1977.07.01 | বাজেট ১৯৭৭-৭৮ | সাপ্তাহিক বিচিত্রা
অর্থনীতি
বাজেটঃ ‘৭৭-৭৮
গত পঁচিশে জুন বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করেন। ১১৫৬,৬১ কোটি টাকার এই বিরাট বাজেট বাংলাদেশের জন্যে এই প্রথম সম্ভব হয়েছে, যা উদ্বৃত্ত চরিত্রের। একই সঙ্গে ১৯৯০,৯০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট পেশ করেন ডঃ এম এন হুদা এবং ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার বেশি টাকার রেলওয়ে বাজেট পেশ করেন রিয়ার এডমিরাল মুশাররফ হুসেইন খান।
পূর্ববর্তী বছর
বাজেট বক্তৃতায় সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল গত বছরের সার্থকতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে খোলাখুলি ঘোষণা। এটি রাজনৈতিক দিক থেকে এবং আন্তর্জাতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। সমাপ্ত প্রায় অর্থবছর সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট খোলাখুলি ঘোষণা করেন, পাঁচ শতাংশ পরিকল্পিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির স্থানে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তিনশতাংশ। নিঃসন্দেহে তার পূর্ববর্তী বছরের নয় শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধির তুলনায় এই বৃদ্ধি অনুল্লেখ্য। অবশ্য এই কম প্রবৃদ্ধির প্রধান কারণই ছিল প্রাকৃতিক অস্থিতি। অসময় বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি ফসলহানি ঘটিয়েছে প্রায় দশ লক্ষ টনের মত। পরিকল্পনা অনুযায়ী মূল্যস্তর বৃদ্ধি হওয়ার কথা পাঁচ শতাংশ। অথচ যথেষ্ট প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তা ন’শতাংশের বেশি বেড়েছে। এবং এরও প্রধান কারণ ছিল প্রাকৃতিক। শস্যহানি ও আবহাওয়ার কারণে যোগাযোগ বিঘ্ন ঘটায় সরবরাহ কম হয়। ফলে চাল সহ রবিশস্য ও অন্যান্য কয়েকটি কৃষিজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। খাদ্য মজুদের বেলায় বিভিন্নতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেন, “(১৯৭৬-৭৭) এ বছর দেশের খাদ্য পরিস্থিতিও বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করেছে। প্রাথমিক অবস্থায় মওজুদ সন্তোষজনক ছিল এবং উৎপাদন-লক্ষ্যমাত্রা ও সাহায্য আমদানির সম্ভাবনা বিবেচনা করে কোন উদ্বেগের কারণ ছিল না। আমন ধান উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার ফলে বোরো, উৎপাদন সর্বাধিক করার প্রতি নজর দিতে হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ তাও প্রতিকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ” ফলে মওজুদ কম হয়ে যাওয়ায় অর্থবছরের অনেকটা পার হয়ে যাওয়ার পর আমদানির দিকে নজর দিতে হয়। এবং মজুদ সন্তোষজনক করার জন্যে নিজস্ব সম্পদ থেকে দেড় লক্ষ টন খাদ্য শস্য আমদানির ব্যবস্থা করতে হয়। যা এখনো এসে পৌঁছায়নি। একই সঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় “১৯৭৬.৭৭ সালে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারে শ্লথগতি প্রাপ্তব্য বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণ কমিয়ে দেয়” বলে উল্লেখ করা হয়। নিঃসন্দেহে এই খোলাখুলি বর্ণনা জনগণের দৃঢ় আস্থা পেতে সাহায্য করবে। এবং সেই সঙ্গে ভুলত্রুটি কারণ দূর করার দৃঢ় প্রচেষ্টা এবং “সম্ভাবনায় ও অনুকূল লক্ষণগুলি”র উল্লেখ সাধারণ মানুষকে আরও সহযোগী করতে সাহায্য করবে বলে মনে করা যায়। প্রেসিডেন্ট “প্রধানতঃ কৃষি ক্ষেত্রে প্রতিকূল অবস্থার ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আশানুরূপ হয়নি, আগামী বছরে এই ক্ষতি পূরণ করে নিতে হবে”, বলে দৃঢ় মত পোষণ করেছেন। এবং জাতির জন্যে ১৯৭৭-৭৮ সাল একটি চ্যালঞ্জের বছর বলে ঘোষণা করেছেন।
১৯৭৬-৭৭ সালের সমাপ্ত প্রায় অর্থবছরের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট সং ক্ষেপে বর্ণনআ দেন এইভাবে— (ক) ১৩০ লক্ষ টন খাদ্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হতে প্রায় দশ লক্ষ টন হ্রাস (খ) রফতানি আয় প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি (গ) শিল্পজাত উৎপাদন শতকরা ৯ ভাগ বৃদ্ধি (ঘ) প্রকৃত আমদানির পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় শতকরা ২৫ ভাগ হ্রাস (ঙ) বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তিতে ঘাটতির ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ব্যয়ের হ্রাস (চ) অবিরাম ও সতর্ক তদারকীর ফলে বাস্তব কার্যক্রমের দিক থেকে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উন্নয়ন সম্পদেদ অধিকতর উন্নত ব্যবহার (ছ) রাজস্ব প্রশাসনে ও কর আদায়ে সন্তোষজনক উন্নতি এবং (জ) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সামগ্রিক উৎপাদনে ঘাটতি সত্ত্বেও মূদ্রাস্ফীতির চাপ সংযত রাখা।
