শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ফরাসী প্রতিনিধি মিঃ কোশেস্কো মরিজ এর বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
ফ্রান্সের প্রতিনিধি জনাব কসিউস্কো মরিজেটের বিবৃতি
এখন আমরা দুমুখী দায়িত্ব অর্পন করছি যা সকলভাবে শান্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য হিসেবে অবদান রাখা যা আমাদের দিকে বন্ধুত্বের দ্বারা নির্দেশিত যা আমাদের যুক্ত করে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে, আমরা এই দুইদেশের প্রতি ও তাদের জনগনের প্রতি শ্রদ্ধা অনুভব করি এবং আমাদের আকাঙ্খা তাদেরকে শান্তির জন্য আরো ত্যাগ করতে দেখা।
কোন শক্তি একা এই অসংখ্যা সমস্যা সমাধান করতে পারবে না যা বিভিন্ন অঞ্চলের এই জাতিগত ও রাজনৈতিক ভৌগোলিক অবস্থা আরো জটিল করেছে। কিন্তু যখন যুদ্ধ থাকে তখন দুঃখদায়কভাবে এটি থাকে, এটি পুরোপুরি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করে এবং কিছুটা নিরাপত্তা কাউন্সিল ও এর সদস্যদের উপর, যাদের উপর সনন্দ বিশেষ দায়িত্ব অর্পন করে, একত্রিত হয়ে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তারা পারে যুদ্ধ শেষ করতে এবং দুই পক্ষের মধ্যে একটি বোঝাপড়ার ভিত্তি তৈরী করতে।
বর্তমান অবস্থার দুইটি দিক আছেঃ একটি হচ্ছে সমস্যার উৎপত্তি এবং যা রাজনৈতিকধর্মী। এটি ইসলামাবাদ সরকার ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে। এটি রাজনৈতিক সমাধানের বিষয় যা দুই পক্ষের গ্রহনযোগ্যতার ক্ষেত্রেই সংবেদনশীল। দ্বিতীয় দিকটি প্রথম দিক হতে উদ্ভূত,শরনার্থীদের ভারতে গমনের কারনে। এ ঘটনা দেশটি ও পাকিস্তানের সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে। এটি এমন উত্তেজনা তৈরী করে যে তা অনেক হিংস্রতার পর উন্মুক্ত বিদ্রোহে পরিনত হয়। একটি বেসামরিক যুদ্ধ দুইটি দেশের যুদ্ধে পরিনত হয়।
এই সমস্যার দুইটি দিক এক উভয়সঙ্কটের তৈরী করে। আমরা যদি এই সমস্যার শুধুমাত্র প্রথম দিক বিবেচনা করি তাহলে আমাদের যেকোন পদক্ষেপ অভ্যন্তরীন বিষয়াবলীতে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, এবং আমরা এর প্রশংসা করি যে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ন্যায়পরায়নতার সাথে যুক্ত। কিন্তু আমাদের যদি কেবল দ্বিতীয় দিকটি বিবেচনা করতে হত আমাদের পদক্ষেপগুলোকে গোড়া থেকে পর্যবেক্ষন না করেই একপার্শ্বিক বিবেচনা করা হত, আমরা এর প্রশংসা করি যে ভারত অগভীর সমাধানেই সন্তষ্ট হবে না যখন তার তত্ত্বাবধানে লাখো শরনার্থী আছে।
এই উভয়সংকট যা জাতিসংঘের সম্মুখীন হওয়ার অসুবিধা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে। সাধারন সচিবের সতর্কবার্তা এবং নিরাপত্তা কাউন্সিলের সংকোচের কারনে তিন মাস প্রশ্নাতীত ভাবে বাজেয়াপ্ত হয়। কিন্তু আমাদের মনে হয় আমাদের জন্য এই উভয় সংকটে থাকা অনুমোদনযোগ্য নয়। আমরা মনে করি এই সমস্যার বিরুদ্ধে বিশ্বকে এগিয়ে আসতে যেখানে সকল পক্ষকে অবদান রাখতে হবে। তারা যদি আত্মিকভাবে এগিয়ে আসে তাহলে এই সমস্যার সমাধান অবশ্যই পাওয়া যাবে।
