শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারদার শরণ সিংহর বিবৃতির অংশবিশেষ | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিংহের বিবৃতির অংশবিশেষ
সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৭১
ভারতের জন্য ১৯৭১ এর শুরুটা ছিল অনেক সম্ভবনাময় । অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল কিছুর ইঙ্গিত করছিলো । মার্চের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী বিশাল জন সমর্থন নিয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোন যা সমন্বিত সামাজিক-অর্থনৈতিক বিকাশের পক্ষে জনগণের আস্থার প্রতিফলন । বৈদেশিক ভাবে আমরা সচেষ্ট ছিলাম সকল দেশের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপনের , বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে । ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা ভারত স্বাগত জানায় । আমরা আশা করেছিলাম গণতান্ত্রিক সূচনার মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হবে । যদিও সমগ্র ব্যাপারটি রাতারাতি পরিবর্তিত হয় যখন পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ আকস্মিক ধ্বংসাত্মক দিকে মোর নেয় । একটি আন্তর্জাতিক সমস্যার উদ্ভব ঘটে যা বিশেষ তাৎপর্য পূর্ণ । বেশ কিছু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমস্যাটির প্রকৃত রূপটি অনুধাবন করতে পেরেছে । মহাসচিব ইউ টেন্ট সমস্যাটি নিরাপত্তা পরিষদের সামনে উল্লেখ করেন এবং বাৎসরিক রিপোর্টে এই ব্যাপারে তার মতামতও দেন ।
সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ বিদায়ী রাষ্ট্রদূত হেম্ব্র তার ভাষণে এসেম্বলিকে তার আশঙ্কার কথা জানান ।
এপ্রিলের মাঝামাঝি এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সামরিক শক্তি প্রয়োগ থেকে পাকিস্তান সরে আসবে না এবং পাকিস্তান হতে আসা অগনিত শরণার্থী সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে ভারতকে । শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে শরণার্থী শিবির এবং শরণার্থীদের বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হয় । রেশন কার্ড এবং ভারতে বসবাসের জন্য অস্থায়ী অনুমতিপত্র শরণার্থীদের মাঝে দেয়া হয় । যদিও এই সকল রেলিফ প্রয়োজনের অতি সামান্যোই পূরণ করে । আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের
আবেদন করেছিলাম । যদিও মহাসচিবের আহবান ছিল অত্যন্ত অন্তরিক ভাবেই গৃহীত হয় , আমাদের প্রয়োজনের তুলনাই তা ছিল খুবই নগণ্য । এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের তক্তাবধানে ভারতকেই তার অপ্রতুল সম্পদ হতে ব্যয় করতে হচ্ছে ।
আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে একটি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছি এবং দেখাশুনা করছি । এই বোঝা বইবার ক্ষমতা বা সম্পদ কোনটিই আমাদের নেই ।
যখন তারা জীবন রক্ষার তাগিদে পালিয়ে আমাদের কাছে আসে তখন কেবল মাত্র মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা তাদের আশ্রয় দেই । শরণার্থীরা আমাদের কাছে আছে সাময়িক সময়ের জন্য এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে , আমরা আমাদের এই বক্তব্য বারবার বলেছি । যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গৃহীত এবং প্রশংসিত হয়েছে । এতে আমাদের কত ব্যয় হবে তার নিরেট হিসাব বের করাটা অসম্ভব হলেও বর্তমান হিসাবে ধারনা করা যায় পরবর্তী মার্চ মাসে তা ৮০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে ।
এই ব্যাপক জনস্রোত,যা কারো মতে ভারতে শরণার্থীদের অসামরিক আক্রমণ- এর পরিমাপ শুধুমাত্র টাকার অঙ্কে নিরূপণ করা যায় না । আমরা ব্যাপক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি । যে সকল স্থানে শরণার্থীরা বর্তমানে অবস্থান করছেন সেখানে তাদের আশ্রয়ের জন্য আমাদের সকল স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে ।
