মুক্তিযােদ্ধাদের ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালাবার চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনী পাল্টা আঘাতে ১৫জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। কুষ্টিয়া-যশােহর-খুলনা-রণাঙ্গণ গত ১০ই নভেম্বর আলিপুর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকহানাদার বাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ হয়। প্রায় আধঘণ্টাকাল অবিরাম গােলাগুলি বিনিময়ের পর মুক্তিবাহিনী ৫ জন শত্রুসেনা খতম করেন। একজন তরুণ মুক্তিযােদ্ধাও এই সংঘর্ষে শহীদ হয়েছেন বলে জানা যায় । ঐ একই দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তেরাইল এলাকায় ১৬জন রাজাকারকে বন্দী করেন এবং ১৬টি রাইফেল ও ১১টি বেয়নেটও শত্রুর হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। এই ঘটনারই একদিন আগে অর্থাৎ ৯ই নভেম্বর রাজাপুর এলাকায় দুজন রাজাকার সহ চারটি রাইফেল মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। ঐ দিনই একটি সামরিক গাড়ী যখন জোড়াপুকুর এলাকায় রসদ সরবরাহের জন্যে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে মুক্তিসংগ্রামীরা চারদিক থেকে সাঁড়াশী আক্রমণ চালায়। ফলে রসদবাহী যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এই আক্রমণে মােট ১১জন পাক সেনা খতম হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী দর্শনা কাপাসডাঙার মধ্যবর্তী তার যােগাযােগও বিচ্ছিন্ন করে দেন। গত ৮ই নভেম্বর মুক্তিযােদ্ধারা রসিকপুর অঞ্চলে শত্রুদের অবস্থানের উপর আক্রমণ চালান। তারা ১৫ জন পাকসেনা খতম করেন এবং শক্রদের পাঁচটি বাংকারও একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেন।

রামকৃষ্ণপুর এলাকায় পাক সেনাবাহিনী গত ৭ই নভেম্বর টহল দেবার সময় মুক্তিবাহিনী সাঁড়াশী আক্রমণ চালিয়ে ৫ জন পাকসেনা খতম ও ৩ জনকে জখম করেন। এই ঘটনার দুদিন আগে যশােহর জেলার মসল্লা এলাকায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মাইন বিস্ফোরণে একটি পাক সামরিক জীপ পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। জীপের তিনজন পাক সৈন্যও নিহত হয়। অসম সাহসী মুক্তিযােদ্ধাদের অন্য একটি দল গত ৩রা নভেম্বর খুলনা জেলার কলারােয়া থানাধীন খারদারীতে শত্রুসৈন্যদের সাথে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ৬ জন শত্রুসৈন্য খতম করেন।

গত ৯ই নভেম্বর খুলনা জেলার বেতগাছীতে স্বাধীনতাকামী যােদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর প্রবল গােলা বিনিময় হয়। ৫ জন শত্রুসৈন্য এতে প্রাণ হারায়। ঐদিন পাক ফৌজ মুক্তি সংগ্রামীদের অবস্থানের উপর আচমকা আক্রমণ চালালে মুক্তিবাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে দুজন খতম করেন এবং বহু পাকসৈন্যকে জখম করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে মুক্তি যােদ্ধারা কাশিয়ানী থানার ফকুরা এলাকায় বহু সংখ্যক পাক মিলিটারীকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। এদের মধ্যে কিছু রাজাকারও ছিল। এই আক্রমণে একসাথে ৬৫ জন শত্রুকে খতম করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫জন রাজাকার ছাড়া বাকী সবাই ছিল পাঞ্জাবী সেনা। ৭ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ফকুরা ও সাহাপুর এলাকায় পৃথক দুটো আক্রমণ চালিয়ে ৬জন রাজাকারকে বন্দী করে ৮টি রাইফেল উদ্ধার করেন। ৬ তারিখে কুষ্টিয়া জেলার বেতাই অঞ্চলে ১ জন রাজাকারকে বন্দী করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যশােহর জেলার চুড়ামনকাঠি এলাকায় কয়েকটি রেল সেতু উড়িয়ে দিয়ে ঐ এলাকার রেল যােগাযােগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করে দেন। ঐ একই দিনে অর্থাৎ ৩রা নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সেখানকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লাইট পােস্ট উড়িয়ে দিয়ে সেখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন। 