১৯৭৭-৭৮
১৯৭৭-৭৮ সালের বাজেটে জাতীয় উৎপাদন শতকরা ৭ ভাগ বৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হয়েছে। কৃষি খাতে শতকরা ৮ ভাগ শিল্প উৎপাদনে শতকরা ৭ ভাগ এবং অন্যান্য খাতে মিলিতভাবে শতকরা প্রায় ৯ ভাগ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
বাজেট
১৯৭৭-৭৮ সালের জন্য প্রাত ১১৫৬,৬১ কোটি টাকার রাজস্ব বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যদ রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০৬.৩১ কোটি টাকা। সুতরাং উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাড়াচ্ছে ২৫০.৩০ কোটি টাকা।
গত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় এ বছরের রাজস্ব আয় প্রায় ১৬০ কোটি টাকা বেশি করতে পারা নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রতিফলিত করেছে। প্রায় ১১৫৭ কোটি টাকার মধ্যে ৮৮৭ কোটি টাকা আসবে কর থেকে, বাকি ২৬৯ কোটি টাকা আসবে কর ব্যতীত অন্যান্য প্রাপ্তি থেকে। পূর্ববর্তী সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৭৫৩ ও ২৪৩ কোটি টাকা ১৯৭৭-৭৮ বছরের এই বৃদ্ধি সম্ভব হবে বাণিজ্য শুল্ক থেকে আয় বৃদ্ধি সহ প্রায় সকল কর আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে।
কর আয়ে বৃদ্ধি সম্ভব হবে উপযুক্ত কর-কাঠামো প্রবর্তন দ্বারা। বর্ধিত আয়ের সম্ভাবনা অমূলক নয়, সঠিক কর কাঠামো ও কর প্রশাসন প্রচলিত করতে পারলে আয় আরও বাড়তে পারে বলে আশা করা যায়। অবশ্য বাণিজ্য শুল্কের উপর নির্ভরশীলতাক কমাতে পারলে ভাল হতো। কেননা বাংলাদেশের বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যাদি আমদানিকৃত। শুল্ক অব্যাহত থাকায় এগুলির দাম প্রায় বেশি হয়ে যায় এবং তার প্রতিক্রিয়া পড়ে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীগুলোর উপর। আয়কর এবং আবগারী ও সম্পত্তি করের দিকে অধিকতর মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। যাতে প্রতিক্রিয়া কেবলমাত্র অভাবী শ্রেণীর উপর না পড়ে। ১৯৭৭-৭৮ সালে বাণিজ্য শুল্কই হবে কর রাজস্ব প্রাপ্তির বৃহত্তম উৎস। বৃহত্তর উন্নয়ন কর্মসূচী, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রায়ন, নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির সম্পূর্ণ প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে বৃহত্তর আমদানি কর্মসূচী এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ইপ্সিত স্থির সঙ্গে সংগতি রেখে অধিকতর আমদানির ভিত্তিতেই এই আয় ধরা হয়েছে। ১৯৭৬-৭৭ সালের সংশোধিত বরাদ্দের ২৮৯ কোটি টাকার তুলনায় বাণিজ্য শুল্ক খাত ৩৮৪ কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়। সংশোধিত বাজেট বরাদ্দের ২০৩ কোটি টাকার তুলনায় আগামী বৎসর আবগারী কর খাতে ১১০ কোটি টাকার তুলনায় আগামী বছরে ১২০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিক্রয় কর সংশোধিত বরাদ্দের একই স্তরে অর্থাৎ ১২৩ কোটি টাকায় থাকবে। কিছু বকেয়া আদায়ের কারণে বাজেট বরাদ্দের তুলনায় ১৯৭৬-৭৭ সালের সংশোধিত বাজেটে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সংযুক্ত ভূমি কর আদায়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অসুবিধা দূরীভুত হয়েছে ও পূর্ণ প্রশাসিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলে ১৯৭৭.