স্থানীয় মানুষের কথা না ভেবে শরণার্থীদের সেবায় সেসব জায়গার হাসপাতাল গুলো নিয়োজিত আছে । উচ্চ চাহিদার কারনে জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে । মজুরি কমে যাচ্ছে । নানান ধরনের অপরাধ বাড়ছে । স্থানীয় পর্যায়ের সংঘর্ষ ও উত্তেজনার কথা কারই অজানা নয় । আমাদের স্থানীয় প্রশাসনকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ব্যেহত করে শরণার্থীদের সমস্যার প্রতি মনোযোগ দিতে হচ্ছে । মহামারীর ছরিয়ে পড়ার ভয় সর্বত্ত । যদিও কলেরার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে ।
শরণার্থীরা অবিশ্যই দেশে ফিরবে । প্রশ্নটি হচ্ছে কিভাবে ? কেউ কি যৌক্তিক ভাবে তাদের ফিরে যাবার কথা বুজাতে পারবেন যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ একাই স্থান হতে পালিয়ে আসছে । মের ২১ তারিখ, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শরণার্থীদের ফিরে যেতে বলেন, যদিও তার পড়ে ৫০ লক্ষ মানুষ ভারতে প্রবেশ করেছে । তারা তখনই ফিরে যাবে যখন তারা নিজ বাসভূমে নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে বাস করার নিশ্চয়তা পাবে , যখন তারা নিজ ইচ্ছায় জীবিকা নির্বাহের অনুমতি পাবে এবং যখন তাদের নিজ নিজ মালিকানা ফিরে পাবার নিশ্চয়তা দেয়া হবে , তাদের চাকরি নথিভুক্ত হবে এবং প্রতহিক জীবনে হস্তক্ষেপ করা হবে না ।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত জনস্রোতের পটভূমি অনুধাবন করতে হলে পাকিস্তানে শুরু হতে পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যমান অবস্থার কথা স্মরণ করা প্রয়োজন । পাকিস্তানের দুই অংশের মাঝে ১০০০ মাইলের দূরত্ব , যার পুরোটাই ভারতীয় ভূখণ্ড , এই দিক দিয়ে পাকিস্তান অনন্য । লোকসংখ্যার সিংহভাগ ৭ কোটি ৫০ লক্ষ বাস করে পূর্বে এবং ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বাস করে পশ্চিমে । রাজনৈতিক , সামরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্র পশ্চিমে যদিও পাকিস্তানের প্রাথমিক কাঁচামাল পাঁট, চা এবং বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান সহায় পূর্ব । এমনকি সরকার এ কথা স্বীকার করে যে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান দ্বারা পূর্ব পাকিস্তান নিগৃহীত হচ্ছে ।
উদাহরন হিসেবে উল্লেখ করা যায় , সমস্ত পাকিস্তানের বেসামরিক এবং সামরিক প্রশাসনে বাঙ্গালিদের অংশীদারত্ব কখনই ১০ ভাগের উপর যায় নি । পূর্ব পাকিস্তানের জনগন এই বৈষম্মের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং কোন প্রকার কার্যকারী পদক্ষেপের অভাবে দিন দিন তাদের ভিতর বিক্ষোভ
দানা বেধে উঠে ।
যাই হোক, ১৯৬৯ এ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতনের পর একটি নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । জেনেরাল-প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া দায়িত্ব নেন এবং প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন যেখানে প্রাপ্ত বয়স্করা ভোট দিবে এবং প্রতিনিধিত্ব জনসংখ্যার অনুপাতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে । প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের জনগন একটি গণতান্ত্রিক বেবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর এতদিনের অনাচারের সম্ভাব্য প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করে ।
নির্বাচনটি দুবার পেছানোর পর ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনের ফলাফলকে পাকিস্তানে বরণ করা হয় গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে এবং বাস্তবিক ভাবেই এটা ছিল বিজয় ।
প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের ফলের কোন গুরুত্বই ছিল না । ৩১৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৯ টি আসন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল যার মধ্যে শেখ মুজিবর রহামানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ১৬৭ টি আসনে । পূর্ব পাকিস্তানে ৯৮ ভাগ আসনে জয় নিয়ে শেখ মুজিব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং স্বাভাবিক নিয়মে সরকার প্রধান হিসাবে তারই সরকার ঘটনের কথা । এই নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগ স্বায়ত্তশাসন এবং বৈষম্ম ও অনাচার হতে মুক্তির লক্ষে ছয় দফা দাবির উত্থাপন করে।