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী রণাঙ্গন

গত ১২ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কাশিমপুর এলাকায় শত্রুর অবস্থানের উপর বিপুল বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়েন। বেশ কয়েকঘণ্টাকাল যুদ্ধের পর শত্রুসৈন্য পিছু হটে। ঐদিনই পশ্চিম পাকিস্তানী রেঞ্জার বাহিনী আলিপুর এলাকায় যখন টহল দিচ্ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তখন তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। ফলে একজন রেঞ্জার প্রাণ হারান। মুক্তিবাহিনী তার রাইফেলটি উদ্ধার করেন। ৬ই নভেম্বর সিঙ্গের দাবীর রেলস্টেশনের কাছাকাছি আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা ৫ জন শত্রুসেনা খতম করেন। এই ঘটনার দুদিন আগে চিলমারি ও কুড়িগ্রামে মুক্তিবাহিনী তিনদিন ধরে আক্রমণের পর আক্রমণ চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী ভাড়াটিয়া সৈন্যদের উৎখাত করে ত্রিশ মাইল অঞ্চল করায়ত্ত করেছেন। প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে শত্রুসেনারা দিনাজপুরের আটমাইল দূরে এক নিরাপদ স্থানে পালিয়ে গেছে। মুক্তিযােদ্ধারা দিনাজপুর ফুলবাড়ী সড়ক মােহনপুর ব্রীজ এবং সে অঞ্চলের সমস্ত বিবর ঘাটিগুলাে দখল করে নিয়েছেন। এর আগেই মুক্তিবাহিনী আরেক অভিযানে মােহনপুরস্থ প্রধান সামরিক ঘাটীসহ অন্যান্য অবস্থান শিবিরগুলাে নিজেদের দখলে নিয়ে নেন। এই আক্রমণে ৪৫ জন পাকসৈন্য খতম হয় ও মুক্তিযােদ্ধারা বহু অস্ত্রশস্ত্র গােলাবারুদ হস্তগত করেন। বেশ কিছু পাকসৈন্য মুক্তিফৌজের হাতে বন্দী হয়। পাক বিবরর্ঘাটিগুলাে থেকে তিনটি নারীকেও মুক্তিযােদ্ধারা উদ্ধার করেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সংঘর্ষে অগণিত পাকসৈন্য জখম হয়েছে বলে জানা যায়। মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ী দিনাজপুর সদর সড়ক ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।

টাঙ্গাইল জেলা মুক্ত সুদীর্ঘ সাত মাস ধরে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করে মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ টাঙ্গাইল জেলা শত্রু-কবলমুক্ত করেছেন বলে স্বাধীন বাংলা বেতারের এক খবরে জানা যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই জেলা মুক্ত করার সময় মুক্তিবাহিনী প্রায় দু’হাজার পাক সৈন্য খতম করেন। তাছাড়া ৮০০ জন রাজাকার এবং ১৯৭জন পাকিস্তানী দালালও মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। প্রচুর গােলাবারুদ এবং অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। টাঙ্গাইল জেলার সর্বত্রই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জনগণ যেভাবে সহযােগিতা করছেন তা সত্যিই প্রশংসার যােগ্য বলে বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্র জানান। প্রত্যেকটি থানাতেই একটি করে হাসপাতাল খােলা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের বহু ডাক্তার নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। টাঙ্গাইল জেলার স্বাধীনতারক্ষা কল্পে মুক্তিবাহিনী সবরকম যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। নদীপথের বিভিন্নস্থানে মুক্তিবাহিনী কড়া নজর রাখছেন বলেও জানা যায়।

অভিযান ১ : ১।

১৮ নভেম্বর ১৯৭১

সূত্র:  গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড  ০৯