৭৮ সালে এই খাতে প্রাপ্তি বৃদ্ধি পাবে। ১৯৭৬-৭৭ সালের সংশোধিত বাজেটে ১১ কোটি টাকার তুলনায় ১৯৭৭-৭৮ সালে ভূমি রাজস্ব খাতে ২২ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে ২৪৩ কোটি টাকার তুলনাউ ১৯৭৭-৭৮ সালে ভাজেট কর বহির্ভূত আয়ের পরিমাণ ২৬৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে অনুয়ন্নমূলক ব্যয় কমিয়ে উদ্বৃতত সৃষ্টির মাধ্যমে উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্যে ৯০৬ কোটি টাকা রাজস্ব ব্যয় ধার্য করা হয়। অবশ্য এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দশ শতাংশ বেশি। তা যুক্তিসংগত এ জন্যে যে আয় এবং উদ্বৃত্তের পরিমাণ উভয়ই পূর্ববর্তী বাজেটের চেয়ে বেশি। উন্নয়নকামী দেশসমূহে প্রশাসন এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় ধারাবাহিক বৃদ্ধি অনাকাঙ্খিত হলেও সহজাত। সেদিক থেকে পূর্ববর্তী বাজেট ছিল একই চরিত্রের। প্রতিবেশী দেশের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কৌশলের কারণে এবং রাষ্ট্রবিরোধী দেশের সীমান্ত এলাকায় অপচেষ্টার কারণে পূর্ববর্তী বাজেটে প্রতিরক্ষা এবং প্রশাসন উভয় খাতে ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হওয়ায় এবং আভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হওয়ায় বর্ধিত ব্যয়ভার আর যুক্তিসঙ্গত ছিল না। বাজেটে সঠিকভাবে এই নীতি প্রতিফলিত হয়েছে, উন্নয়নকামী দেশের জন্যে যারা সব থেকে সঠিক। প্রতিরক্ষা বাজেটে এবং আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও আধাসামরিক বাহিনীসমূহের ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাস ঘটিয়ে উদ্বৃত্ত অর্থ দেয়া হয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কার্যক্রমে।অনুন্নয়ন বাজেটে এই উভয় খাতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া সঠিক, শিক্ষা বাজেটে এগারো শতাংশ ও স্বাস্থ্য কার্যক্রমে আঠাশ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা ইত্যাদি ছাড়াও প্রশাসন, বৈদেশিক বিষয়াবলী ও অন্যান্য খাতসহ কয়েকটি ব্যয় আগের চেয়ে কম করা হয়েছে। যদিও আপাতঃদৃষ্টিতে সাধারণ প্রশাসন ব্যয় হ্রাস দেখানো হলেও তা সঠিক নয়। কেননা অপ্রত্যাশিত ব্যয় হিসাবে যে একশ’ কোটি টাকা রাখা হয়েছে তার ৬০ কোটি টাকা বিশেষভাবে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে সরকারী কর্মচারীদের জন্যে সুপারিশকৃত বর্ধিত বেতনের খরচ মেটানোর উদ্দেশ্যে। এই ষাট কোটি টাকা যোগ করলে সাধারণ প্রশাসন ব্যয় দাঁড়ায় একশ’ কোটি টাকার বেশি, যে বৃদ্ধি একশ’ শতাংশের মত।
১৯৭৬-৭৭ সালের আরও ন’শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সরকারী কর্মচারীদের প্রকৃত আয় আরো কম কমে যাওয়ায় ও অন্যান্য প্রশাসনিক উন্নয়নের জন্যে সরকার “বেতন ও চাকুরি-কমিশন” গঠন করেছিলেন। দীর্ঘকাল সরকারী কর্মচারীরা অধীর আগ্রহে এর ফল পেতে আগ্রহী। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্টের ঘোষণা নিঃসন্দেহে তাঁদেরকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি বলেন, “সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে বেতন বৃদ্ধি ১লা জুলাই, ১৯৭৭ থেকে কার্যকরী হবে। বেতন ও চাকুরি কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে গ্রহণযোগ্য সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা পরিষদ-সদস্যদের সমন্বয়ে ইতিমধ্যেই একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে।” এক দিকে এটি যেমন কর্মচারীদের উৎসাহ দেবে অন্যদিকে সুদক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে। “বিদ্যমান সংগঠনগুলো থেকে অতিরিক্ত জনশক্তি প্রত্যাহার করে সরেজমিনে প্রশাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে ওই জনশক্তি ক্রমান্বয়ে জেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়োগ করা প্রশাসনিক কাঠামো একটি পুনর্গঠনের একটি মুখ্য উদ্দেশ্য। “
আয়
আমদানি রফতানি শুল্ক ২৮৯ ৩৮৪
আবগারী ২০৩ ২২০
আয়কর, কর্পোরেশন কর, কৃষি কর ১১০ ১২০
বিক্রয় কর ১২৩ ১২৩
ভূমি রাজস্ব ১৭.৮৬ ৩০.০৪
অন্যান্য কর ১০ ১০
স্টাম্প, বন ও রেজিস্ট্রেশন ৩২ ৩২
রেলওয়ে ৫৫ ৫৮
পোষ্ট অফিস (—)৬ (—)৫
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প ১ ১০
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক ২৫ ২৩
টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, সুদ, অন্যান্য ১৩৭ ১৫২
মোট ৯৯৬.০৯ ১১৫৬.৬১
ব্যয়
রেলওয়ে ৫৭ ৫৯
সুদ ৬৯ ৭৪
সাধারণ প্রশাসন ৫১ ৪৩
পুলিশ, রাইফেল, আনসার ৮৭ ৭৩
শিক্ষা ১০২.১০ ১১৩.৮১
স্বাস্থ্য ২৯.৩৬ ৩৭.৬৮
প্রতিরক্ষা ১০৭.২২ ১৬২.৪১
অপ্রত্যাশিত ব্যয় …. ….