আপাতদৃষ্টিতে পাকিস্তানি শাসকদের কাছে নির্বাচনের ফলাফল ছিল অর্থনৈতিক , সামরিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানীদের আধিপত্তের সূচনার আশঙ্কায় পূর্ণ ।
মার্চের ২৫ এবং ২৬ তারিখের সামরিক আভিযান ৭ কোটি মানুষের রায়কে পাশকাটিয়ে শাসক শ্রেণির সামরিক শাসনকে জারি রাখার যে অভিপ্রায় , তারি প্রকাশ ।
আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করে পাকজান্তা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয় এবং সামরিক বাহিনীকে ত্রাস সৃষ্টির সবুজ সংকেত দেয় ।
বেসামরিক জনসাধারণের উপর পাক বাহিনীর ব্যাপক হামলার বিবরণ বর্তমানে সকলেরই জানা । সেই হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করে আমি এসেম্বলির সময় ব্যয় করতে ছি না । ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে । আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব বর্তমানে কারাগারে বন্দি । তাকে গোপনে সামরিক আদালতে এমন এক অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । বাক স্বাধীনতা এবং জনসাধারণের অধিকারকে দমন করা হয়েছে , বিদেশী সাংবাদিকদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে । আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সংস্থাকে আক্রন্ত স্থানে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি , এই রকম আরো অনেক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে যাতে করে পৃথিবীর এই প্রান্তে কি হচ্ছে সে খবর মানুষ জানতে না পারে , যদিও সে চেষ্টা সব সময় সফল হয় নি । হত্যা , ধর্ষণ , আগুন-লাগানো, লুট সর্বত বিরাজমান । এর অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হচ্ছে , মানুষ তাদের সারা জীবনের সম্পদ ফেলে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে । এপ্রিল এর শেষে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ যা মে মাসের শেষে এসে হয়েছে ৪০ লক্ষ এবং জুন শেষ হবার আগেই তা ৬০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায় যা এখনও বাড়ছে । বর্তমানে এই সংখ্যা ৯০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এবং জনস্রোত এখনও বন্ধ হয় নি । যে কোন আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই ধরনের শরণার্থী জনস্রোতের কথা কেউ আগে শুনে নি ।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক আগ্রাসন , ত্রাসের শাসন কায়েম , সকল মানবিক অধিকারকে চূর্ণ করা , যা এখনও চলমান, মানব জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে । এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের অংশগ্রহণে প্রতিরোধ চলমান । সেনাবাহিনী , পুলিশ এবং বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ ত্যাগ কারী হাজারো লোক এই প্রতিরোধের তীব্রতা যোগাচ্ছে । তাদের সাথে যোগদান করছে বিভিন্ন বয়সী লোকজন এবং এই সংখ্যা বাড়ছে ।
পাকিস্তানী কর্ত্রীপক্ষ তাদের পূর্বের অঙ্গীকার বদ্ধ সকল অঙ্গীকার ও রীতিনীতি ভঙ্গ করেছে । পাকিস্তান মরিয়া ভাবে চেষ্টা করেছে তার সাঙ্ঘাতিক কাযকালাপ থেকে সবার দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে । পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ সনদের এতো গুলো ধারা ভঙ্গ করেছে যে একে অভ্যন্তরীণ ঘটনা হিসাবে আখ্যা দেওয়াটা হবে আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতির প্রতি উপসাহের সামিল । এটা স্পষ্টই একটি আন্তর্জাতিক ঘটনা যখন কেউ বুজতে পারে ভারতে পাকিস্তানী জনগণের বাঁধভাঙ্গা স্রোত যে অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তাতে ভারতকে সাহায্য করার জন্য অন্যান্য দেশও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে ।
