You dont have javascript enabled! Please enable it! 1966.04.19 | “জেল বহুবার দেখিয়াছি, বুলেটের আঘাতও পরীক্ষা করিয়া দেখিতে প্রস্তুত” -শেখ মুজিব | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

“জেল বহুবার দেখিয়াছি, বুলেটের আঘাতও পরীক্ষা করিয়া দেখিতে প্রস্তুত” -শেখ মুজিব

(বিশেষ প্রতিনিধি)
খুলনা, ১৭ই এপ্রিল।আজ স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল পার্কে এক বিরাট জনসমাবেশ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবর রহমান বিপুল হর্ষধ্বনি ও করতালির মধ্যে ঘােষণা করেন। জেল আমরা বহুবার দেখিয়াছি, বুলেটের আঘাতও পরীক্ষা করিয়া দেখিতে প্রস্তুত। আঘাত যতই প্রচণ্ড হইবে, আমাদের সংগ্রাম ততই জোরদার হইবে, আপােষহীনভাবে চলিতেই থাকিবে। শেখ সাহেব বলেন যে, সরকার ছয়দফার উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভাবে গ্রেফতারের জন্য প্রস্তুতি নিতেছেন। তাই এক্ষণে জনসাধারণকেই আগাইয়া আসিতে হইবে।
শেখ মুজিব বলেন, হিন্দু ও বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের যাঁতাকলে উপমহাদেশের দশ কোটি মুসলমান বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হইলেই পাকিস্তানের দাবী উত্থাপিত হয় এবং মুসলমানরা পাকিস্তান কায়েম করে। আজ সাড়ে পাঁচ কোটি পূর্ব পাকিস্তানীকেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ছয়দফা আদায় করিতে হইবে।
অদ্য খুলনায় অনুষ্ঠিত এই জনসভা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ সফরকালীন সর্বশেষ জনসমাবেশ। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় শেখ সাহেব তাঁহার ছয়-দফার দফাওয়ারী বিশ্লেষণ করেন। প্রতিক্রিয়াশীল এবং কিছুসংখ্যক অতি প্রগতিবাদী রাজনীতিক কেন ছয়-দফার বিরুদ্ধে জোট বাঁধিয়াছেন, তাহা অনুধাবনের জন্য তিনি জনসাধারণকে আহ্বান জ্ঞাপন করেন।

ছয়দফা বিশ্লেষণ করিয়া আওয়ামী লীগ নেতা বলেন : ছয়দফা বঞ্চনার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ, ইহা আপামর জনসাধারণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গ্যারান্টি, ইহা সমগ্র পাকিস্তানের জন্যই ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা বড় সনদ। ছয়-দফার সুযােগ গ্রহণে পশ্চিম পাকিস্তান নারাজ কেন—তাহাও তিনি ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন যে, সেপ্টেম্বরের যুদ্ধের সময় শক্তিশালী কেন্দ্র বা কেন্দ্রের শক্তিমান পুরুষের উপযােগিতা অনুভূত হয় নাই। যুদ্ধকালে সর্বক্ষমতাসম্পন্ন প্রেসিডেন্ট কেন পূর্ব পাকিস্তানে আসিতে পারেন নাই, তাহা অনুধাবনের জন্য তিনি আহ্বান জনান। তিনি উল্লেখ করেন যে, যুদ্ধকালে পূর্ব পাকিস্তান গােটা দুনিয়া হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছিল। বক্তৃতাকালে শেখ মুজিব বলেন যে, পাকিস্তানের ভ্রাতৃত্বের খাতিরে পূর্ব পাকিস্তান সকল প্রকারে আত্মত্যাগ করিয়াছে। কিন্তু শুভেচ্ছার এই মনােভাবকে দুর্বলতা বলিয়া ভুল বুঝা হইয়াছে।
খুলনার মহামারী, জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি স্থানীয় সমস্যাদি সম্পর্কেও তিনি আলােচনা করেন। দূষিত পানি সরবরাহের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালােচনা করেন।
তিনি বলেন যে, স্থানীয় মন্ত্রীরা বিভিন্ন স্থানে উপদেশ খয়রাত করিতেছেন। কিন্তু মহামারীকবলিত খুলনার জনসাধারণের নিকট আসিতেছেন না। কারণ জনসাধারণের জন্য তাঁহাদের কোন মমতা নাই, প্রভুর সন্তুষ্ট বিধানই তাঁহাদের কাজ।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯ এপ্রিল ১৯৬৬