বাংলাদেশে ত্রাণকার্যে জাতিসংঘ
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের দুর্গত অধিবাসীদের সাহায্যের জন্য জাতিসংঘ এক বছরের এক পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিকল্পিত সাহায্যের পরিমাণ ৩৭২ কোটি টাকা। এটা সংগ্রহের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে উক্ত পরিমাণ অর্থ চাঁদা হিসেবে দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন।এ টাকাটা বিলিবন্দোবস্ত করার জন্য জাতিসংঘ কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১ কোটি ৫৯ লাখ ৭২টাকা ব্যয় হবে বলে জানা গেছে। এভাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা বিরাট অংশ জাতিসংঘের কর্মচারীদের জন্য ব্যয় করার মানে দুর্গত বাংলাদেশের বুভুক্ষু নরনারী ও শিশুদের বঞ্চিত রাখা।পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দুর্গতদের ত্রাণকার্যে জাতিসংঘের কর্মচারীদের জন্য এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় “খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি” প্রবাদ বাক্যটি মনে করিয়ে দেয়।পর্যবেক্ষকদের মতে বাংলাদেশে যে সমস্ত সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের মাধ্যমে ত্রাণকার্য চালানোই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। ত্রাণকার্যের জন্য জাতিসংঘ কর্মচারীদের বাংলাদেশে আগমনের কোনো প্রয়োজন নেই। বৃটিশ পার্লামেন্টের সদস্য জন ষ্টোন হাউস গতকাল কুষ্টিয়া হাইস্কুল ময়দানে এক জনসভায় কুষ্টিয়ায় ষ্টোন হাউস-ব্রিটেন বাংলাদেশকে ৫০ লক্ষ পাউন্ড সাহায্য দিতে প্রস্তুত। বক্তৃতাকালে বলেন যে, বাংলাদেশ সদস্যভুক্ত হবার পর বৃটিশ কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘভুক্তদের মধ্যে যথাক্রমে দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশ হবে। তিনি প্রসঙ্গত বলেন যে, মুক্তিফৌজ সত্য ও স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি ক্রয়ের জন্যে বৃটেন ৫০ লক্ষ পাউন্ড সাহায্য দিতে প্রস্তুত। পূর্বাহ্নে সভায় বক্তৃতা করেন জনাব আমিনুল ইসলাম, জনাব আব্দুর রউফ, জনাব আহসান উল্লাহ ও জনাব নুরুজ্জামান জিকু। সভাশেষে মি.ষ্টোন হাউস কুষ্টিয়া শহরের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
রেফারেন্স: ২ মার্চ ১৯৭২, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