শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন
এস/১০৪১০, অতিরিক্ত ১, ডিসেম্বর ৪, ১৯৭১
সংযোজন
মহাসচিবের রিপোর্টের সমাপ্তির পর (৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১) (এস/১০৪১০) তিনি দুইটি বার্তা গ্রহণ করেন। একটি পাঠিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং অপরটি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।
২। ৩ ডিসেম্বর বিকেলে মৌখিকভাবে প্রাপ্ত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বার্তা ছিল নিম্নরূপঃ
“(ক) ২ ডিসেম্বর বিকেলে পাঠানকোট, শ্রীনগর ও অমৃতসরে পাকিস্তানী বিমান আক্রমণের পর ৩ ডিসেম্বর সকালে ফরিদকোট (পাঞ্জাব), জয়সালমীর (রাজস্থান) ও যোধপুর (রাজস্থান) এ আরো তিনটি বিমান হামলা চালানো হয়।”
“(খ) ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সংসদের এক বিশেষ অধিবেশন আহবান করা হয়েছে।”
“(গ) আজ মধ্যরাতে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন।”
“(ঘ) পাকিস্তানী সূত্র হতে বলা হচ্ছে, ভারত পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করেছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
৩। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট চিঠি পাঠান। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি ৪ ডিসেম্বর তা মহাসচিবের নিকট প্রেরণ করেন। চিঠিটি নিম্নরূপঃ
“(ক) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান যুদ্ধাবস্থা বিষয়ে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করহি। আজ, পশ্চিম পাকিস্তান সময় ১৫.৩০ থেকে ১৬.০০ এর মধ্যে ভারতীয় বাহিনী শিয়ালকোট, জেসার ব্রিজ ও লাহোরের মধ্যবর্তী এক স্থান, রাজস্থান ফ্রন্টের বিপরীতে অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানের রহিম ইয়ার খান এবং জম্মু ও কাশ্মিরের চাম্বে একসাথে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ভারতীয় স্থলবাহিনীকে ভারতীয় বিমানবাহিনী সহায়তা প্রদান করে। গত তিন-চারদিন ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে আক্রমণাত্মকভাবে রেকি করার পর এই আক্রমণ চালানো হয়।”
“(খ) পাকিস্তান বাহিনীও প্রয়োজনীয় পালটা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”
“(গ) আজ বিকেলে পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত দখলকৃত কাশ্মীর, পাঠানকোট ও অমৃতসরের শ্রীনগর ও অবন্তীপুরে পাকিস্তান বর্ডার সংলগ্ন বিমানঘাটিতে আক্রমণ চালায়।”
“(ঘ) ভারত দখলকৃত কাশ্মীরের পুঞ্চ ও উরি সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।”
“(ঙ) মহামান্য আপনি অবগত আছেন যে, ব্যাপক উসকানি সত্ত্বেও আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব নিরসনে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। বহু সপ্তাহ ধরেই পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন এবং বিভিন্ন পয়েন্টে অনধিকারপ্রবেশের ফলে বর্তমানে কৃত্রিম যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু আমরা এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে এবং উত্তেজনা নিরসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমার প্রচেষ্টা সম্পর্কে মহামান্য অবগত আছেন। সর্বশেষ আমি পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক প্রেরণের প্রস্তাব দিয়েছি। তারা সীমান্ত পর্যবেক্ষণ এবং আমাদের সীমানা লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রতিবেদন দিবেন।”
“(চ) বর্তমানে ভারতীয় আগ্রাসন এক বিধ্বংসী অবস্থার সৃষ্টি করেছে যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারণাতীত সমস্যার সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নতুবা এর ফলে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর ভয়ংকর আঘাত আসবে।”
“(ছ) মহামান্যকে উক্ত অবস্থা জানিয়ে আমি আন্তরিকভাবে আশা করছি যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ন্যায়বিচার ও শান্তির পক্ষে দাঁড়াবে এবং জাতিসংঘ সনদে সন্নিবেশিত পবিত্র মূলনীতি রক্ষাত্রে সচেষ্ট হবে। এই মূলনীতি ছোট-বড় সকল দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে নিরাপত্তা প্রদান করে এবং এক দেশ কর্তৃক অন্য দেশের উপর শক্তি প্রয়োগ নিষিদ্ধ করে।