অন্যান্য …. ….
মোট ৮২১.৫৫ ৯০৬.৩১
উন্নয়ন বাজেট
রাজস্ব বাজেটের পর ডঃ এম এন হুদা ঘোষণা করেন উন্নয়ন বাজেট। ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১১৫০ কোটি টাকা, আরও ৪০ কোটি টাকা কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর অধীনে, ফলে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১১৯০ কোটি টাকা। এই ব্যয় পরিকল্পনার জন্যে অর্থ সংস্থান করা হবে আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত থেকে। আভ্যন্তরীণ সম্পদ মোট ব্যয়ের মাত্র পঁচিশ শতাংশ অর্থায়ন করবে, বাকি ৭৫ শতাংশ বৈদেশিক আসবে সাহায্য থেকে। বিদেশের উপর এই বিরাট নির্ভরশীলতার কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়, যদিও ভিন্নতর উপায় নেই। নির্ভরশীলতার ফলে আশানুরূপ বৈদেশিক সাহায্য না এলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং অনেক সময় ঘাটতি অর্থ সংস্থানের উপর নির্ভর করে উন্নয়নকে চালিয়ে নিতে হয়। এতে মুদ্রাস্ফীতির ভয় থাকে। এ বাজেটে অবশ্য গত বারের মত ঘোষণা করা হয়েছে নিতান্ত বাধ্য না হলে সরকার ঘাটতি অর্থসংস্থানের আশ্রয় নেবেন না। সমাপ্ত প্রায় বছরে অবস্থা ঘাটতি অর্থসংস্থানের প্রয়োজন হয়নি, অথবা যেটুকু হয়েছে বছর শেষে তা শূন্য করে নেয়া হবে, কিন্তু বৈদেশিক সাহায্য যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। যেখানে নয়শ’ ষোল কোটি টাকার বৈদেশিক সাহায্য আশা করা গিয়েছিল সেখানে ৮১৭ কোটি টাকা পাওয়া যায়। এ বছর সেক্ষেত্রে ৮৯৬ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্য আশা করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৩৪০ কোটি টাকা আসবে প্রকল্প সাহায্য থেকে, অপ্রকল্প সাহায্য হবে ৪২৫ কোটি টাকার, খাদ্য বাজেটের উদ্বৃত্ত থেকে ৯১ কোটি টাকা ও ৪০ কোটি টাকা কাজের বিনিময় খাদ্যের জন্যে রক্ষিত টাকা থেকে আসবে। দেশী সম্পদ থেকে আসবে বাক্যের অর্থ। যার ২২৫ কোটি টাকা অনুন্নয়ন বাজেটের উদ্বৃত্ত। ২৪ কোটি টাকা স্বায়ত্তশাসিত কর্পোরেশনগুলর ডিবেঞ্চার থেকে। এতে মোট দাঁড়াচ্ছে ১১৩৪ কোটি টাকা। সুতরাং ১৬ কোটি টাকা ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে যা আসবে কর-কাঠামো বিন্যাস থেকে, যা পরে আলোচনা করা হচ্ছে। ডিবেঞ্চার সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা উচিত। এ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বলেছেন,
উন্নয়ন বাজেট
(কোটি টাকায়)
১৯৭৬-৭৭ ১৯৭৭-৭৮
সংশোধিত বাজেট বাজেট
খাত
উন্নয়ন ব্যয়
ক) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ১০০৫.৭১
যার মধ্যেঃ
কৃষি ১৫১
বন্যনিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ ১৩৫
গ্রামীণ উন্নয়ন ৪৮
শিল্প ১৪৮
বিদ্যুৎ ১২৫
পরিবহণ ১৮১
গৃহনির্মাণ ও প্রাকৃতিক পরিকল্পনা ৯৩
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ৫৬
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ৬৭
অবশিষ্ট অন্যান্য
খ) কাজের বিনিময় খাদ্য ৩০.৩৩ ৪০.০৫
মোট ১০৩৬.০৪ ১১৯০.৭০
অর্থসংস্থান
রাজস্ব উদ্বৃত্ত ১৭৪.৫৪ ২৫০.৩০
খাদ্য খাতে উদ্বৃত্ত ৯.৯৩ ৪.৩৭
নতুন কর ব্যবস্থা ১৬.০৮
ডিবেঞ্চার ২৪.৪০
বৈদেশিক সাহায্য ৮১৬.৮১ ৮৯৫.৭৫
মোট ১০৩৬.০৪ ১১৯০.৭০
” যে সমস্ত প্রকল্প অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বাণিজ্যিক শর্তে ঋণ গ্রহণ করতে পারে বলে বিবেচিত হয়েছে কেবল ঐ সমস্ত প্রকল্পের জন্যেই ডিবেঞ্চার ইস্যু করা হবে। এই উদ্দেশ্যে ১৯৭৭-৭৮ সালে সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ হতে মোট ২৪ কোটি টাকা ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে।” অর্থাৎ সংগ্রহটা শেষপর্যন্ত ব্যাংকের মাধ্যমে হবে।
