রণাঙ্গন সংবাদ চিলমারী-উলিপুর ও কুড়িগ্রাম রণাঙ্গন
[নিজস্ব প্রতিনিধি পরিবেশিত]। গত ১১ই ও ১২ই নভেম্বর বর্বর পাকসৈনিকগণ হাতিয়া-বন গ্রাম অঞ্চলে অতর্কিত আক্রমণ করে কয়েকটি গ্রামকে পুড়িয়ে দেয় এবং ৫০০/৬০০ শত নিরিহ নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞেরত পাকসেনাকে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনীর জোয়ানগন বাধা দিলে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষের সূচনা হয়। এই সংঘর্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন পাক সৈন্য নিহত হয় এবং এর চেয়েও অধিক সংখ্যক সৈন্য আহত হয়। বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত পাক সৈন্য সেখান থেকে উঠে যেতে বাধ্য হয়। ১১ই নভেম্বর আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী এক অভিযান চালনা করে কুড়িগ্রামের বুড়াবুড়ি অঞ্চল থেকে সশস্ত্র তিনজন রাজাকারকে বন্দী করে। এই দিনই অন্য একদল মুক্তিফৌজ গাইবান্ধা মহকুমার হরিপুর অঞ্চলে এক অভিযান পরিচালনা করে ৪ জন রাজাকার ও ৫ জন পুলিশকে বন্দী করে এবং প্রায় দুইশত গুলিসহ ৯টি রাইফেল হস্তগত করে। এই অভিযান পরিচালনা করেন সুবাদার আব্দুল হাকিম। গত কিছুদিন যাবত ময়মনসিংহ জেলার কামালপুর অঞ্চলে পাকসেনাদের সঙ্গে আমাদের মুক্তিবাহিনীর অবিরাম গুলি বিনিময় চলছে। সংবাদে প্রকাশ এই অঞ্চলটি সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় পাক কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েক কোম্পানীর সৈন্যকে এখানে পাবনা বিবর ঘাঁটিতে মােতায়েন রেখেছে। আমাদের দুর্ধষ মুক্তিবাহিনী ইতিপূর্বেও কয়েক বার সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনা করেও শত্রুদের বিপুল ক্ষতি সাধন করেছে। গত ১৫ই নভেম্বর তারা আবার এক নূতন অভিযান পরিচালনা করে ৬৮ জন পাকসেনাকে খতম করে এবং বহু সংখ্যক সৈন্যকে আহত করে। স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত সংবাদে প্রকাশ আমাদের দুর্বার সাহসী গেরিলাগণ গত ১৪ই নভেম্বর খুলনায় কয়েকটি পাটের গুদামে অগ্নিসংযােগ করত: প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার পাট পুড়িয়ে দিয়েছে।
অগ্রদূত। ১ ১২
১৭ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