মুক্তিযুদ্ধ দিকে দিকে
মুজিবনগর, ১৫ই নভেম্বর বার বার আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ঢাকা নগরীকে অস্থির করে তুলেছে। গত ২রা নভেম্বর গেরিলারা ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তর আক্রমণ করে। উক্ত দপ্তরে কর্মরত গার্ডকে ঘায়েল করে তারা বােমা ফাটায়। ফলে বহু মূল্যবান নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সিলেট সেক্টরে মুক্তি-ফেীজের হাতে বহু পাকসেনা আহত হয়েছে। শ্রীহট্টের সামরিক হাসপাতালে আহত সৈন্যদের জন্য শয্যার অভাব হয়ে পড়েছে। | আখাউড়া অঞ্চলে মুক্তিফৌজ ১৫ জন পাকসেনাকে খতম করে। কমান্ডােদের আক্রমণে খুলনার বেতগাছিতে ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। গােপালগঞ্জের ফাকরা ছাউনিতে আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযােদ্ধারা ৫০ পাক সৈন্য ও ৫০ জন রাজাকারকে হত্যা করে। গত ৪ঠা রাত্রে মুক্তিফৌজ ১৫ জন পাকসেনাকে খতম করে স্বরূপগঞ্জ দখল করে নেয়। মুজিবনগর, ১৭ই নভেম্বর বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনী গত কয়েক দিন বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাক সৈন্যদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে তাদের ভীষণ ভাবে নাজেহাল করেছে। মুক্তি বাহিনীর গেরিলা প্রধানের সদর দপ্তর থেকে পাওয়া খবরে একথা জানা গিয়েছে। সম্প্রতি কুষ্টিয়া-যশাের খুলনা রণাঙ্গনে বেরিলবাড়ী নামক স্থানে এক প্রচণ্ড আক্রমণে ৩৫জন পাক সৈন্য বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধার হাতে নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়াছে। একই দিনে বাংলাদেশের গেরিলারা নবতকাটি নামক স্থানে পাক সৈন্যের একটি জীপ ধ্বংস করে এবং বসা ও বেথিরা ডাঙ্গার মধ্যে টেলিফোন যােগাযােগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। সম্প্রতি আজিমগঞ্জে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর হাতে তিনজন খানসেনা এবং আটজন রাজাকার খতম হয়েছে। ঐদিন মুক্তি বাহিনীর গেরিলারা বাহদুরাবাদ ঘাটে একটি পাক মটরলঞ্চ বিধ্বস্ত করেছে এবং চাতলাপুরে দু’জন পাক সেনাকে হত্যা করেছে। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের কাছে, গত ৩রা অক্টোবর মুক্তি যােদ্ধারা অতর্কিত হানা দিয়ে চারজন পাক সৈন্যকে খতম করেছে।
গত ৫ই অক্টোবর দিনাজপুর জেলার খাকপুরে বাংলাদেশের গেরিলা যােদ্ধারা একটি শত্রুঘাটির ওপর হানা দিয়ে চারজন পাকসৈন্যকে নিহত ও আরাে দু’জনকে আহত করেছে। ৪ঠা অক্টোবর রংপুর দিনাজপুর রণাঙ্গনে ভােতিমারী অঞ্চলে পাক সেনাবাহিনীর একটি বড় রকমের জীপ মুক্তিবাহিনী ধ্বংস করেছে বলে জানা গিয়াছে। বাংলাদেশের মুক্তিযােদ্ধা গেরিলারা গত ২৬শে সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার গােপালগঞ্জ মহকুমার রামচন্দ্র পুরের কাছে মধুমতী নদীতে শত্রু সৈন্যদের জন্য প্রেরিত খাদ্য ও অস্ত্র শস্ত্র বােঝাই দুটি মালবাহী পাক জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে। বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সেকটরের বেলডাঙ্গা, বােয়ালিয়া, মাদরা, কাকডাঙ্গা ও তার আশে-পাশে মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে ২ শত ৮০ জন পাক সেনাকে খতম করেছে। মুক্তিযােদ্ধারা পাক সৈন্য বাহিনীর দুটো কোম্পানীকে নিশ্চিহ্ন করেছে। ৬ জন পাক সৈন্যকে বন্দী করেছে। বাংলা দেশের মুক্তি যােদ্ধারা হস্তগত করেছে চীনদেশের তৈরী ২টি এল, এম, জি এবং ২টি রাইফেল । অবশ্য এই গেরিলা যুদ্ধে বাংলাদেশের দুই গেরিলা যােদ্ধা আহত হয়েছেন। | সম্প্রতি চট্টগ্রামে মুক্তি বাহিনীর গেরিলা যােদ্ধাদের আক্রমণে একটি গ্রীক তৈলবাহী জাহাজ গুরুতররূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাপ্তাহিক বাংলা ১: ৫]
১৮ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