নিজেদের সৃষ্ট এই নির্বোধ এবং প্রাণঘাতী কার্যকলাপের দায় পাকিস্তান চাপাচ্ছে অন্যের ওপর । পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কাজকর্ম রীতিমতো চোখে ধুলো দেবার সামিল । শরণার্থীদের অবস্থা দেখলেই আসল সত্যটি প্রকাশিত হয় । পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট অনেকবারই শরণার্থীদের দেশে ফিরতে বলেছেন যদিও ভারত অভিমুখে শরণার্থীদের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে । পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি রুপে একটি নাগরিক সরকার সেখানে তৈরি করা হয়েছে যাতে সত্যিকার অর্থে পূর্ব পাকিস্তানের কোন প্রথিনিধি নেই ।এটা নেতৃত্ব শুন্য এবং সামরিক বাহিনীর হুকুমে চলে । সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়া হয়েছে যদিও একই সময় মুজিবর রাহমান এবং অন্যান্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের তুলনা করা এবং বিচার করা হয় দেশদ্রোহী হিসাবে । আমরা দেখতে পাই , পাকিস্তানের সরকার গঠন করার কথা ছিল যে রাজনৈতিক দলের তাকে নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হতে । নির্বাচিত অর্ধেক জনপ্রতিনিধিদের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে অংশগ্রহণের অযোগ্য হিসাবে ঘোষিত হয়েছেন । আমাদের মতামত হচ্ছে , যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্বাচিত জনপ্রতিনিধের সম্মতি নিয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথ তৈরি করা হবে, ততদিনই ভারতের দিকে শরণার্থীদের জনস্রোত চলতে থাকবে। মহাসচিব উ থান্ট এবং অন্যান্য বিশিষ্ট কূটনৈতিক , রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা এ কথা একাধিকবার বলেছেন যে সমস্যাটি রাজনৈতিক এবং সমাধানার প্রথম পদক্ষেপটিও হতে হবে রাজনৈতিক । আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবকে অনিতিবিলম্বে মুক্তি দিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে পূর্ব পাকিস্তানীদের পক্ষে কথা বলার জন্য তিনিই সবচেয়ে যোগ্য। তিনি এবং একমাত্র তিনিই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আশা আখাঙ্কার ধারক এবং প্রতিনিধিত্ব করেন । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য ছাড়াই এ সকল কাজ পাকিস্তানী কর্ত্রীপক্ষই করতে পারে । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যা করতে পারে টা হচ্ছে ইসলামাবাদের সামরিক সরকারকে এ কথা বুঝানো যে সামরিক পথে সাফল্য আসবে না । সাফল্যের জন্য সামরিক সরকার এবং ইতিমধ্যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমঝোতা জরুরী । আমরা মনে করি সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত হতে দেয়া হবে অদূরদর্শীতা পূর্ণ । দ্বিপাক্ষীওভাবে সকল সরকারের উচিত হবে নিজেদের সর্বচ্চো চেষ্টা করা যাতে সামরিক সরকার অত্যাচার বন্ধ করে , নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা শুরু করে এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় । একমাত্র এই ভাবেই ভারত অভিমুখে শরণার্থীদের স্রোত বন্ধ হবে এবং যারা আগেই পালিয়ে এসেছেন তারা দেশে ফেরত যাবেন । আমাদের অক্ষমতার জন্য আমরা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে সাময়িক বাসস্থান দিয়েছি । খাদ্যাভাবে বস্ত্রহীন অসুস্থ বৃদ্ধ, নর নারী , অসহায় শিশুদের অনেকেই সাম্প্রতিক সামরিক বর্বরতার ছাপ শরীরে ধারণ করেন । আমার প্রস্তাবিত বেবস্থার মাধ্যমেই আসন্ন দূরবিক্ষকে মোকাবেলা করা যায় এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব । এই সমস্যার সমাধার না করে যদি মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় , তাহলে ভবিষ্যৎ হবে নৈরাশ্যপূর্ণ । আমরা অনেক সময় নিয়ে এসেম্বেলিতে বসে যত ইচ্ছা আলোচনা করতে পারি , কিন্তু তাতে এই আগ্রাসনের শিকার সন্ত্রস্ত মানুষগুলোর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে । তারা আমাদের কখনই ক্ষমা করবে না যদি না এই কঠিন সময়ে আমরা তাদের পাশে দাঁরাই ।