আমার সরকার সংকটের শুরু থেকে এবং গত কয়েকদিন ধরে তীব্র প্রচেষ্টা করছে উভয় পক্ষের সাথে যারা কাজ করছে তাদের আশ্বস্থ করতে এবং একটি রক্তাক্ত দ্বন্দ্ব এড়াতে, যা ইতিমধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং গুরুতরভাবে বিধ্বস্ত জনসংখ্যার ওপর শুধুমাত্র একটি অতিরিক্ত বোঝা যোগ করতে পারে। প্রয়োজনীয় বিচক্ষণতার সাথে আমরা একটি নিতান্ত রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির ভিত্তি স্থাপন জন্য করার পরামর্শ করেছি এবং যা উদ্বিগ্ন জনগোষ্ঠীর সম্মতির উপর ভিত্তি করে করা উচিত। অন্য দেশসমুহ যারা আমাদের উদ্বেগ ভাগ করে নিচ্ছে, একটি বিপর্যয়কারী ঘটনা এড়াতে তারাও একই ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ভাষ্যমতে, ” যুদ্ধের নামে লাখ লাখ মানুষকে গ্রহণ করায় সর্বাত্মক অবিচার হবে বলে মনে হচ্ছে যারা অনেক আকস্মিক বিপর্য্যয় শিকার হবে ” এবং আমরা তা প্রতিরোধের প্রচেষ্টায় যোগদানে প্রস্তুত।
এখন পর্যন্ত যখন এই দ্বিপাক্ষিক প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত সুফল বয়ে আনেনি, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব আমাদের বন্ধু এই দুটি শক্তির প্রতি আপীল জারি করা, যাতে করে অস্ত্র থেমে যাবে, দুস্থদের প্রতিকার একটি আইনের আওতায় আনা হবে তাতে করে জনগণের অপরিসীম দুর্ভোগ শেষ করার জন্য UNEPRO র সাহসী পদক্ষেপগুলোও অব্যাহত থাকবে । সুতরাং আমাদের সাম্প্রদায়িক সংহতি নিশ্চিত করতে এবং সংগঠিত করতে প্রথমতঁ যুদ্ধ শেষ করতে হবে, কিন্তু অবশ্যই অধিকাংশ মানুষের তাৎক্ষণিক কষ্ট লাঘবের জন্য সংকটের কারণসমূহ সঙ্গে সঙ্গে মোকাবেলা করতে দলের সম্মতিক্রমে আপসের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। কারণ শুধুমাত্র একটি উদার এবং শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি প্রত্যাশিত জনগোষ্ঠীকে সাড়া দিতে পারে যা সর্বশেষ ঘটনাসমূহ আরও বেশি জরুরী করে তুলেছে এবং যা হবে সমস্যার প্রসার ও বৈচিত্র্যের সঙ্গে তুলনীয় একটি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া।
আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি যে শান্তি অত্যাবশ্যক, বিপথগমন নিরূত্তর করা প্রয়োজন, আর আমাদের নিজেদেরকেই একটি মহৎ প্রচেষ্টা করতে হবে, কারণ বিভাজন শুধুমাত্র দ্বন্দ্বকে চিরস্থায়ী করতেই পারে।
এই সব কারণে, আমরা আশা করি যে একটি বাস্তবসম্মত খসড়া পরিষদে দাখিল করা হবে যা কাউন্সিলে সর্বসম্মতক্রমে সমর্থন গ্রহণ করতে সক্ষম হতে হবে। এই উদ্দীপনায় আমরা একটি সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবো। মনের মধ্যে বিবেচনারধীন রেখে যে, আমরা খসড়া রেজুলেশন জমা দেওয়া দেয়ার কার্যধারায় নিজেদেরকে ঘোষণা করবো।