এটি এক ধরনের ভিন্ন ঘাটতি অর্থ সংস্থান পদ্ধতি বললে খুব একটা ব্যবহারিক ভুল হবে না যদিও তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে তা সঠিক নয়। এই ভিন্ন ধর্মী ঘাটতি অর্থ সংস্থান ছাড়াও ১৬ কোটি টাকার ব্যবধান রয়েছে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে, যা সংস্থান করা হবে কর কাঠামোর পরিবর্তনের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে বাজেট প্রণেতাদের শুভবুদ্ধির প্রশংসা না করে পারা যায় না। গতানুগতিক ধারণা অনুসারে হয় কর বৃদ্ধি নতুবা ঘাটতি অর্থ সংস্থান দ্বারাই আয়-ব্যয়ের প্রতিকূল পার্থক্য দূর করা যায়।
কিন্তু গতানুগতিকতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রেসিডেন্ট জিয়ার সরকার ভিন্নতর কিছু করার চেষ্টা করেছেন। কর তদন্ত কমিশন সৃষ্টি এবং তাদের প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন সুপারিশ গ্রহণ—উভয়ের মাধ্যমে এটি সম্ভব হয়েছে। এখানে বিচিত্রা পাঠকদের জন্য উল্লেখ করা যায় যে, বাজেটে অনুসৃত কর-কমোতে যে কয়টি পরিবর্তন করা হয়েছে তার কয়েকটি বিচিত্রার অর্থনীতির পাতার মাধ্যমে আগেই কর-কমিশনের কাছে প্রস্তুত করা হয়েছিল। শুধু কর-কাঠামোই পুনর্বিন্যাস করা হয়নি কর হারেরও পরিবর্তন ঘটেছে যেগুলো সম্পর্কে আলোচনা প্রয়োজন।
কর-কাঠামো
কর-কাঠামোর পরিবর্তন ছাড়াও বেশ কিছু দ্রব্যের উপর কর… (অস্পষ্ট) এবং মওকুফ বৃদ্ধি উভয়ই হয়েছে। ওয়েজ আর্নার স্কীমের আওতায় শিল্পের জন্যে আমদানিকৃত কাঁচামালের উপর দু’ধরনের রেয়াতিহার প্রচলিত আছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা কার্যকর হারের পঞ্চাশ শতাংশ এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানির উপর পঁচাত্তর শতাংশ মওকুফ রয়েছে। বছরে এই খাতে প্রায় বারো/তেরো কোটি টাকার আমদানি হয়। এই মওকুফ হার কমিয়ে গড়ে পঞ্চাশ শতাংশ মওকুফ ধরলে একদিকে সরকারি আয় বাড়ে অন্যদিকে ওয়েজ আর্নার স্কীমের খরচ বেশি হয় না। এবং এতে বিভিন্নরকম অন্যায় প্রতিরোধ করা যায়। সরকার তাই এ জাতীয় আমদানির উপর রেয়াতহার সমান করে পঞ্চাশ শতাংশ করেছেন। এ পদক্ষেপের ফলে বাণিজ্য শুল্ক ও বিক্রয় কর বাবদ এক কোটি পঁচিশ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আশা করা যায়।
কাঁচ শিল্পের দুটি কাঁচামালের জন্যে অত্যধিক শুল্ক হার প্রচলিত রয়েছে। ডেলোমাইট ও ব্যারামাইটের উপর শতকরা ১১৫ ভাগ শুল্ক দিতে হয়, অথচ অন্যান্য কাঁচামালের শুল্ক ৫০ শতাংশ। সরকার তাই উক্ত দুই কাঁচামালের উপর শুল্ক কমে ৫০ শতাংশ করেন। পুরাতন কাপড়চোপড়ের উপর শুল্ক হার বাড়িয়ে শতকরা ৭৫ ভাগ ধার্য করা হয়েছে। অথচ আগে ৪০ শতাংশ হারে রেয়াত শুল্ক এবং বিক্রয় কর সম্পূর্ণ মওকুফ করা ছিল। ফলে বাজারে পুরাতন কাপড় অত্যাধিক সস্তা হওয়ায় নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর জন্যে বেশ সুবিধা হয়েছিল। জামাকাপড় এমনকি গরম বস্ত্র এদের অনেকেই কিনতে পারেন। এ অবস্থায় এখন শুল্কহার বাড়িয়ে দেওয়াতে দেশীয় কাপড় শিল্প-পুঁজিপতিরা নিশ্চয় উপকৃত হবেন এবং শিল্প উন্নত হবে, কিন্তু নিম্নবিত্ত শ্রেণী আগামী বছর বস্ত্রের অসুবিধায় পড়বে। এখানে উল্লেখ্য যে শুধুমাত্র পুরাতন পশমী কাপড়চোপড়ের উপর এই রেয়াতি হার অবশ্যই বজায় থাকবে। যেহেতু তেরো/চৌদ্দ কোটি টাকার এই জাতীয় দ্রব্যাদি ওয়েজ আর্নার স্কীমে থাকে সেহেতু শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
