রংপুরে মুক্তিবাহিনীর প্রশংসনীয় তৎপরতা
(নিজস্ব সংবাদদাতা) গত ২৭শে অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধাগণ ভুরুংগামারী এলাকায় পাক সেনাদের উপর অতর্কিত হামলায় দুইটি জীপ ভর্তি ২০ জন সৈন্যের একটি দলকে ধ্বংস করে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মুক্তিবাহিনীর মেজর স্বয়ং এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ভুরুংগামারীর নিকটবর্তী আন্ধারীঝাড় এলাকায় পাক সৈন্যদের চলাচলের রাস্তায় মাইন পুঁতিয়া রাখিয়া মুক্তিবাহিনীর বীর যােদ্ধারা অদূরে লুকাইয়া থাকে। দুইটি জীপ ভর্তি ২০ জন পাক সেনার একটি দল রেশন, পেট্রোল ইত্যাদি সহ ঐ রাস্তা দিয়া যাওয়ার সময় মুক্তিবাহিনীর মাইন বিস্ফোরণে দুইটি জীপই ছিটকাইয়া পড়ে। মুক্তিবাহিনী এই সুযােগে গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং পাক সেনাদের সকলকেই হত্যা করে। পাঁচ জন শত্রুসেনার লাশ ও একজনকে আহত অবস্থায় বন্দী করিয়া আনা হয়। ইহাদের। সহিত বহু স্বয়ংক্রিয় চীনা অস্ত্রশস্ত্রও মুক্তি বাহিনীর হস্তগত হয়।
স্থানীয় জনসাধারণও মুক্তি বাহিনীকে প্রভূত সহায়তা করেন এবং শত্রুসেনাদের লাশ মুক্তি বাহিনীর। ঘাটিতে নিয়া যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেন। জনসাধারণ নিজেরাই টেলিফোনের লাইন কাটিয়া শত্রুর যােগাযােগ ব্যবস্থা বিকল করিয়া দেন। মুক্তিবাহিনীর এই মেজরের নেতৃত্বে মুক্তিফৌজ উক্ত এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে নাস্ত নািবুদ করিয়া চলিয়াছে। গত ২১শে অক্টোবর হাতিবান্ধা থানার দই খাওয়া চামটা অঞ্চলে দুই দিনব্যাপী এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মুক্তিযােদ্ধারা ৪ জন পাক সৈন্যকে খতম করিয়া উক্ত এলাকাকে শত্রুমুক্ত করেন। এই সংঘর্ষে একজন গ্রামবাসী ও মুক্তি যােদ্ধা খয়বর হােসেন শহীদের মৃত্যু বরণ করেন। বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা যায়, গত ১৭ই অক্টোবর লালমণির হাট শহরের নিকটবর্তী রত্নাই নদীর উপর সাউরীখানা ঘাটে রাজাকার বাহিনীর উপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা আক্রমণ চালাইলে ৪ জন রাজাকার নিহত ও অপর ২ জন আহত হয়। পরবর্তী কালে পাক ফৌজের একটি দল ঘটনা স্থলে উপস্থিত হইয়া নিরীহ জনসাধারণের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করিতে থাকে। এই সময় মুক্তি বাহিনী পাল্টা আক্রমণ চালাইলে পাকফৌজ পালাইয়া যায়। ২৩শে অক্টোবর নাগেশ্বরী থানার গাগলা হইতে এক মাইল পশ্চিমে “ইটা পাইকর’ নামক স্থানে। একটি পুলের উপর পাহারারত রাজাকার বাহিনীর একটি দলকে আক্রমণ করিয়া মুক্তি বাহিনী ২ জন রাজাকারকে নিহত ও অপর দুই জনকে আহত করেন। একই দিনে লালমণিরহাটের মহেন্দ্রনগর রেল স্টেশনের নিকটবর্তী গােয়ালের ঝাড় নামক স্থানে একটি ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ চালাইয়া মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ৮ জন রাজাকার ও ২ জন পাক ফৌজকে হত্যা ও ৫ জন রাজাকারকে আহত করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ; ১:১৮
৭ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র: গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ -খন্ড ০৯