বাংলাদেশ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বশান্তির জন্য একযোগে কাজ করবে
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোমবার ঘোষণা করেন যে, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে বাংলাদেশ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একযোগে কাজ করে যাবে। মহান সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষ করে ঢাকা প্রত্যাবর্তনের পর জাতির জনক এ মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো আমরাও রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সুতরাং আমাদের অনেক নীতিগত মিল রয়েছে। তেজগাঁও বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধু প্রকাশ করেন যে, রুশ নেতৃবৃন্দ বাংলার নির্যাতিত জনগণের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের তার রাষ্ট্রীয় সফরের ফলাফল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী জানান যে, এ সফর ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আলোচনা প্রসঙ্গে সোভিয়েত নেতৃবৃন্দের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, তারা তাকে ও তার দলকে যে আতিথেয়তা দেখিয়েছেন তার তুলনা নেই। তিনি বলেন, “আমাদের যে ভালবাসা ও সম্মান দেয়া হয়েছে তা এদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্যেই দেয়া হয়েছে। আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, তারা কেবল দু’দেশের মঙ্গলই নয় বিশ্ব শান্তি ও মানবকল্যাণের সামগ্রিক বিষয় নিয়েই কথাবার্তা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, রুশ জনগণ জানেন যে, বাংলাদেশের মানুষ রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আর ঠিক এজন্যে বাংলাদেশের জনগণের জন্যে তাদের রয়েছে অশেষ শ্রদ্ধা। কারণ তারাও রক্ত পিচ্ছিল বিপ্লবের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাশিয়া যে সমর্থন দিয়েছে সেজন্য এ দেশের জনগণ তাদের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। সুতরাং বাংলাদেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন মৈত্রী চির স্থায়ী হবে এতে কোনো সংশয় নেই। এর সাথে প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রতিও তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন যে, মুক্তি সংগ্রামের দিনগুলিতে ভারত যে সাহায্য করেছে, বাংলার জনগণ তা বিস্মৃত হতে পারে না। ভারতের সাথেও আমাদের মৈত্রী অবশ্যই চিরস্থায়ী হবে। সাংবাদিকদের সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর বঙ্গবন্ধু স্বকণ্ঠে ‘জয় বাংলা’। বাংলাদেশ সোভিয়েত ইউনিয়ন মৈত্রী জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি স্লোগান উচ্চারণ করেন।
রেফারেন্স: ৬ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