একদিকে নিত্যব্যবহার্য অত্যন্ত জরুরী দ্রব্য পুরাতন কাপড়ের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয় অন্য দিকে বিলাস দ্রব্য মটর গাড়ির (১৩০০ সি সি পর্যন্ত) উপর ৬০ ভাগ হারে রেয়াত শুল্ক হার দেওয়া হয়েছিল তাতে কমিয়ে ৪০ ভাগ করা হয়েছে। এবং ১০০০ সি সি পর্যন্ত গাড়ির বেলায় শতকরা ৫০ ভাগ থেকে ২৫ ভাগ করা হয়েছে। তদুপরি সম্পূর্ণ বিযুক্ত অবস্থায় আমদানির বেলায় দেশী শিল্পকে শতকতা ১০ ভাগ অতিরিক্ত শুল্ক-রেয়াত দেওয়া হবে। অতএব শহর অঞ্চলীয় কারখানা শিল্পগুলো কিছুটা সুবিধা পাবেন, অন্যদিকে গ্রামভিত্তিক মৎস্য শিল্পের ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা দেখা দেবে। মৎস্য শিল্পের সাহায্যার্থে যে সকল দ্রব্যের উপর আমদানি শুল্ক ও বিক্রয় কর সম্পূর্ণ মওকুফ ছিল সে স্কল দ্রব্যের বিকল্প ব্যবহার থাকায় এই শুল্ক অব্যাহতির ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে বলে জানা যায়। সুতরাং একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষীদের জন্যে মৎস্যজীবি সম্প্রদায় এর সুবিধা পাচ্ছেন না। এবার সরকার এ সুবিধা তুলে দিয়েছেন। এ যুক্তিতে সুবিধা তুলে দেওয়াটা সম্পূর্ণ ঠিক ছিল না বরং মৎস্যজীবীদের কিভাবে সাহায্য করা যায় এবং কিভাবে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের হাত থেকে রেহাই দেওয়া যায় সেটাই গ্রামভিত্তিক বাজেটের উদ্দেশ্য হলে আরও ভালো হত। মটর যুক্তকরণ ব্যবসাও কিছুটা লাভজনক তো বটে, তাদের ক্ষেত্রে যেহেতু আংশিক রেয়াত যুক্তিসঙ্গত সেহেতু মৎস্য ব্যবসাযয়ী রেয়াত সম্পূর্ণ তুলে না নিয়ে আংশিক রেয়াত দিলে মৎস্যজীবীদের জন্যে কিছুটা যুক্তিসঙ্গত হতো।
তামার তারের উপর উচ্চ শুল্কহারকে কমিয়ে ১১৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে যদিও সরকারী আয় কমে যাবে ১ কোটি বারো লক্ষ টাকা তবুও তা দেশীয় কয়েকটি শিল্পকে যথেষ্ট উপকৃত করবে। এই শিল্পগুলোর মধ্যে আচগে বৈদ্যুতিক দ্রব্য ও সরঞ্জাম, চালুনি, তারের জাল ইত্যাদি যার অনেকগুলোই হস্ত ও কুটির শিল।
জ্যামিতি বাক্স, বায়োলজী বাক্স, স্লাইড রুল ইত্যাদি যন্ত্রপাতির উওঅঅর আরোপনীয় শুল্কের হার ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে.. (অস্পষ্ট) শতাংশ করা হয়েছে।
অত্যাবশ্যক পরিবহণ যানবাহনের উপর শুল্কহার গত বছরই কমানো এবং পুনর্বিন্যাস করা হয়। এ বছর তার আরও কিছু যুক্তিসঙ্গত প্রসারণ করা হয়েছে। পিকআপ, ওয়ার্কস ট্রাক, স্বয়নগ-বোঝাইকারী ট্রাক, ট্রাক চৌসস, স্টেশন ওয়াগন সহ বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত যানবাহনের শুল্কহার কমানো হয়। ফলে সরকারী আয়ে প্রাত ১ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্যাপিটাল মেশিনারী প্রজ্ঞাপনটির আরো সংশোধন করা হবে। ওয়েট ব্লু’ চামড়ার উপর কোন শুল্ক ও বিক্রয় কর নেই, তদুপরি রফতানিকারকরা যথেষ্ট রিবেটও পেয়ে থাকেন। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ওয়েট ব্লু চামড়ার চাহিদা বেড়েছে। এ অবস্থায় শতকরা ১৫ ভাগ রফতানি-শুল্ক আরোপ করা হলে বর্তমানে মধ্য মুনাফাভোগীদের লাভের অংশ বিশেষ উঠে আসবে। তার থেকে আরও সুবিধা হবে এই যে এ পদক্ষেপ পাকা চামড়া রফতানির জন্যে উৎসাহ যোগাবে ও দেশের জন্যে বেশি আয়ের সহায়ক হবে। চামড়ার উপর অন্যান্য শুল্ক ব্যবস্থা চালু করায় রফতানি রিবেট বাবদ দু’কোটি টাকা বেঁচে যাবে এবং চার কোটি টাকাত রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
