চট্টগ্রামে দু’খানা অয়েল ট্যাঙ্কার বিনষ্ট
বাংলাদেশের দুর্ধর্ষ মুক্তিযােদ্ধারা শত্রুর উপর আরেকটি প্রচন্ড আঘাত হেনেছেন। গত বুধবার (৩রা নবেম্বর) তারা চট্টগ্রাম বন্দরে আরেকখানা অয়েল ট্যাঙ্কার ডুবিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিবাহিনীর ডুবুরিদের হাতে চট্টগ্রাম ও খুলনা বন্দরে পরপর কয়েকখানা পাকিস্তানী ও বিদেশী জাহাজ নিমজ্জিত ও বিনষ্ট হওয়ার পর সামরিক চক্র ঐ দুটো বন্দরে কড়া সামরিক পাহারার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু বাংলার স্বাধীনতার সূর্য সৈনিকরা তাদের চোখে ধূলি দিয়েই সর্বশেষ অয়েল ট্যাঙ্কারটি নিমজ্জিত করে দিয়েছেন। মুক্তিবাহিনীর ডুবুরিরা অয়েল ট্যাঙ্কারে মােট তিনটি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। ঢাকায় নিয়ােজিত পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক চক্রের লাট-বেলাটরা মুক্তি বাহিনীর এই অসমসাহসিক কাজে নেহায়েত ঘাবড়িয়ে গিয়েছে। তারা সরকারীভাবে এই অয়েল ট্যাঙ্কার ডুবুরি কথা স্বীকারও করেছে। তবে চিরাচরিত পদ্ধতিতে কাজটা ভারতীয় এজেন্টদের” বলে জানিয়েছে। এই তথাকথিত সরকারী কর্তারা জানিয়েছে যে অয়েল ট্যাঙ্কারটির সাতজন নাবিক নিখোঁজ হয়েছে এবং অপর দশজন আহত হয়েছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায় প্রায় দশ হাজার টনের এই অয়েল ট্যাঙ্কারটিতে গত বুধবার সকালে আধ ঘণ্টা পরপর দুটো বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে সমগ্র ট্যাঙ্কারে আগুন ধরে যায়। তখন অগ্নিনির্বাপক দল ও নাবিকরা আগুন নিবানাের কাজে আত্মনিয়ােগ করে। ঠিক এই সময় প্রচণ্ড শব্দ করে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং অগ্নিনির্বাপক নিযুক্ত সমস্ত লােকজন জাহাজ থেকে সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়। তারপর ট্যাঙ্কারটি জ্বলতে জ্বলতে পানিতে ডুবে যায়। ঢাকার তথাকথিত সরকারী মহল ট্যাঙ্কারটির নাম “মাহতাব জাবেদ” বলে জানিয়েছে। কিন্তু লয়েডস্ শিপিং কোম্পানীর তালিকায় অনুরূপ কোন জাহাজ নাই। তবে পাকিস্তানের অনুরূপ দু’খানা ট্যাঙ্কার রয়েছে। তার একটির নাম হল “মাহতাব জাবেদ”। এটির মালিক হচ্ছে ইষ্টার্ন পাকিস্তান। কমার্সিয়েল কর্পোরেশন। অপর ট্যাঙ্কারটির নাম হচ্ছে “মাহতাব জাবেদ-২”। এটির মালিক হচ্ছে পাকিস্তান ট্যাঙ্কার্স কোম্পানী। দু’খানাতেই দশ হাজার টনের মত তৈল ধরে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযােগ্য যে গত সপ্তাহে বাংলার বীর মুক্তিযােদ্ধারা চট্টগ্রাম বন্দরে আর একখানা অয়েল ট্যাঙ্কার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সে ট্যাঙ্কারটি ছিল গ্রীক মালিকাধীন।
জয়বাংলা (১)১: ২৭
১২ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