গােলাম আজম
১৭ সেপ্টেম্বর
ঢাকার মােহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজ ছিল আল বদরদের হেডকোয়ার্টার এবং রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রশিক্ষণরত রাজাকার আলবদরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন-“ইসলাম ও পাকিস্তানের দুশমনরা আলেম, ওলেমা মাদ্রাসার ছাত্র ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে ব্যাপকভাবে হত্যা করে এ কথাই প্রমাণ করেছে যে, এসব লােককে খতম করলেই পাকিস্তানকে ধ্বংস করা যাবে। আলেম ও দ্বীনদারদের উপর এই হামলা আল্লাহরই রহমত, কারণ এই হামলা না হলে তারা আত্মরক্ষা ও পাকিস্তানের হেফাজতের জন্য রাজাকার, আলবদর, আল শামস মুজাহিদ ও পুলিশ বাহিনীতে ভর্তি হবার প্রয়ােজন বােধ করত না।
তার বক্তৃতার অন্যান্য কিছু অংশ “রাজাকার বাহিনী কোন দলের নয়, তারা পাকিস্তানে বিশ্বাসী সকল দলের সম্পদ। কোন দলের লােক কম বা কোন দলের বেশি লােক রাজাকার বাহিনীতে থাকতে পারে, কিন্তু তােমরা দল মতের উর্ধ্বে উঠে পাকিস্তানে বিশ্বাসী সকল দলকে আপন মনে করবে। ইসলামী দল সমূহের মধ্যে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে তাও আল্লাহরই রহমত। | বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামাতে ইসলামী ও নেজামী ইসলামীর মধ্যে কোন পার্থক্য দেখেনি, বরং তারা ঢালাওভাবে আলেম ও ইসলামী দলের লােকদের খতম করেছে। সুতরাং আমরা নিজেরা চেষ্টা না করে এক না হলেও দুশমনরা সমানভাবে আঘাত হেনে আমাদের এক হতে বাধ্য করেছে। এর পরও যদি কেউ বিভিন্নতা সৃষ্টির পূর্বের অভ্যাস ত্যাগ না করে তবে আল্লাহ স্বয়ং তাদের মেরামত করবেন, তােমরা তাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পােষণ করাে না।”
মুক্তিপাগল বাঙালিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন“বাইরের শক্রর চেয়ে ঘরের শত্রু বেশি ক্ষতিকারক। আমাদের ঘরেই এখন অসংখ্য শত্রু তৈরী হয়েছে। এই সৃষ্টির কারণ যাই হােক সে দিকে এখন নজর দেওয়ার সুযােগ নেই। এখন ঘরে আগুন লেগেছে, কাজেই আগুন নেভানােই তােমাদের প্রথম দায়িত্ব। এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং রাজাকাররাও তাদের পেছড়ে এগিয়ে এসেছে।”
রাজাকারদের উৎসাহিত করার জন্য বলেন—“বিপদের মধ্যেও তােমাদের দৃঢ় শপথে অবিচল থাকতে হবে—তবেই আল্লাহর কাছে সত্যিকারের মুজাহিদদের মর্যাদা লাভ করবে।” | তিনি আরাে বলেন-“তােমরা অভ্যন্তরীণ দুশমনদের দমন করার কাজে যত তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি সেনাবাহিনী দেশকে শত্রু মুক্ত করার কাজে ফিরে যেতে পারবে।”
রেফারেন্স: ১৯৭১ ঘাতক-দালালদের বক্তৃতা ও বিবৃতি- সাইদুজ্জামান রওশন