সুপারীর উপর কিছু শুল্কব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুপারী আমদানিতে মণ প্রতি ব্যয় হয় পঁচিশ বিশ টাকা অথচ খোলাবাজারে বিক্রি হয় আটাশ টাকা দরে। ফলে প্রায় তিনশ’ টাকা বা চল্লিশ শতাংশ মুনাফা অর্জন করে ব্যবসায়ীরা। সুপারির উপর শুল্কের হার প্রতি পাউন্ড ৩ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫-০০ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে বাজারে সুপারির মূল্য প্রায় দেড় টাকা বেড়ে যাবে।
ফলে দেশীয় সুপারী উৎপাদন উৎসাহিত হবে ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচের প্রয়োজন হবে না। সুপারি ছাড়াও সাগুবীজ, সাগুময়দা, সাগুমাড়ের উপর যথাক্রমে ৩০, ৪০ এবং ৫০ শতাংশের বিভিন্ন শুল্কহারকে একীভূত করে ৪০ শতাংশের সমন্বিত শুলখার ধার্য করা হয়েছে। কৃত্রিম নিটিং বস্ত্রের কার্যকর শুল্কহার কমিয়ে সম্পূর্ণ কৃত্রিম উভেন বস্ত্রের সাথে সমতা বিধান করা হয়েছে। এ সবের ফলে আরও এক কোটি টাকা রাজস্ব আয় বাড়বে বলে আশা করা যায়।
আবগারী রাজস্বের বেলায় কিছু পরিবর্তন করা হয়। সিগারেট থেকে এসে থাকে মোট আবগারী আয়ের অর্ধেকের বেশি। কিন্তু কিছুকালযাবত নিম্নমূল্যের ব্যান্ডগুলোর উৎপাদন কমে যাচ্ছে হাতে বানানো বিড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে না ওঠায়। বিড়ির জন্যে কোন আবগারী শুল্ক ধরা হয় না। অপর পক্ষে সিগারেটের উপর নিম্নতম আবগারী শুল্কের হার প্রতিহাজার কাঠিতে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। সিগারেটের কাগজে বিড়ি তৈরি করে উন্নত তামাক দিয়ে সুগন্ধি ব্যবহার করে বিড়ির গুণগত মান ও চাহিদা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। তাই হস্তশিল্পের সঙ্গে কারখানাগুলো পেরে না ওঠায় কারখানাগুলোকে সাহায্য করার অন্যতম উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিহাজার বিড়ির উপর ৫ টাকা হারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। মনে করা যুক্তিসঙ্গত যে এই পরিমাণ শুল্কহার বিড়ি প্রস্তুতকারীরা বহন করতে সক্ষম। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, এতে হস্তশিল্পীরা যে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবেন তাতে কি তারা কারখানাওয়ালাদের সামনে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবেন? না পারলে হস্তশিল্পের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া অযৌক্তিক বলে প্রমাণিত হবে। স্বল্প মেয়াদে তেমন অসুবিধা না হলেও দীর্ঘমেয়াদে বেকারত্ব সম্ভাবনা একেবারে অবাস্তব নয়। এ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায়…. (অস্পষ্ট) রাজস্ব ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বাড়বে বলে আশা করা যাত।
আয়করের মধ্যে কোম্পানী কর প্রগ্রেসিভ করা হয়েছে।…. (অস্পষ্ট) বিকল্প স্কীম বিনিয়োগকে….(অস্পষ্ট) অঅপেক্ষাকৃত উন্নত অঞ্চলের জন্যে বর্তমানে চলিত ট্যাক্স হলিডের…. (অস্পষ্ট) ৭ থেকে বাড়িয়ে ৯ বছর করা হয়েছে।
সঞ্চয় উৎসাহের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সাম্য মোট আয়ের শতকরা ৩০ ভাগ অথবা ২০ হাজার টাকা, দু’এর মধ্যদ যেটি কন তাতে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোন কর্মচারীর বাড়িভাড়া এলাউন্স-এর উপর অব্যাহতি বর্তমান মূল্যস্তরের প্রেক্ষিতে কম বলে মনে করাত সরকার অব্যাহতি সীমা ১২০০ টাকা অথবা বেতনের শতকরা ৩০ ভাগ, যেটি কম তাতে ধার্য করেছেন। এটি কর্মচারীদের জন্যে যথেষ্ট আশাবাদ সৃষ্টি করবে।
নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সরকারি বসতবাড়ির আয়ের উপর কর আরোপের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি দেখিয়েছেন।
পুঁজি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ডিভিডেন্ড আয়ের উপর কর রেয়াত পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এরূপ আয় এখন কর-অব্যাহতি পাবে।
সম্পদ ও সম্পত্তি শুল্কেও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সঠিক পরিবর্তন করা হয়।
কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয়ে পরিবর্তন করা হয় পোস্টেজে। দীর্ঘ দিন যাবত খাম ও পোষ্টকার্ডের ক্রমহারের মূল্যবৃদ্ধি ঘটান হচ্ছে। এবং ক্রমেই পোষ্টাল বিভাগের লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এবারেও খামপোষ্টকার্ডের দাম বাড়ান হয়। কিন্তু দুঃখের ব্যাপারে এই যে এদেশে চিঠিপত্র লেনদেন দামের উপর যথেষ্ট স্থিতিস্থাপক। তাই দাম বাড়লে এদেশী লোকরা চিঠিপত্র সংকোচনের পক্ষপাতি। ফলে স্বভাবতঃই আয় কমে যেতে বাধ্য। এই স্থিতিস্থাপকতা বিশ্লেষণ না করেই দাম ক্রমিক বৃদ্ধির ফলে লোকসান কমাবার সরকারী আশাবাদ সার্থক হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। খামের দাম ৩০ পয়সা থেকে এ বছর ৪০ পয়সা করা হয়েছে পোষ্টকার্ড ২০ থেকে ২৫ পয়সা বিজিনেস রিপ্লাই খাম ৩০ থেকে ৫০ পয়সা, রিপ্লাই কার্ড ২০ থেকে পঁচিশ পয়সা বুক প্যাকেট প্রথম ৫ তোলার জন্যে ১৫ পয়সা থেকে ২৫ পয়সা থেকে ২৫ পয়সা আভ্যন্তরীণ এরোগ্রাম ৩০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা করা হয়েছে। এই বৃদ্ধির ফলে প্রায় ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব পাওয়স যাবে বলে সরকারী আশাবাদ বর্ণিত হয়েছে।
কর-কাঠামোর উল্লেখিত পুনর্বিন্যাসের ফলে ১৯৭৭-৭৮ সালের সামগ্রিক বাজেটে উন্নয়নমূলক ব্যয়ের অর্থ সংস্থানে যে ১ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল তা পূরণ হয়ে ২০ লক্ষ টাকার মত সামান্য উদ্বৃত্ত থাকাবে।
কর-কাঠামোর বেলায় কিছু কিছু দ্বিমত থাকলেও একথা সবাই মেনে নেবেন যে কেবলমাত্র পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর কৌশলে নিঃসন্দেহে দেশের জন্যে উপকারী। তাছাড়াও এ বাজেট দীর্ঘমেয়াদে শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দেবে। বেসরকারী খাতকে উৎসাহী করার অনুপ্রেরণা এতে রয়েছে।
সর্বশেষ উন্নয়নকামী অর্থনীতির সীমিত সম্পদের প্রেক্ষিতে এটুকু বলা যায় যে ১৯৭৭-৭৮ সালের বাজেট জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বেতন কমিশনের আশাবাদ সহ মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং খাদ্য পরিস্থিতি সংযত রাখার সরকারী দৃঢ়তআর মনোভাব জনগণ তাদের কাজে কর্মে আরো উৎসাহী হবেন বলে আশা করা যায়। এ জন্যে প্রেসিডেন্ট কিছুটা সংযমী হবার জন্যে সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করে ১৯৭৭-৭৮ সালকে “কঠোর পরিশ্রমের বছর” হিসাবে।…(অস্পষ্ট) অর্থনীতি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্যে প্রকৃতিই যেমন প্রধান দায়ী তেমনি ১৯৭৬-৭৭ সালের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার সার্থকতা নির্ভর করে তার উপরে। কেননা জিডিপির… (অস্পষ্ট) শতাংশই আসে কৃষি থেকে তবুও সদিচ্ছা, প্রচেষ্টা এবং সৎ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। অতএব ১৯৭৭-৭৮ হোক সকল জনগণের জন্যে একটি চ্যালেঞ্জের বছর।
[pdf-embedder url=”https://songramernotebook.com/wp-content/uploads/securepdfs/2021/04/1977.07.01-bichitra.pdf” title=”1977.07.01 bichitra”]